বৈশাখ তুমি আসো বলেই
আবার নাচবে লাল শাড়ির পাড়
দেখবো আবার ছোট্ট মেয়েটি পড়েছে
সাদা আর লালের সমাহার......
সাঈদ চৌধুরী।
নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে বাংলায় নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে।তবে আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়।এই দিনে মেতে ওঠে সমস্ত বাঙালিরা।সবাই নতুন সাজে সজ্জিত হয়।সকলের গায়ে দেখা যায় হরেক রকমের পোশাক। লুঙ্গি, ফতুয়া, শাড়ি, জামা, পাঞ্জাবি ইত্যাদি। বৈশাখে সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাক হলো শাড়ি।
শাড়িতেই নারী। শাড়ির সাথে বৈশাখের যেন সই পাতানো সম্পর্ক।বাঙালি নারীর শাড়ির কথা বাদ দিলে তো চলেই না।যে মেয়েটি সারা বছর শাড়ি ছুয়ে দেখেনা সেই মেয়েটিও বৈশাখে শাড়ি পড়ে সাজে।বৈশাখ মানেই যেন শাড়ির আবেদন। সুতি তাত থেকে হালের মসলিন সবকিছুই ঠাই পেয়েছে বৈশাখের শাড়িতে। সুতি শাড়ি সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈশাখ উৎসবে। বৈশাখী শাড়িতে দেখা যায় তাত, প্রিন্ট, ব্লক, এমব্রয়ডারি, সিল্ক, হাফ সিল্ক, সুতি কোট,মসলিন নেট ফ্যাব্রিক্স ইত্যাদি।
বৈশাখী শাড়ি সম্পর্কিতঃ
পহেলা বৈশাখের দিন বৈশাখী শাড়ি না পড়ে আমরা আমাদের বাঙালি মহিলাদের কল্পনা ও করতে পারি না।বৈশাখী শাড়ি হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বাধিক ঐতিহ্যবাহী মেয়েদের পোশাক। বাঙালি মহিলারা বৈশাখী শাড়ি পড়ে ধ্রুপদী এবং ঐতিহ্যবাহী চেহারায় উপস্থিত হয়ে থাকে। শাড়ি বেশির ভাগ ধরনের বুননে তৈরি উপাদানের যা মেয়েলি কৃপা ও সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করে। সাধারণত আমরা একটি আধুনিক এবং ওয়েস্টার্ন ডিজাইনের পোশাক খুজি তবে এই ঐতিহ্যবাহী পোশাকটির আকাঙ্খাকে পূরণ করে শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি।
লাল সাদায় বৈশাখঃ
লাল শাড়ি আমাদের বাঙালি মহিলাদের সাথে ক্লাসিক চেহারার পাশাপাশি একটি শৈল্পিক উপায়ে প্রতিনিধিত্ব করে। বৈশাখী সাদা আর লাল শাড়িতে উপস্থিত হওয়ার সর্বোত্তম উপায়ের চেয়ে চমকপ্রদ আর কিছুই নেই। বৈশাখী শাড়ি অনন্য এবং বেশির ভাগই লাল এবং সাদা রঙের সংমিশ্রণ। বৈশাখ মানেই লাল সাদা রঙের খেলা। লাল পাড়ে সাদা শাড়ি সকলের পছন্দ। এটি ক্লাসিক শাড়ির নকশাযুক্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। এই সংমিশ্রণ শাড়ি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, স্বতন্ত্রতা, মুল্যবোধ এবং চিন্তার প্রাকৃতিক উপাদানগুলির একটি শৈল্পিক উপস্থাপন করে থাকে।
আমাদের দেশের অনেক মহিলা সর্বদা পহেলা বৈশাখে লাল এবং সাদা সমন্বয় রঙের শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। তবে বর্তমানে বৈশাখী শাড়িতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বিভিন্ন রঙের মিশ্রনে তৈরি হয় আরো আকর্ষণীয় শাড়ি। পরিবারের সকলের এক রকম পোশাকের জন্য পাওয়া যায় ফ্যামিলি পোশাক।
বৈশাখী শাড়িতে ব্লাউজ পিসঃ
ম্যাচিং করতে বাঙালিরা কম পারে না। শাড়ির সাথে ব্লাউজ তো বলা বাহুল্য। বাংলাদেশে নববর্ষের দিনের জন্য হ্যান্ড ব্লক এবং স্কিন প্রিন্ট কাজের সাথে সুতির শাড়িতে ব্লাউজ টুকরো অন্তর্ভুক্ত করে। ঐতিহ্যগতভাবে ফ্যাশনেবল মেয়েরা আন্দিত মেজাজ অনুভব করে এবং বৈশাখের জন্য সাজেন।এখন বৈশাখী শাড়ির সাথে বিভিন্ন ধরনের এবং ডিজাইনের ব্লাউজ পিস থাকে। কোনো গুলোতে আাবার উন্নতমানের বেল্ট লাগানো ও থাকে।
শাড়ির সাথে ব্লাউজ পিস থাকায় রমণীরা আরো আকর্ষণীয় ভাবে নিজেদের সজ্জিত করেন।
বৈশাখী শাড়ির বৈচিত্র্যতাঃ
