এগ্রো-টেক্সটাইল এবং বাংলাদেশ

0
1808
এগ্রো-টেক্সটাইল এবং বাংলাদেশ

Technical Textile বর্তমানের সম্ভাবনাময় খাতের মধ্যে একটি।  এটি টেক্সটাইল শিল্পে দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসাবে পরিচিত। পাশাপাশি এর অনেক টাইপ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো : Agro Textiles.(এগ্রো-টেক্সটাইল)

এগ্রো-টেক্সটাইল নিয়ে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায় যে, কৃষিখাত এবং নার্সারিতে ব্যবহারযোগ্য Woven, Non-woven এবং Knitted ফ্রেবিকস যা একপ্রকার আবরণী সুরক্ষা ছায়া, পোকামাকড় থেকে সুরক্ষা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের বৃদ্ধির মৌসুমে এর বৃদ্ধি এবং ফলনে সাহায্য করে ।

কৃষি খাতে ব্যবহৃত ফাইবার গুলো হলঃ

এটি পণ্যের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করে। এগ্রো টেক্সটাইলের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ফাইবার এর চেয়ে ম্যানমেইড (Synthetic Fiber) ফাইবার গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এর প্রধান কারণ উচ্চ শক্তি, স্থায়িত্ব এবং কৃষি অ্যাপ্লিকেশনের অন্যান্য উপযুক্ত বৈশিষ্ট্য।

অন্যদিকে, ন্যাচারাল ফাইবার ভিত্তিক এগ্রো টেক্সটাইল কয়েক বছরের পর প্রাকৃতিক সারে পরিণত হয় যা এর একটি সুবিধাজনক অংশ। পাশাপাশি এগুলো পরিবেশবান্ধব বটে।
Manmade:

★ নাইলন

★ পলিয়েস্টার

★ পলিইথিলিন

★ পলিওলেফিন

★ পলিপ্রোপিলিন

Natural:

★ পাট

★ উল

★ কয়ের

★ সিসাল

★ ফ্লেক্স

★ হেম্প 

সিন্থেটিক কিংবা ম্যানমেড ফাইবারকে (যেমনঃপলিওফেলিন) অগ্রাধিকার দেয়ার কারন হলো এদের দাম এবং কর্মক্ষমতার অনুপাত সুবিধাজনক। হালকা ওজনের সাথে উচ্চ শক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় এটি বেশি প্রাধান্য পায়। তবে উচ্চ আর্দ্রতা ধরে রাখা, আর্দ্রতা শক্তি বজায় রাখা এবং জৈব ক্ষয় শোষণের জন্য ন্যাচারাল ফাইবার ব্যবহৃত হয়।

বৈশিষ্ট্য সমূহ :

🔹প্রসারণ ক্ষমতা (Tensile Strength):

প্রসারণ ক্ষমতা এগ্রো টেক্সটাইল ফাইবারের জন্য একটি deciding ফ্যাক্টর। দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং সেবা পাওয়ার জন্য এর ভাল ধরনের প্রসারণ ক্ষমতা থাকা জরুরি।

🔹সৌর বিকিরণ সহ্য ক্ষমতা : 

বীজ বপন বা রোপণের পর পরই চাষকৃত এলাকার উপর কৃষি বস্ত্র স্থাপন করা হয়। এই ধরনের প্রয়োগের জন্য কৃষি টেক্সটাইল কে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার সাথে সৌর বিকিরণ সহ্য করতে হয়।তাই এই ধরণের ফাইবারের সৌর বিকিরণ সহ্য ক্ষমতা থাকা বাধ্যতামূলক।

🔹অতি বেগুনি (UV) রশ্মি সহ্য ক্ষমতা :

UV রশ্মি সহ অন্যান্য অদৃশ্য রশ্মি ফাইবারের মলিকুলার চেইনের ড্যামেজ ঘটায়।কোন ম্যাটেরিয়ালস ই সব ধরনের রশ্মি সহ্য করতে পারে না।তবে পলিপ্রোপিলিন ও পলিয়েস্টারের এ জাতীয় ক্ষমতা কিছুটা বেশি হওয়ায় বাইরে ব্যবহৃত হয় এমন এগ্রো টেক্সটাইল প্রযুক্তিতে এগুলো ব্যবহার করা হয়।

