আমরা জানি, টেক্সটাইল প্রসেসিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হচ্ছে ওয়েট প্রসেসিং যেখানে ওভেন ফ্রেবিককে ব্যবহার উপযোগী কাপড়ে পরিণত করা হয় । এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয় । আর এ কারণেই , টেক্সটাইল শিল্প পানি ব্যবহারের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে । প্রতিদিন প্রায় ২০০০০০- ৩০০০০০ গ্যালন পানি লাগে একটি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে । এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থসমূহের দরকার হয় । বিভিন্ন ধাপে এই রাসায়নিক পদার্থসমূহ ব্যবহারের পর যন্ত্রপাতি ধৌত করতে প্রচুর পানির দরকার হয় । এর ফলে এই রাসায়নিক পদার্থ সমন্বিত পানি বিষাক্ত এবং দূষিত পানিতে পরিণত হয়ে পরিবেশ দূষণ করে । তাছাড়াও প্রচুর পরিমান তাপশক্তি ও মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় ওয়েট প্রসেসিংয়ের বিভিন্ন ধাপ গুলোতে। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় এই প্রক্রিয়ায় ।
কিন্তু যদি এই ধাপগুলোতে বিভিন্ন এনাজাইম ব্যবহার করা হয়, তাহলে সহজেই শক্তির পরিমাণ কমিয়ে আনা যাবে । পাশাপাশি পানি ও রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও অনেকাংশে কমে যাবে । যার ফলে উৎপাদন খরচ এবং পরিবেশ দূষনের মাত্রাও কমবে ।
এনজাইম হচ্ছে অবিষাক্ত , পরিবেশবান্ধব এবং জৈবিক প্রভাবক যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা কমিয়ে দেয় । ফলে শক্তির প্রয়োজন কম হয় রাসায়নিক প্রক্রিয়াসমূহ তে । পাশাপাশি রাসায়নিক পদার্থসমূহের ব্যবহার কমিয়ে দেয় যা অর্থ সাশ্রয়ী । আর এ কারণেই এনজাইমের ব্যবহার টেক্সটাইল শিল্পের জন্য এক নতুন দ্বার হিসেবে উন্মেচিত হয়েছে ।
এনজাইম ব্যবহারের সুবিধাসমূহ হলোঃ
➡ ডিসাইজিং : ডিসাইজিংয়ে স্টার্চ দূর করতে অ্যামাইলেজ এনজাইম ব্যবহার করা যেতে পারে , অ্যামাইলেজ সহজেই স্টার্চকে ভেঙ্গে ফেলে ডাইস্যাকারাইডে পরিণত করে এবং স্টার্চ দূরীভূত করে । যার কারণে আর এসিড বা ক্ষার ব্যবহার করতে হয় না । ফলে ফাইবারে ক্ষতি কম হয় এবং পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলে না ।
➡ স্কাওয়ারিং : স্কাওয়ারিং প্রক্রিয়াটিতে প্রোটিয়েজ, পেকটিনেজ,সেলুলেজ ইত্যাদি এনজাইম সমূহ ব্যবহার করা যায় । এ এনজাইমগুলো ব্যবহার করলে ক্ষার এবং ডিটারজেন্টের দরকার হবে না । ফলে প্রক্রিয়াটি জৈবিক উপায়ে সম্পন্ন করা যাবে।যার কারণে শক্তি সাশ্রয় হবে এবং খরচ কমবে ।
➡ ব্লিচিং: ডেনিম ব্লিচিং করার জন্য Laccase নামক এনজাইম ব্যবহার করা হয় । যা ব্লিচিংয়ে ডেনিমের ক্ষয় রোধ করে এবং কাঙ্খিত উজ্জ্বলতার ডেনিম পেতে সহায়তা করে ।
➡ ওয়াশিং: ক্যাটালেজ এনজাইম ব্লিচিংয়ে অবশিষ্ট থেকে যাওয়া হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দূর করে এবং ডায়িং এর সমরুপতা ধরে রাখে ।
➡ ফিনিশিং :সেলুলেজ এনজাইম কটনের কাপড়সমূহ মসৃণ করতে ব্যবহার করা হয় । এছাড়া কাপড়ে লেগে থাকা অতিরিক্ত এবং আলগা সুতাসমূহ দূর করে । এটি একটি জৈবিক -মসৃণ প্রক্রিয়া যা কটনকে মসৃণতা দান করে এবং সুতার কোনো ক্ষতি করে না । একইভাবে এস্টারেজ,লাইপেজ এবং Cutinases এনজাইম সোডিয়াম হাইড্রোঅক্সাইডের (NaOH) পরিবর্তে ব্যবহার করা যায় পলিইথিলিন টেরেপথ্রালেট(Polyethylene Terephthalate) ফ্রেবিকের মসৃণতা এবং আর্দ্রতা শোষন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ।
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে । যার অনেকাংশ টেক্সটাইল শিল্পের বর্জ্যসমূহ থেকে হয়। টেক্সটাইল ডায়িং শিল্প পানি দূষণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে টেক্সটাইল শিল্পে এনজাইমসমূহের ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে, পানির ব্যবহার ও পানি দূষণ দুটোই কমবে পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমবে । এর ফলে পরিবেশের ওপর কোনো বিরুপ প্রভাব পড়বে না ।
লেখকঃ
মোহাম্মদ রাফি
ডিপার্টমেন্ট অব ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং
১ম ব্যাচ
ড. এম.এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,পীরগঞ্জ,রংপুর।
Awesome for environmental side .