বর্তমান সময়টায় আমরা যতটা না পরিধান সচেতন, তারচেয়ে বেশি ফ্যাশন সবেতন।নিজেদের চিন্তা চেতনা জুড়ে কেবল শো আপের তীব্র লড়াই চলে। লড়াইয়ে কেবল নিজেকে জাহির করা পাশাপাশি নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কিভাবে করা যায় সেটাও লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে। এ শো আপের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে “ব্রাসিয়ার” কিংবা অন্তর্বাস অথবা ব্রা।
মেয়ে বড় হবার সাথে সাথেই মায়েদের তাকে নিয়ে নানারকম চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে যায়। দশ বা এগারো বছর বয়স থেকে যখন তাদের বয়ঃসন্ধিকালের আরম্ভ হয়, তখন থেকেই মেয়েদের প্রায় একটা নতুন রকম যাত্রা শুরু হয়ে যায়, যে যাত্রাটা তাদের এতদিনের বেড়ে ওঠা, চারপাশের জগত থেকে প্রায় অনেকটাই আলাদা হয়ে যায়। শরীর-মন তখন অন্যভাবে বেড়ে ওঠে। আর সেই নতুনভাবে বেড়ে ওঠার সূত্রেই তারা ‘মেয়ে’ হয়ে ওঠে। রাস্তায় বেরোলে বিশেষ অঙ্গের দিকে ছেলেরা তখন তাকায়। সব মিলিয়ে তখন নতুন একটা অস্বস্তি, ভয়ের জীবন। মায়েদেরও উচিত তাঁদের মেয়েদের জীবনের এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের দিকে বেশী করে নজর দেওয়া।
আর এই নজর দেবারই একটা অঙ্গ হয়ে ওঠে খেয়াল করে মেয়েকে ঠিক সময়ে ঠিক মাপের ব্রা কিনে দেওয়া।
দশ-এগারো বা বারো বছরের একটা বাচ্ছা মেয়ের পক্ষে তার কখন ব্রা লাগবে সেটা বলা সত্যিই খুব কঠিন। খানিকটা অস্বস্তি বা লজ্জারও বটে। অধিকাংশ মেয়েই তাই মাকে বলে উঠতে পারে না যে তার ব্রা লাগবে। অথচ সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবরা অনেকেই এসময় ব্রা পরতে শুরু করে দেয়। তাই মায়েদেরই বিশেষ করে খেয়াল করা উচিত যে মেয়ের আদৌ ব্রায়ের প্রয়োজন হয়েছে কিনা বা তার ব্রা পরার সঠিক সময় এসে গিয়েছে কিনা।
কত বছর বয়স থেকে মেয়েদের ব্রা পরা উচিত ?
মোটামুটি ভাবে মেয়েদের বয়ঃসন্ধি এগারো বা বারো বছর বয়স থেকেই শুরু হয়। তার খানিক আগে থেকেই তাদের শরীরের বৃদ্ধি হতে শুরু করে। স্তন সুগঠিত হতে শুরু করে। স্তন গঠিত হতে শুরু করেছে কিনা তা আপনি বুঝতে পারবেন যখন বক্ষদেশ আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করবে। স্তনবৃন্ত সুগঠিত হতে শুরু করবে। এই সময়ে বুকের ওই অংশে বেশ ব্যথা অনুভূত হয়। এইসময়ে মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় বেরোলে আচমকাই বেশী লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে যা তাদের নিজেদের কাছেও অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে।
স্তন সম্পর্কে মেয়েরা এইসময় থেকেই সচেতন হতে শুরু করে। এরকম অবস্থায় তাদের ব্রা কিনে দেওয়া উচিত। তবে সব মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি এক রকম হয় না। হয়ত দেখবেন কোনো কোনো মেয়েকে এগারো বছর বয়স থেকেই ব্রা পরতে হয়, তার শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধির কারণেই। আবার হয়ত দেখবেন কোনো কোনো মেয়ে প্রথম ব্রা পরতে শুরু করে প্রায় চোদ্দ বছর বয়সে এসে।
ছোটবেলা থেকেই এ ব্রা এর ব্যাপারে কৌতুহলের শেষ নেই। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বড়রাও এ ব্যাপারে বেশ অগ্রাসী। তবে এ অগ্রাসীতা যেন আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্যে রাখা দরকার। আর সেগুলো নিয়েই আজকে আমাদের লেখা।
পরতেই হবে এমন নয়ঃ
ব্রা পড়তেই হবে বিষয়টা এমন নয়। এটা একধরনের ট্যাবুতে পরিণত করে ফেলেছি আমরা।অনেকেই ব্রা পড়লে মনে হতে পারে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা। কিন্তু অনেকটা বাধ্যবাধকতার সহিতই পড়তে হয়। বিষয়টা হলো পড়বেন কি পড়বেন না সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। এ ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেভাবে আপনি নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন সেটা একান্তই আপনার নিজস্ব মর্জি।
সঠিক মাপের ব্রা কিনুনঃ
