বিশ্ব আজ বিষন্ন ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে বিভীষিকাময় করোনার ভয়াল থাবার অমানবিক দৃশ্যর দিকে।যে কর্মমুখর প্রান্তরে এতটুকু রেশ ছিলো না বিশ্রামের, সে প্রান্তর কিনা আজ মৃত্যুমিছিলের হৃদয়বিদায়ক আহাজারি আসপাস করছে।যে বিজ্ঞানের বৈমানিক উড্ডয়নে বিশ্ব চলছিল ছন্দময় গতিতে, আজ সে বিজ্ঞান বিব্রত হয়ে খুঁজছে ছন্দপতনের শেষ বিন্দুটি মিলবে কোথায়। অদৃষ্টের কালো মেঘ ত্রিশুলে ভর করে হানা দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশের রপ্তানী আয়ে শীর্ষে থাকে পোশাক খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট রপ্তানি হয়েছে ৩৪.১৩বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলমান অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৩০৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। চাহিদার শীর্ষে থাকা খাতটি আজ করোনা প্রকোপে হয়ে উঠেছে অসহায়। লকডাউনের সূত্র ধরে বিশ্বব্যাপি সংক্রমণ এড়াতে বন্ধ রয়েছে নানা পোশাক কারখানাগুলো। দেশে রপ্তানীর সিংহভাগ আসা খাতটিতে বাতিল হয়েছে হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ।
পোশাক কারখানা মালিকদের সমিতি বিজিএমইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউরোপ এবং আমেরিকা নীর্ভর এ রপ্তানী খাতে, করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে বহু পশ্চিমা ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যেই ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্রয় আদেশ বাতিল করেছেন। এপ্রিলের শেষ দিকে বিজিএমইএ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় দেশের ২০ টি কারখানার ২ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার কথা। যার ফলে সমন্নিত ভাবে সর্বশেষ পর্যন্ত পরিসংখ্যান টি হয়, মোট ৬৯ কারখানার ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। সেই সাথে অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকেএমইএ জানায়, ১৫ কারখানার ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। পোশাক শিল্পে তীব্র সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিকরা।বিজিএমইএর তালিকাভূক্ত কারখানা গুলোর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। আর এ কারখানা গুলোতে কাজ করে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক।তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপে শ্রমিকদের সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার এরই মধ্যে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিষদের জন্য।
দেশের পোশাক শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর হলো তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীনতায় ভোগা পোশাক কর্মীদের আর্থিক সংকট বিবেচনায় আগামী আগামী জুলাই মাস থেকে পরর্বতী তিন থেকে ছয়মাস তাদের আর্থিক সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্যমতে দেশে প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি ইউরো বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সহায়তার দিতে চায় তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ সহয়তায় উপকৃত হওয়া শ্রমিকের সাংখ্যিক পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ১০ লাখ। এ সহায়তার আওতায় বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া পোশাক কর্মীদের জনপ্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের মাঝে অর্থের সুষ্ঠু বন্টন এবং অনুদান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে গত ৩১ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পে ধসের কারনে অনেক পোশাক কর্মী বেকার হয়ে পড়তে পারে। এমতাবস্থায় শ্রমিকদের যাতে করে মানবেতর জীবন যাপন করতে না হয়, এজন্য ইইউরোপীয় ইউনিয়নের এ উদ্যোগ সত্যি মরুর বুকে ফুল ফোটানোর মতো। সকল দুর্যোগ এড়িয়ে সচল হবে বিশ্ব অর্থনীতি, প্রাণ পাবে দেশের পোশাক শিল্প এই প্রত্যাশা সকলের।
মুনতাসির রহমান,
নিজস্ব প্রতিবেদক।