আমরা সবাই প্লাস্টিকের বোতামের সাথে পরিচিত। আমাদের প্রায় সব ধরনের পোশাক যেমন শার্ট, ব্লাউজ, টার্উজার, স্যুট, টিশার্ট এ বোতাম ব্যবহার করা হয়। বোতাম মূলত আমাদের পোশাকশিল্পের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বোতাম তৈরির প্রক্রিয়াটি আমাদের জানা প্রয়োজন। বোতাম তৈরির মূল উপাদানগুলো হলো তরল পলিয়েস্টার, মোম, রঞ্জক পদার্থ (Dyes) এবং রাসায়নিক অনুঘটক।নিচে বোতাম তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরে হলোঃ
(১) ডাই এবং তরল পলিয়েস্টার মিশ্রণ তৈরি: প্রথমে তরল পলিয়েস্টার এর সাথে ডাই মেশানো হয় পছন্দসই রং পাবার জন্য। এরপর রাসায়নিক অনুঘটক মেশানো হয় পলিয়েস্টার কে শক্ত করার জন্য এবং মিশ্রণ কে উজ্জ্বল ও সহজে বিভিন্ন আকার প্রদানের জন্য ১% মোম যুক্ত করা হয়।
(২) মিশ্রণ টিকে সিলিন্ডারে প্রসেসিং করা: ডাই মেশানোর পর মিশ্রণটিকে একটি ধাতব সিলিন্ডারে প্রসেসিং করা হয় যার ধারণক্ষমতা থাকে ৩ গ্যালন অথবা ১১ লিটারের মত। সিলিন্ডারটি সাধারণত ২ ফুট দীর্ঘ এবং ৪ ফুট ব্যাসের হয়। সিলিন্ডারটির মধ্যে কিছু রোলার থাকে যেগুলো প্রতি মিনিটে ২৫০ বার আবর্তিত হয় / ঘুরতে থাকে। পলিয়েস্টার মিশ্রণটি ঘূর্ণায়মান রোলারগুলোর মধ্যে ঢেলে দেয়া হয়। পরে রোলারগুলো মিশ্রণটিকে ঘোরাতে ঘোরাতে শক্ত করে আস্তরণ এর মত তৈরি করে।
(৩) মিশ্রন থেকে প্লাস্টিকের শীট তৈরি করা: রাসায়নিক অনুঘটক এর জন্য এবং মিশ্রণটি সিলিন্ডারে ঘোরার ফলে মিশ্রণটি শক্ত হতে থাকে। শক্ত পলিয়েস্টার শীটটির উপর ও নিচে মোমের প্রলেপ লেগে থাকে এবং পলিয়েস্টার শীটটি মাঝখানে থাকে। এরপর আরো ২০ মিনিট ঘূর্ণনের পর পলিয়েস্টার শীটটি তরল থেকে কঠিন হতে থাকে, তখন এটিকে অনেকটা বাসি পনিরের মত দেখতে লাগে।
(৪) সিলিন্ডার হতে প্লাস্টিক শীট আলাদাকরণ: পলিয়েস্টার শীটটি যখন ঠিকমত শক্ত হয় তখন সিলিন্ডারের ঘূর্ণন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শীটগুলো লম্বালম্বি ভাবে কাটা হয়। তখনো পর্যন্ত শীটটি যদি যথাযথ শক্ত না হয় তখন এগুলোকে ব্ল্যাঙ্কিং মেশিনে স্থানান্তর করা হয়।
(৫) শীট হতে বোতাম আলাদাকরণ: ব্ল্যাঙ্কিং মেশিন পলিয়েস্টার শীটটিকে একটি কনভেয়ার (পরিবাহক) বেল্টের কাছে নিয়ে যায়। শীটটি যখন কনভেয়ার (পরিবাহক) বেল্টটি অতিক্রম করে তখন বেল্টের সাথে থাকা একধরনের বৃত্তাকার স্টিলের ছোট ছোট ছাঁচের মাধ্যমে শীট থেকে বৃত্তাকার বোতামগুলো আলাদা করে। তখন বোতামগুলো এক জায়গায় জমা হয় এবং অবশিষ্ট শীটগুলো আরেক জায়গায় জমা হয়। এই পুরো কাটিং প্রসেসটি সাধারণত ২-৪ মিনিট সময় নেয়,তবে সময় বোতাম এর সাইজ এর ওপর নির্ভর করে।
(৬) শীতলীকরণ: বোতামগুলো ছাঁচ দিয়ে কাটার পরেও এগুলো অনেক গরম হয়ে থাকে তাই এগুলোকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করতে হয়। প্রথমে গরম পানির একটি ট্যাঙ্কের মধ্যে বোতামগুলো রাখতে হয় যার তাপমাত্রা হবে ১১০° সেন্টিগ্রেড। পরবর্তীতে পানিগুলো আস্তে আস্তে ঠান্ডা করা হয়। এতে করে পলিয়েস্টার আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে যায়। এ পদ্ধতিটি সম্পন্ন করতে সাধারণত ১০-২৪ ঘন্টা সময় লাগে। এরপর বোতামগুলো শুকানোর জন্য হাইড্রো মেশিন ব্যবহার করা হয়।
(৭) বোতামে গর্ত তৈরি ও ডিজাইন: বোতাম তৈরির চূড়ান্ত পর্যায় হলো বোতামগুলো সরবরাহকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী ডিজাইন করা।এটি করার জন্য বিভিন্ন মেশিন ব্যবহার করা হয়। বোতামগুলো মেশিনের মধ্যে শক্তভাবে স্থাপন করা হয়, তারপর স্পিনিং ব্লেড বেরিয়ে আসে এবং বোতামগুলো সাইজমত কেটে দেয়। তারপর বোতামগুলো ড্রিল মেশিনের নিচে চলে যায় যা বোতামগুলোর মাঝে প্রয়োজনমত গর্ত তৈরি করে। এরপর বোতামগুলো একটি বাক্সের মধ্যে জমা হয়।
(৮) পলিশিং: বোতামগুলো কাটার পর বোতামগুলোকে চকচকে করার জন্য পালিশ করা হয়। পালিশ এর জন্য বোতামগুলো একটি ড্রামে রাখা হয় যাতে জল, ক্ষয়কারী (abrasive) উপাদান এবং ফোমিং এজেন্ট থাকে। ড্রামের মধ্যে বোতামগুলো প্রায় ২৪ ঘন্টা ঘোরানো হয়।বোতামগুলো চকচকে না হওয়া পর্যন্ত ড্রামটি ঘোরানো হয়।সবশেষে বোতামগুলো হাইড্রো মেশিন দিয়ে ধুয়ে শুকানো হয়। প্রতি ড্রামে প্রায় ৩০ কেজি পরিমাণ বোতাম পালিশ করা যায় একসাথে।
(৯) গুণগত মান পরীক্ষা ও প্যাকেজিং: পালিশ করার পর বোতামগুলো একটি পরিবাহকে বেল্টে রেখে যাচাই করা হয় এবং ত্রুটিযুক্ত বোতামগুলো ফেলে দেয় হয়। সবশেষে ভালো বোতামগুলো বাছাই করে প্যাকেজিং করা হয়।
Writer information:
Name: Adnan Mahmud Arko
Institute: Primeasia University
Batch: 201
Campus Core Team Member (TES)