বেশিরভাগ মহিলাই তাঁদের নিজের সাইজের ব্রা কিনতে পারেন না। কাপ সাইজ কি কেন, তাই অনেকে জানেন না। ফলে অনেকেই মাপের থেকে ছোট কিনে ফেলেন। আর এতে ক্ষতি হয় স্তনের। যেখান থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা থেকে যায়
স্তনের আকৃতিও বদলায়
স্তনের আকৃতিতেও বদল আসে এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন না, বা হয়তো জানেন না। অনেক সময় একটি ছোট একটি বড় হয় বা কোনও রকম শারীরিক সমস্যায় আকার বদলে যায়। ফলে ৩৪ পরতাম বলে সবসময় ৩৪ পরব এমনটা নয়। কাপ সাইজ অনুযায়ী কখনও ৩৬-ও লাগতে পারে।
প্যাডেড ব্রা
আমাদের ধারণা ছিল প্যাডেড ব্রা শুধুমাত্র সুগঠনের জন্য পরা হয়। বা অনেকেই সুন্দর দেখাতে পরেন। এবং যেহেতু এই ধরণের ব্রা শরীরের সঙ্গে চেপে বসে থাকে তাই খুব ক্ষতিকর। কিন্তু সাম্প্রতিক রিসার্চ বলছে একেবারেই তা নয়। এই ব্রা শরীরের জন্য খুবই ভালো। এবং প্যাডেড ব্রা ব্যবহারে এড়ানো যায় ব্রেস্ট ক্যানসারও।
নার্সিং ব্রা
যাঁরা ব্রেস্ট ফিডিং করান এই ব্রা মূলত তাঁদের জন্যই। এছাড়াও যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন তাঁদের এই নার্সিং ব্রা ব্যবহার করা আবশ্যক।
শরীরচর্চার ক্ষেত্রে স্পোর্টস ব্রা আবশ্যক
যে কোনও শরীরচর্চার সময় আমাদের দেহের সব অঙ্গই কাজে লাগে। এছাড়াও লম্ফঝম্ফ তো থাকেই। এক্ষেত্রে ঠিকঠাক ব্রা না পরলে স্তনের ক্ষতি হয়। তাই শরীরচর্চায় স্পোর্টস ব্রা আবশ্যক
অনেকই ভাবেন, ছোটো কাপ আকারের ব্রা (bra) স্তনকে দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্ত রাখে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সারা দিন অন্তর্বাস পরে থাকা শারীরিক কাঠামো অটুট রাখার জন্য ভালো। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই দু’টি ধারণাই সম্পূর্ণ ভুল।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টা ব্রা পরে থাকার ফল বিপজ্জনক হতে পারে। এটা কী ভাবে আপনার স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে কখনও ভেবে দেখেছেন কি?
২৪ ঘণ্টা ব্রা পরে থাকার ফলে ত্বক সে অর্থে বাতাসের সংস্পর্শে আসে না। এর ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একাধিক সমস্যা হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই অফিস থেকে বা বাইরে থেকে এসে অন্তর্বাস সরিয়ে ফেলাই উচিত। এতে স্বস্তি আসবে। আবার সারা দিন অন্তর্বাস পরে থাকলে ত্বকের দাগের সৃষ্টিও হয়।
২৪ ঘণ্টা ব্রা পরলে যে ৬টি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে-
১. স্তনে ব্যথা
যে সমস্ত মহিলা সারা দিন ব্রা পরেন, তাঁরা প্রায়শই স্তনে ব্যথার অভিযোগ করেন। বিশেষত যে মহিলারা সঠিক আকারের ব্রা পরেন না।
২. রক্ত সঞ্চালন প্রভাবিত হয়
২৪ ঘণ্টা ব্রা পরে থাকলে রক্ত সঞ্চালনও প্রভাবিত হয়। অনেক সময় ব্রা খুবই টাইট হলে স্তনের কোষেও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
৩.পিঠে ব্যথা
যদি ঘন ঘন পিঠে ব্যথা হয়, তবে আপনার ব্রা এর কারণ হতে পারে। যদি আপনি ২৪ ঘণ্টা ব্রা পরে থাকেন, তা হলে আপনার পিছনের অংশে ব্যথা হতে পারে। বিশেষত যে মহিলারা ছোট আকারের এবং খুব টাইট ব্রা পরেন।
৪. ত্বকের জ্বালা
২৪ ঘণ্টা ব্রা পরলে ত্বকের জ্বালা হতে পারে। কখনও কখনও চুলকানি, জ্বলুনির মতো অস্বস্তিকর লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে।
৫. হাইপারপিগমেন্টেশন
২৪ ঘণ্টা ব্রা পরা মহিলার হাইপারপিগমেন্টেশন সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৬. ছত্রাক ছড়াতে পারে
ব্রা পরলে ত্বক সবসময়ই ময়শ্চারাইজ হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ছত্রাক ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
ব্রাসিয়ার নিয়ে আমাদের প্রচলিত কিছু ভুল ধারনাঃ
বক্ষবন্ধনী, ব্রেসিয়ার বা ব্রা বিষয়ে নারীদের মাঝে বহু ভুল ধারণা রয়েছে। এ ধারণাগুলোর কোনটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যা তা নিয়েই এ লেখা। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ফক্স নিউজ।
ধারণা : ব্রা পরে ঘুমালে তা আপনার স্তনের আকার ভালো রাখবে।