গাছকে UV রশ্মির ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখতে নন ওভেন ফেব্রিক আকারে এদের ব্যবহার করা হয়।তবে এর ব্যাপ্তিযোগ্যতা ৮০-৯০% রাখা হয় যাতে ফটো সিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ ঘটতে পারে।

🔹জৈব অবক্ষয় (Bio degradability) :

জৈব ভাবে মিশে যাওয়া প্রয়োজন এমন জায়গায় উল,পাট,তুলা জাতীয় ফাইবার ব্যবহার করা হয়।এসব ন্যাচারাল ফাইবার গুলোতে বায়ো ডিগ্রেডেশনের সুবিধা পাওয়া গেলেও এগুলো সিন্থেটিকের মত দীর্ঘমেয়াদী নয়।

🔹ঘর্ষণ প্রতিরোধী : 

 কীটপতঙ্গ ও অনেক প্রাণীর থেকে বাঁচার জন্য এগ্রো ফাইবার গুলোর ঘর্ষণ প্রতিরোধী গুন থাকা বাধ্যতামূলক।

🔹সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য : 

এই ফাইবার গুলোর অবশ্যই বাতাস সহ অন্যান্য খারাপ পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা থাকতে হবে।অনেক সময় আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় যার কারনে ফাইবার গুলোর নমনীয়তা,স্থিতিস্থাপকতা,পর্যাপ্ত আর্দ্রতা প্রতিরোধী হওয়া প্রয়োজন।তার সাথে এগুলোকে ছত্রাক প্রতিরোধী হওয়া প্রয়োজন (মোট ভরের ২%) যাতে মাটি দূষণ না ঘটে।

🔹অণুজীবের প্রতিরোধী: 

জীবিত প্রাণীদের রক্ষা করতে অণুজীব প্রতিরোধী হতে হবে। অনুজীব প্রতিরোধী হলে রোগ-জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।  

🔹হালকা ওজন : 

ফাইবার গুলোকে ওজনে কম হতে হবে যাতে ফাইবার থেকে তৈরী ফেব্রিকের ওজন যে কোন গাছ সহজেই বহন করতে পারে। 

যেসব কাজে এগ্রো টেক্সটাইল এর ব্যবহার করা হয়: 

🔸গ্রাউন্ড কভার নেট :  গ্রাউন্ড কভার নেট ব্যবহারের ফলে উদ্ভিদের আর্দ্রতা বজায় থাকে, গোড়ায় আগাছা জন্মায় না এবং UV রশ্মি থেকে উদ্ভিদকে সুরক্ষা প্রদান করে যার ফলে কোনো প্রকার পেস্টিসাইড এর ব্যবহার ছাড়াই সুস্থ গ্রোথ হয়। 

🔸 সানস্ক্রিন নেট : Warp-knitted ফেব্রিকস ব্যবহার করে এই নেট প্রস্তুত করা হয়, মূলত গ্রিন হাউজের জন্য তৈরি করা হয় এটি। এই নেট ব্যবহারের ফলে বাতাস এর চলাচল বাড়ে।  

🔸বার্ডস প্রোটেকশন নেট: পাখিদের অত্যাচার এবং তাদের থেকে ফসল রক্ষার জন্য বিশেষ পদ্ধতির এক প্রকার নেট। Polyethylene Tape Yarns দিয়ে তৈরি এই নেটের স্থিতিশীলতা অনেক বেশি তাই পাখির পক্ষে যা ছেড়া অসম্ভব।

🔸উইন্ড শিল্ড/ উইন্ড প্রটেকশন নেট : ছোট ও নরম গাছকে ঝড়ো বাতাসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় এই ফ্রেবিসকের তৈরি নেট। 

🔸রুট বল নেট: অত্যাধিক তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠা গাছগুলোর পরিবহন সুবিধার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। 

🔸এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্ট প্যাকেজিং : প্রোডাক্ট প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে এগ্রো টেক্সটাইল এর ব্যবহার বাড়ানো উচিত। এতে করে নেট প্যাকেজিং করা ফলমূল কিংবা শাকসবজি পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাবে এবং সতেজ থাকবে।

