জাপানে বিভিন্ন উংসব,সরকারি ছুটি,বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে বা শ্রাদ্ধে বিশেষ এক ধরনের পোশাক দেখা যায়, যাকে কিমোনো বলে ।
কিমোনো জাপানের ঐতিহ্যবাহী একটি পোশাক ।কিমোনো শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো “কাঁধে পড়ার বস্তু “।”কি” এর উৎপত্তি কিরু থেকে, একটি উভলিঙ্গ ক্রিয়া যা দ্বারা কাঁধে বা পুরো শরীরে পড়ার কাপড় বোঝায় এবং “মোনো” অর্থ বস্তু।
ধারণা করা হয়,য়ু অঞ্চলের চীনা পোশাক থেকে কিমোনো পোশাক তৈরি হয়।পূর্বে কোসোডে কিমোনোকে অন্তর্বাস বলে মনে করা হত।জাপানের হেইআন যুগের সময়কালে, কিমোনো ক্রমশ শৈলীযুক্ত হয়ে উঠেছিল,এর ওপরে মো নামক একটি অর্ধ পোশাক পড়া হত।মুরোমাচি যুগে, কোসোডে কিমোনো এর ওপরে পাজামা, বিভক্ত স্কার্ট ছাড়া পরিধান করা শুরু হয়।এডো যুগের সময়কালে, আস্তিনগুলো দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, বিশেষত অবিবাহিত নারীদের মধ্যে এবং ফ্যাশন ধারার যুক্ত হতে ওবি আকারে চওড়া ও বিভিন্ন শৈলীর হয়ে ওঠে ।তখন থেকে পুরুষ ও মহিলা উভয়দেরই কিমোনোর মৌলিক আকৃতি প্রায় অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে ।
বর্তমানে কিমোনো নারীদের কেই পরতে দেখা যায় বিশেষ অনুষ্ঠানে।অবিবাহিত মেয়েরা ঐতিহ্যগতভাবে বিশেষ অনুষ্ঠানে ফুরিসোদে কিমোনো পড়ে থাকে ।পুরুষেরা সাধারণত বিয়ে,চা অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর আনুষ্ঠানিক উপলক্ষ্যে পড়ে থাকে ।বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলারা সবসময় কিমোনো পড়তে দেখা যায়।জনসাধারণদের মাঝে গেইশা এবং সুমো কুস্তিগির দের কিমোনো পোশাকে দেখা যায় কারণ তাদের প্রকাশে জাপানি পোষাক পরতে হয়।
বিভিন্ন ধরণের কিমোনো রয়েছে ।যেমন -নারীদের কিমোনো য়্যুকাতা,ফুরিসোদে, হোওমোঙ্গি,ইরোমুজি,কোমোন,এডো কোমান,মোফুকু,তোমেসোদে,সুকেসাগে,উচিকাকে,শিরোমুকু,জুউনিহিতোএ,পুরুষদের কিমোনো ইত্যাদি ।
গোফুকু(সিল্ক জাতীয় কাপড়)দিয়ে কিমোনো বানানো হয়।নিয়মিত ব্যবহারের জন্য কটন বা শণের কাপড় ফুতোমানা দিয়ে কিমোনো তৈরি করা হয়।কটন বা শণের কাপড়কে ফুতোমানা (মোটা কাপড়)বলা হয় কারণ সিল্কের কাপড় থেকে মোটা ও ভারী হয়ে থাকে ।কিমোনো ঐতিহ্যগতভাবে এক খন্ড কাপড় দ্বারা তৈরি করা হয়,যা তানমোনা নামে পরিচিত ।এটির আকৃতি পুরুষ ও মহিলা ভেদে ভিন্ন হয়।পুরুষদের কিমোনো প্রায় গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং নারীদের কিমোনো দৈর্ঘ্যে অতিরিক্ত বেশি থাকে যা ওহাশোরি নামক ওবির নিচে বাঁধার জন্য ব্যবহার হয়।এটি পরিধান কারীর কিমোনোকে সমন্বয় করতে ব্যবহৃত হ্য়।ওবি হলো চাদরের মতো চওড়া কাপড় যা কোমরবন্ধনী হিসেবে ব্যবহার হয়।অনেক নারীই ওহাশরি ছাড়া কিমোনো পড়ে ।
কিমোনোর বিভিন্ন অংশ :
*দৌরা:নারীদের কিমোনোর উপরের আস্তরণ।
*এরি:কলার
*ফুকি:পাড় আবরক
*ফুরি:হাতার নিচের আস্তিন
*ওবি : অতিরিক্ত কাপড় গুঁজে রাখার জন্য কোমরবন্ধ।
*মায়েমিগোরো : আস্তিন বাদে সামনের প্রধান প্যানেল। পিছনের অন্য পাশ ঢাকার অংশবিশেষ, মায়েমিগোরো ডান এবং বাম দুই অংশে বিভক্ত।
*মিয়াৎসুকুচি : আস্তিনের নিচের খোলা অংশ
*ওকুমি :কিমোনোর আস্তিন বাদে সামনের অংশের বাম ও ডান প্রান্তের ভিতরের প্যানেল। কলার থেকে পোশাকের নিচ পর্যন্ত, কাপড়ের উপরের ও নিচের অংশ। সামনের অংশ সেলাইয়ের নাম।
*সোদে : আস্তিন।
*সোদেগুচি : আস্তিনের প্রারম্ভ।
*সোদেৎসুকে : কিমোনোর হাতা।
*সুসোমাওয়াশি : নিচের আস্তরণ।
*তামোতো : আস্তিন পকেট।
*তোমোএরি : কলার আবরক।
*উরাএরি :ভিতরের কলার।
*উশিরোমিগোরো : আস্তিন বাদে পিছনের অংশ আচ্ছাদনকারী পিছনের মূল প্যানেল। তারা মূলত মধ্য-পশ্চাতে সেলাই করা এবং বাম ও ডান, দুই খন্ডে বিভক্ত থাকে। কিন্তু উলের তৈরি কাপড়ের ক্ষেত্রে উশিরোমিগোরো এক খন্ডের হয়।
তথ্যসূত্র :Wikipedia
লেখক পরিচিতি
মোছা হাসনাত জাহান
বস্ত পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগ
ব্যাচ-৩৫
হোম ইকোনমিক্স কলেজ