বাস্তবতা : কয়েক বছর আগে মার্কিন অভিনেত্রী হেলি বেরি এক ইন্টারভিউতে জানান, তিনি ১৬ বছর বয়স থেকেই ব্রা পরে ঘুমান। যদিও এটি তার স্তনের আকার ঠিক রাখতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। কারণ গবেষকরা বলছেন, ব্রা পরে ঘুমালেও তা যে স্তনের আকার ঠিক রাখবে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। স্তনের আকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান ও স্তন্যদান করা। এছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই স্তন ঢিলে হয়ে যাবে, যা অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়।
ধারণা : ব্রা পরার কারণে স্তন পাশ থেকে ঝুলে পড়ে।
বাস্তবতা : ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, নিয়মিত ব্রা পরলে তাতে স্তনের আকার পাশ থেকে ঝুলে পড়তে পারে। এতে দাবি করা হয় স্তনের আকার ধরে রাখার মাংসপেশিগুলো ব্রা ব্যবহারের কারণে কার্যকারিতা হারায় এবং এতে তা নরম হয়ে পড়ে। ফলে সহজেই ঝুলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও অন্য গবেষকরা বলছেন, এ ঘটনার বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ স্তনে রয়েছে ত্বক, ফ্যাট ও লিগামেন্ট। মাংসপেশি এতে নেই।
ধারণা : ব্রা পড়লে স্তন ক্যান্সার হয়।
বাস্তবতা : এ ধারণা তৈরি হয় ১৯৯৫ সালে এক দম্পতির দাবির কারণে। তারা দাবি করেন, টাইট ব্রা পড়ে থাকলে তা বিষাক্ত উপাদানকে আটকে রাখে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তবে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি জানিয়েছে, এ গবেষণায় বিষয়টি সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। এছাড়া ক্যান্সারের ঝুঁকি কতখানি বাড়ে, সে প্রশ্নেরও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই ব্রা পড়লে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
ধারণা : ব্রা বেশি ধোয়া উচিত নয়।
বাস্তবতা : অনেকেরই ধারণা বেশি করে ধুলে এটি সঠিক আকার থাকবে না। এতে ব্রা পড়ার কোনো উপকার পাওয়া যাবে না। বাস্তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার ধুলে মানসম্মত ব্রার আকার নষ্ট হওয়া উচিত নয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার জন্য প্রতিবার পরার পরেই ব্রা ধুয়ে নেওয়া উচিত।
ধারণা : ওয়াশিং মেশিনে ব্রা ধোয়া উচিত নয়।
বাস্তবতা : আপনার ওয়াশিং মেশিনে যদি অত্যন্ত কড়া করে ধোয়া হয় তাহলে ব্রার আকার নষ্ট হতে পারে। তাই ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করে ঠাণ্ডা পানিতে হাতে করে ধোয়া যেতে পারে। এতে ব্রা বহুদিন ভালো থাকবে। ধারণা : আপনার একটি ব্রা চিরদিন ব্যবহার করতে পারবেন। বাস্তবতা : কোনো ব্রা-ই চিরদিন ব্যবহার করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে সাধারণ একটি নিয়ম হলো এক বছর। আপনি যদি নিয়মিত ব্রা পরেন তাহলে তা এক বছরের বেশি পরা উচিত নয়। তবে তা যদি মাঝে মাঝে পরেন তাহলে তা সর্বোচ্চ তিন বছর ব্যবহার করতে পারবেন।
ধারণা : আপনার ব্রা-র সাইজ সব ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেই একরকম।
বাস্তবতা : অনেকেরই ধারণা ব্রা-র সাইজ সব ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যদিও বাস্তবতা হলো ভিক্টোরিয়া সিক্রেটস থেকে যে সাইজের ব্রা আপনার সঠিক সাইজের মনে হচ্ছে, তা অন্য ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে সঠিক নাও হতে পারে। কারণ বিভিন্ন ব্র্যান্ড বিভিন্ন আকারে ব্রা তৈরি করে। এক্ষেত্রে আপনার সঠিক মাপমতো ব্রা বেছে নিতে তাই পরে দেখার বিকল্প নেই।
ধারণা : নতুন ব্রা সর্বশেষ হুকে ফিট হওয়া উচিত। বাস্তবতা : অধিকাংশ ব্রা-তে তিনটি হুক থাকে। নতুন ব্রা কেনার জন্য তা কোন হুকটিতে ফিট হবে তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বহু নারীরই ধারণা নতুন ব্রা শেষ হুকে ফিট হবে। যদিও বাস্তবতা হলো ব্রা যদি মাঝের হুকটিতে ফিট হয় তাহলেই তা কেনা উচিত।
তথ্যসূত্রঃ esomoy,Kalerkontho অনলাইন আর্কাইভ