🔸 ফিশিং নেট: Warp knitted knotless নেটের এর ব্যবহার হলে কম শক্তি ব্যয় করে মাছ ধরা সম্ভব।  মূলত, Nylon monofilament, multifilament or HDPE দিয়ে এই নেট তৈরি করা হয়। 

বাংলাদেশে এগ্রো-টেক্সটাইলের ব্যবহার : 

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের ৬০% মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে যুক্ত। তো এই থেকে ধারণা করা যায় যে, এগ্রো টেক্সটাইল কতটা মূল্যবান বাংলাদেশের জন্য। 

কিন্তু দুঃখের বিষয়,  বাংলাদেশে কৃষকরা কৃষি-বস্ত্রের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বিকল্প উপায় ব্যবহার করে এবং পোকামাকড় সুরক্ষার জন্য তারা স্থানীয় নেট জাল ব্যবহার করে যা আসলে এগ্রো টেক্সটাইল নয়। তারা পোকামাকড় বা অন্যদের রক্ষা করার জন্য স্থানীয়ভাবে তৈরি জাল ব্যবহার করে। বাংলাদেশের কৃষকরা আসলেই জানেন না মালচ ম্যাট আসলে কী! 

কখনও কখনও তারা পলিথিন শিট, পাটের ব্যাগ, শুকনো পাতা ইত্যাদির মতো অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে।আমাদের দেশে মশারি ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। কৃষকরা গৃহপালিত পশুর হাত থেকে তাদের ফসলের ক্ষেত রক্ষা করতে এটি ব্যবহার করছেন। ফসল বা গাছপালা বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পলিথিন শীট ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অনেকেই মাছ ধরার সাথে যুক্ত হচ্ছেন, যারা মূলত তারা উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করছেন। মাছ ধরা ও হ্যাচারিতে ডিম সংগ্রহের জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করছেন। মাছের হ্যাচারিতে ডিম সংগ্রহের জন্য পাতলা কাপড় ব্যবহার করা হয়।

গ্রীষ্মকালে পলিথিন শীট বিভিন্ন ধরনের অ-মৌসুমী সবজি যেমন টমেটো, বেগুন ইত্যাদি চাষে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খামার দুগ্ধ খামার। পশুর জন্য তারা পাটের বস্তা, মশারি, পশুর চাটাই ইত্যাদি ব্যবহার করে। পাটের বস্তা প্রধানত শীতের মৌসুমে গরু বা গৃহপালিত পশুদের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। 

বাংলাদেশের পানামা ইন্ডাস্ট্রিজ , মেঘনা ফ্যাব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ, রূপসা ফিশিং-এ তারা স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার জন্য জাল তৈরি করছে এবং তারা মাছ ধরার জাল রপ্তানিও করছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্যাকিং বা ব্যাগিং উপকরণ ব্যবহার করা হয়। কারণ, ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য বিপণন নীতির নতুন মানদণ্ড হল – প্যাকিং বা ব্যাগিং। আমাদের দেশে পুলি ব্যাগ, পাটের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগগুলি বেশিরভাগই প্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।

পরিবেশগত সমস্যার কারণে আজকাল নন ওভেন এবং পাটের ব্যাগ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে পান রপ্তানি করে। পানের ক্ষেতে আরও ছায়াযুক্ত জায়গা প্রয়োজন। বাংলাদেশে এই ছায়া দেওয়া হয় নারিকেল পাতা, শুকনো পাতা ইত্যাদি।

ব্যাং জিন লিমিটেড (Bang jin Ltd) আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান এগ্রো-টেক্সটাইল উৎপাদনকারী। কিন্তু এই এগ্রোটেক্সটাইল পণ্য বাংলাদেশে জনপ্রিয় নয়। এগুলোর বেশিরভাগই রপ্তানির উদ্দেশ্যে উৎপাদিত হয়।  কিন্তু বর্তমানে কিছু সংখ্যক কৃষক এগ্রো-টেক্সটাইল ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে, যা অত্যন্ত ভালো দিক। কারন বাংলাদেশেই রয়েছে ওয়ার্ল্ডক্লাস টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি। তাই এগ্রো-টেক্সটাইল হতে পারে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। 

Written by: 

Md. Nazmul Hasan Nazim 

Content Writer at TES, 

National Institute of Textile Engineering and Research (NITER) 

References : 

  1. Textile blog 
  2. Textile Today