বর্তমানে সময়ে ফ্যাশন সম্পর্কে ধারণা রাখেন অথচ গুচি(GUCCI) এর নাম শুনেননি এমন মানুষ খুজে পাওয়া বিরল। বিশ্বের বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আধিপত্য করে নিয়েছে গুচি(GUCCI)। তবে যাত্রাটা সহজ ছিলো না। আজ কথা বলছি এই নামের পেছনের এক অধ্যায় নিয়ে।
গুচিও গুচি নামে এক ব্যক্তি যার হাত ধরে পথচলা শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানের। শুরুতে তিনি একটি হোটেলের লিফটম্যান ও পোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। এর কিছুদিন পর তিনি একটি ফ্যাশন কোম্পানির কাজে যোগ দেন। ওখানে কাজ করার সময় ফ্যাশন সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজে তার আগ্রহ জন্মায় এবং আগত বিভিন্ন অতিথিদের ফ্যাশন সেন্স দেখে তিনি মুগ্ধ হন। এরপর তিনি তার ফ্যাশন লেভেল আনার কথা ভাবলেন।
পরবর্তীতে ১৯২১ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে গুচি নামে তার নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড চালু করেন। এটি ইতালিয়ান ব্র্যান্ড হলেও প্রতিষ্ঠানটির বেশিরভাগ পণ্য লন্ডনের ফ্যাশন দ্বারা অনুপ্রানিত হয়েছিলো।
শুরুতে এটি চামড়ার পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এই ব্র্যান্ডটিতে পাওয়া যায় হাতব্যাগ, পোশাক, অনুষঙ্গ, জুতা ও ঘর সাজানোর বিভিন্ন আইটেম। গুচির প্রথম তৈরি আইটেমগুলির মধ্যে ছিল ঘোড়ার স্যাডলের সাথে বেঁধে রাখার বিশেষ ব্যাগ। তারা এগুলো ইতালির দ্রুতগামী ঘোড়সওয়ারদের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো।
গুচিও গুচি তার ছেলে আলডোর জেদের কারণে ১৯৩৮ সালে রোম শহরে দ্বিতীয় দোকান খোলেন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৫১ সালে গুচিও গুচি মিলান শহরে তাদের তৃতীয় দোকান খোলেন ।প্রতিষ্ঠার পরবর্তী কয়েক দশক এটি জেনেরিক ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত থাকলেও ১৯৫৩ সালে স্বীকৃতি লাভ করে।
একই বছর অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে গুচিও গুচি মারা যাওয়ার পর তার ব্যবসার হাল ধরেন তার পরিবার। ১৯৬১ সালে আমেরিকার ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডিকে একটি গুচির ব্যাগ বহন করতে দেখা যায়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ব্যাগটির নাম রাখে “দ্য জ্যাকি“। তখন ব্র্যান্ডটি অধিকতর জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এরপর একটা সময় আসে যখন গুচিও পরিবারের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কে করবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে এটি পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হন ডিজাইনার টম ফোর্ড। তিনি কোম্পানির নকশা বদলে দেন। তার আগমন গুচিকে নতুন ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয় ফ্যাশন জগতে।
৯০ এর দশকে গুচির ‘জিনিয়াস জিন্স’ নাম লেখায় গিনেস বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডে। ২ লাখ ৪৩ হাজার জিনিয়াস জিন্স বিক্রি করে সেসময় রেকর্ড গড়ে এই ব্র্যান্ড। সেসময়ে দামী জিন্সের তালিয়ায় উপরের দিকে ছিল এই জিনিয়াস জিন্স।
এটি শুরু থেকেই সমাজের উচ্চ শ্রেণীকে টার্গেট করে ধনীদের ব্র্যান্ড হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিক জনসংযোগ ও বিজ্ঞাপন আজ এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের সেরাদের তালিকায় উর্ধ্বে এনে দাড় করিয়েছে। বিশ্বের নামি-দামি তারকারা কাজ করছেন এই প্রতিষ্ঠানের সাথে। সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী এ বছরের জানুয়ারিতে এই প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৪ লাখ কোটি টাকার উপরে।
Writer Information:
Gourango Rajbongshi,
Dept. of Textile Fashion & Design,
Bangladesh University of Textiles (BUTEX)