ইয়ার্ন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘুম হতে ওঠা থেকে শুরু করে আবার ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধাপে ইয়ার্নের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু আমরা কয়জন এর গঠনপ্রণালী, প্রকারভেদ, উৎপাদনপ্রণালী সম্পর্কে অবগত? চলুন ইয়ার্নের এই বিষয়গুলো নিয়ে জেনে আসা যাক-
টেক্সটাইল ইর্য়ান মূলত অবিরাম দৈর্ঘ্যের এমন এক পদার্থ যা ফাইবার /ফিলামেন্টের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। এরপর নিটিং, উইভিং, ফিনিশিং ইত্যাদি প্রক্রিয়া পেরিয়ে ফেব্রিক অথবা নানারকম টেক্সটাইল পণ্যে পরিণত হয়। তবে ইয়ার্ন প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উভয়ই হতে পারে। নানা রকম পরিস্থিতিতে মানুষ তার নিজ প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের গঠনগত পরিবর্তন এনে ইয়ার্নকে কৃত্রিম বা সিন্থেটিক ইয়ার্নে পরিণত করেছে। এমন কিছু কৃত্রিম ইয়ার্নের মধ্যে নাইলন, পলিস্টার, অ্যাক্রিলিক ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়াও বহুল ব্যবহৃত কিছু প্রাকৃতিক ইয়ার্ন এর মধ্যে কটন, সিল্ক, উল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চলতি কথায় থ্রেড ও ইয়ার্নকে একই মনে হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন: একাধিক ফাইবার স্পিনিং করে ইয়ার্ন তৈরি করা হয়, কিন্তু দুই বা ততোধিক ইয়ার্ন শক্ত করে পেঁচিয়ে থ্রেড তৈরি করা হয়। ইয়ার্ন থ্রেডের তুলনায় কম শক্তিশালী, অন্যদিকে থ্রেড ইয়ার্নের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। ইয়ার্নের ওজন থ্রেডের তুলনায় বেশি, অপরদিকে থ্রেড ওজনে ইয়ার্নের তুলনায় হালকা।
দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে ইয়ার্নকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
- Staple yarn
- Filament yarn
আবার ইয়ার্নের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
- Regular yarn
- Novelty yarn
- Technical yarn
অপরদিকে স্পিনিং সিস্টেম অনুসারে ইয়ার্ন তিন প্রকার-
1.Ring spun
2.Rotor spun
3.Air-jet spun
ইয়ার্নকে কিভাবে পেঁচানো হবে তার উপর ভিত্তি করেও একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন:
- S- twist
- Z- twist ফাইবারকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন মেশিন এর মধ্য দিয়ে পরিচালনা করে পরবর্তীতে
ইয়ার্নে পরিণত করা হয়। তারপরই এই ইয়ার্ন হয়ে উঠে টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।
নিম্নে কটন ফাইবার থেকে ইয়ার্ন তৈরির বিভিন্ন ধাপ গুলো বর্ণনা করা হলো-
Blow room:
এটি মূলত কতগুলো মেশিনের সমন্বয়ে গঠিত একটি আলাদা সেকশন, যেখানে ফাইবার bale ইনপুট দিয়ে তা lap/ chute mat রূপান্তরিত করে পরবর্তী ধাপে পাঠানো হয়।
প্রথমে ফাইবার বেলকে খুলে তা পরিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আকারে কিছুটা বড় ময়লা দূর করা হয়। এরপর ফাইবার কে ব্লেন্ড বা মিক্সিং করে আবারো পরিশোধন প্রক্রিয়া পাঠানো হয় যেখানে ছোট ছোট ময়লা দূর করে পরবর্তী ধাপে lap/chute mat এ রূপান্তরিত করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় ফাইবার কে 60- 65% পর্যন্ত পরিষ্কার করা সম্ভব।
Carding machine:
কার্ডিং কে স্পিনিংয়ের হার্ট বলা হয়। কয়টি ধাপে lap বা chute mat থেকে ফাইবার কে আলাদা করে, ফাইবার থেকে ময়লা দূর করে, ছোট ছোট ফাইবার চিহ্নিত করে যা স্পিনিংয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং তা দূর করে, ফাইবার ব্লেন্ড করে, ফাইবারের ওরিয়েন্টেশন করে কার্ডেড স্লাইভার তৈরি করে।