বৈশাখ মানেই মনের মধ্যে সাজগোজের আনন্দ।মেয়েরা বৈশাখী শাড়ি পড়ে নিজেদের ফুটিয়ে তোলে নানা রঙে। একটি বৈশাখী শাড়ি সর্বদা ফ্যাশনেবল এবং মুগ্ধ প্রেমিদের জন্য একটি চুড়ান্ত পছন্দে স্থান পায়। যেখানে বৈশাখী শাড়িটি সকল বয়সের অনেক মহিলা পছন্দ করেন এবং পরিধান করেন এবং বৈশাখের সব ধরনের ইভেন্ট এবং অনুষ্ঠানের অংশ।
বিভিন্ন ডিজাইনের বৈশাখী শাড়ি রয়েছে যেমন,
.হ্যান্ড প্রিন্ট খাদি শাড়ি।
.কাঁথা সেলাই করা বৈশাখী শাড়ি।
.তসর সিল্ক শাড়ি।
.এমব্রয়ডারি আর্ট সিল্ক শাড়ি।
.লাল ও সাদা রঙের খাটি লিলেন শাড়ি।
.হাতে আকা তুলা হ্যান্ডলুম শাড়ি।
.ডিজাইনার বৈশাখী শাড়ি।
.ট্রেন্ডি এথনিক শাড়ি।
.সনাতন বৈশাখী শাড়ি।
.জাতিগত হ্যান্ডলুম শাড়ি।
.ডিজাইনার কটন শাড়ি লাল এবং সাদা রঙের।
.টাঙ্গাইল সুতি বৈশাখী শাড়ি।
পহেলা বৈশাখের জন্য মসলিন শাড়ি।
মহিলাদের জন্য এক্সক্লুসিভ বৈশাখী শাড়িঃ
বিভিন্ন ধরনের বৈশাখী শাড়ি পাওয়া যায়। নকশা, ফ্যাব্রিক,ড্রপস,এবং রঙের ভিত্তিতে শাড়ি একে অপরের থেকে আলাদা হয়।কটন, টাঙ্গাইল, কাতান, সুতি,সিল্ক, হাফ সিল্ক, ডিজাইনার জর্জেট,জামদানী, বুটিদার হাতে আকা,ওয়েক্ট,কোটা, জন সেট,শিফন,বৈশাখী শাড়ি ইত্যাদি প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৈশাখে বৈশাখী শাড়ি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
.কটন কোটা হ্যান্ডপ্রিন্টেড বৈশাখী শাড়ি।
.থ্রি শেড অ্যান্ড সিল্ক শাড়ি।
.অ্যান্ডি সিল্ক শাড়ি।
.এপ্লিকের সুতির শাড়ি।
.ব্রাশ পেইন্টেড খাটি সুতির শাড়ি।
.হাফ সিল্ক বৈশাখী শাড়ি।
.সিল্ক ও ব্লক -বুটিক বৈশাখী শাড়ি।
.ধানসিঁড়ি তাত সুতির শাড়ি।
.স্কিন বুটিক সুতির শাড়ি।
.হাফ সিল্ক ও চুমকির শাড়ি।
বৈশাখী শাড়ির বৈশিষ্ট্যঃ
আমাদের দেশে আমরা সমস্ত ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং বেশির ভাগ উৎসব সমস্ত জীবনযাত্রার সাথে পালন করি।অনুষ্ঠান গুলোর মধ্যে রঙিন বৈশাখকে ও বিশেষভাবে উদযাপিত করে থাকি।ঐতিহ্যগত ভাবে ফ্যাশনেবল মহিলারা পহেলা বৈশাখের জন্য আনন্দিত মেজাজে আলাদা একটি পরিকল্পনা করে থাকেন। তাই মহিলাদের এই উৎসব এর জন্য রঙিন শাড়িতে সজ্জার জন্য পছন্দ করা হয় নানা রকম শাড়ি।
১.ধানসিঁড়ি তাত সুতির শাড়িঃ
ধানসিঁড়ি তাত সুতির শাড়ি বৈশাখী অনুষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে প্রিয় শাড়ি। পহেলা বৈশাখে এই শাড়ির ড্রপিং স্টাইল পরিবর্তন করে বা তাত কটন শাড়িতে ব্লাউজ মিলিয়ে বা পরিবর্তন করে পড়া যায়।
২.স্ক্রিন প্রিন্টেড কটন শাড়িঃ স্ক্রিন প্রিন্টেড শাড়িটি ক্লাসিক চেহারা বজায় রাখতে এবং মূলত পরিধান এর জন্য আরামদায়ক।
৩.খাটি কটন হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়িঃ
এই খাটি সুতির হাতে আকা শাড়িটি মূলত পহেলা বৈশাখে উৎসবের জন্য তৈরি। এটি একটি ডিজাইন হালকা সাদা এবং মাল্টিকালারে একটি সুন্দর ডিজাইনের আঁচল সহ পাওয়া যায়।
৪.কটন ট্যান্ট শাড়িঃ
শাড়ি আধুনিকতার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী মহিলাদের ফ্যাশন আনুষঙ্গিক গুলির সর্বাধিক অংশ। এবং পহেলা বৈশাখ উৎসব উপলক্ষে কটন তাত শাড়ি সেরা পোশাক।
বৈশাখী শাড়িগুলি ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ডওয়ার্কের জন্য পরিচিত যা যত্নসহকারে বোনা হয় এবং কাপড়গুলি অত্যান্ত মার্জিত হয় যা পরিধানকারীদের সৌন্দর্যতা প্রকাশ করে। মাল্টকালার এবং লাল সাদা রঙের কম্বিনেশন শাড়িটি প্রকৃতপক্ষে সবাইকে লাবন্যময়ী করে তোলে।
তথ্যসুত্রঃ দেশ রুপান্তর, m.ajkerdeal.com,Wikipedia.
Writer information: Mst Afsana Akter Urme
Dr M A Wazed Miah Textile Engineering College