✍ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৮ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনটির ‘ক’ তফসিলে বিসিককে অন্তর্ভুক্ত করে ১৯ জুলাই(রবিবার) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
✍ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন(বিসিক)এর মূল উদ্দেশ্য:-
◾শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের শিল্পায়নে অবদান রাখা।
◾কর্মসংস্থান সৃষ্টি
◾দারিদ্র্য দূরীকরণ।
◾শিল্পায়নের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়ন।
◾দেশের আত্ম-সামাজিক উন্নয়ন।
✍জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিসিক সূচনালগ্ন থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশে মুখ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের নিবন্ধন প্রদান, লবণ শিল্পের উন্নয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়ন, উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ প্রদান ও উৎপাদিত পণ্য বিপণনের জন্য দেশে-বিদেশে মেলার আয়োজন, উদ্ভাবিত নতুন নকশা ও নমুনা উদ্ভাবন, উদ্ভাবিত নকশা ও নমুনা বিতরণ, মধু শিল্পের উন্নয়নসহ সম্প্রসারণমূলক নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে বিসিক।
✍বিসিক বেসরকারী খাতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমানে মূলত দু’ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
(১)উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রমঃ
◾ শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন।
◾রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি সুবিধা সম্বলিত শিল্পনগরী/ শিল্প পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে উন্নত প্লট বরাদ্দদান।
◾নিজস্ব কর্মসূচির মাধ্যমে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় উদ্যোক্তাদেরকে ঋণ সহায়তা প্রদান।
◾প্রকল্প প্রোফাইল প্রণয়ন ও প্রকল্প মূল্যায়ন।
◾শিল্প ইউনিট স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, মানোন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান।
◾লাগসই প্রযুক্তি আহরণ ও স্থানান্তরকরণ।
◾পণ্যের নকশা, নমুনা উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও বিতরণ।
◾শিল্প সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা, জরিপ ইত্যাদি পরিচালনা এবং
◾শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় বিনিয়োগপূর্ব ও বিনিয়োগের পরামর্শ প্রদান।
(২)নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রমঃ
◾ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্ট্রেশন প্রদান।
◾কর, শুল্ক ইত্যাদি সুবিধার বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
◾শিল্পের কাঁচামাল ও মোড়ক সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে প্রাধিকার নির্ধারণে সুপারিশ প্রদান।
✍বিসিকের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাই যাতে সুযোগ সুবিধা পায়,যাতে ভোগান্তির কম হয় সে উদ্দেশ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন-২০১৮ -এ অন্তর্ভুক্তির ফলে অতি ক্ষুদ্র ,ক্ষুদ্র , কুটির ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা বিসিকের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোনই সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবার জন্য অনলাইনে আবেদন এবং এক জায়গা থেকেই এসব সেবা পাবেন। ফলে কোনও বিনিয়োগকারীকে প্রাথমিক অনুমোদন ও অন্যান্য সেবার জন্য আর সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোতে যেতে হবে না। বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা কত দিনের মধ্যে দিতে হবে, সেটিও বিধির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পর বিসিককে এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
✍এ প্রসঙ্গে বিসিকের চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইনে বিসিক অন্তর্ভুক্ত হবার ফলে বিনিয়োগে আগ্রহীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে বিসিক শিল্পনগরীসমূহে নতুন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে ও দেশে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন গতিশীল হবে।’
বিসিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সুবিধা নিশ্চিত করতে শিগগিরই একটি প্রকল্প গ্রহণ ও কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে। বিসিক সদরদপ্তরে এ জন্য একটি ফ্লোর ডেডিকেটেড করা হবে বলেও জানান তিনি।
✍শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে বিসিকের ৭৬টি শিল্পনগরী রয়েছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরত্বপূর্ণ এলাকায় ২০ হাজার একর জমিতে ৫০টি পরিবেশবান্ধব শিল্পপার্ক স্থাপনের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিসিক। ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইনে বিসিকের অন্তর্ভুক্তির ফলে এসব শিল্পনগরীতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথ সুগম হবে ও দেশে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন গতিশীল হবে।
Writer:
বাঁধন মজুমদার
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংজাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট(নিটার)