ভিন্ন রকমের carding মেশিন :
•ফিড মেটারিয়াল এর উপর ভিত্তি করে :
Conventional / Lap feed carding machine
Modern / Chute feed carding মেশিন
•প্রোডাকশন স্পিড এর উপর ভিত্তি করে:
Regular card
Hyper কার্ড
•সিলিন্ডারের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে:
Mono cylinder card
Tandem card
•সিলিন্ডারের চারপাশে ফাইবার পাথের উপর ভিত্তি করে:
Half circular card
Full circular card
Draw frame:
ড্র ফ্রেম হলো এমন একটি মেশিন যার মাধ্যমে স্লাইভারের ফাইবারগুলিকে মসৃণ ও সমতল করা হয়।এর মূল উদ্দেশ্য হলো ইয়ার্ন এর গুণগত মান উন্নত করা।এই মেশিনটি ধূলিকণা দূর করার একটি উপকরণ। ড্র ফ্রেম আগত ধূলিকণার ৮০% পর্যন্ত নিষ্কাশন করে।এই মেশিন এ কার্ড স্লাইভ ইনপুট দিয়ে ড্রন (Drawn) স্লাইভ আউটপুট হিসেবে পাওয়া যায়।
ড্র ফ্রেমের সাথে জড়িত কাজগুলি:
১. ড্রাফটিং: এটি স্লাইভের প্রতি ইউনিট ওজনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি মূলত ড্র ফ্রেমের রোলারগুলির পেরিফেরিয়াল গতির মাধ্যমে হয়।
২. ডাবলিং: এই প্রক্রিয়ায় মূলত দুই বা তার বেশি কার্ড স্লাইভারকে একক আকারে পরিণত করা হয়।
৩.ড্রইং :ড্রাফটিং এবং ডাবলিং প্রক্রিয়া দুটির একত্রিত রূপ হলো ড্রইং।
Simplex Frame:
ইয়ার্ন মেনুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় ড্র ফ্রেম এর পরবর্তী পর্যায় হলো সিমপ্লেক্স ফ্রেম। ড্র ফ্রেম থেকে আসা স্লাইভগুলো ঘন থাকে যার ফলে সেগুলো রিং ফ্রেম এর মধ্য দিয়ে ইয়ার্ন তৈরির জন্য প্রস্তুত থাকে না।এই কারনে ড্রন স্লাইভগুলোকে রিং ফ্রেমে যাওয়ার পূর্বে সিমপ্লেক্স ফ্রেমে এ প্রস্তুত করা হয়।এই প্রক্রিয়াটি মূলত স্লাইভের ওজন কমিয়ে সেগুলোকে একটি উপযুক্ত আকার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।সিমপ্লেক্স ফ্রেমে ড্রন স্লাইভ ইনপুট দিয়ে Fine roving আউটপুট হিসেবে পাওয়া যায়।
Ring Frame:
রিং ফ্রেমই মূলত ইর্য়ান তৈরির জন্য শেষ মেশিন।রিং ফ্রেম মেশিনে ইনপুট হিসেবে সিমপ্লেক্স ফ্রেম মেশিন হতে আগত roving দেওয়া হয় এবং আউটপুট হিসেবে কাঙ্খিত ইয়ার্ন পাওয়া যায়।এই মেশিন এর মধ্যে ৩ টি ধাপ ঘটে – ড্রাফটিং, টুইস্টিং,প্যাকেজ ফরমেশন।রিং ফ্রেম প্রক্রিয়াটি ফাইবারের দুর্বলতা উপশম করে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ টুইস্টিং এর মাধ্যমে ইয়ার্নে একসাথে ফাইবারগুলিকে আটকে রাখে।
উপরে বর্ণিত বিভিন্ন ধাপ শেষে ইয়ার্ন তার নিজ রূপ পায়। পরবর্তীতে সেগুলোকে বিভিন্ন কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করে সুন্দর গঠন ও আকর্ষনীয় রুপ প্রদান করা হয়। যা পরবর্তীতে আমাদের পোশাককে আরো দৃষ্টিনন্দন ও সুরক্ষা প্রদান করার সক্ষমতা দান করে। তবে নানারকম গঠনগত পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন ধরনের ইয়ার্ন তৈরীর প্রক্রিয়া ক্ষেত্রবিশেষ কিছুটা ভিন্নতর হয়ে থাকে। তবে তা যাই হোক, সবশেষে এই ইয়ার্নগুলোই হয়ে ওঠে টেক্সটাইল শিল্পের অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন পণ্য।
তথ্যসূত্র: Google, Wikipedia, YouTube, textiletuts .com,
textileadvisor .com,
textilelearner .net,
textileworldwide.blogspot .com, textiletuts .com, Google scholar.
Writer information:-
Name: Shanto Nandi
Year: 2nd
Semester: 2nd
Batch: 39th
Name: Shourov Kumar Karmoker
Year: 2nd
Semester: 1st
Batch: 40th
Name : Tanvir Hassan
Year : 1st
Semester: 2nd
Batch : 41th
Ahsanullah university of science and technology