‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”
-কাজী নজরুল ইসলাম।
কালে কালে নারীরা তাদের কাজ ও সাহায্যের মাধ্যমে প্রমান করেছে তাদের সক্ষমতা ও বলিষ্ঠতা।যেকোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পুরুষেরা যেমন এগিয়ে আসে বলিষ্ঠ হাতে তেমনি নারীরাও এগিয়ে আসে সমান বলবান বলিষ্ঠতা নিয়ে। কখনো সমানে সমানে বা কখনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। করোনার এই প্রতিকুল অবস্থায় তার ব্যাতিক্রম দেখা যায়নি কোন অংশেই। মহামারীর বর্তমান এই অপ্রতিরোধ্য অবস্থায় নিজেদের সর্ব্বোচ্চ বিলিয়ে দিচ্ছে সাহসিনীরা। কিন্তু এই অবস্থায় সাহসিকতার সাথে প্রয়োজন ডাক্তারদের সুরক্ষাও। আর সেদিক বিবেচনা করে ডাক্তারদের জন্যে সুরক্ষাকবচ হিসেবে তৈরি করা হয় personal protective equipment (PPE) ।কিন্তু পুর্বে তৈরিকৃত এই পিপিই শুধুমাত্র পুরুষদের ব্যবহারের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছিল যা পড়তে পরিধান করতে হতো টি-শার্ট বা শার্ট । যা অসুবিধায় ফেলত সংস্কৃতি ধরে রাখা মহিলাদের, যারা শাড়ি ছাড়া টি শার্ট ও প্যান্ট পড়ায় অনেক টা অস্বস্তিকর মনে করে থাকেন। তাই ভারতের সুরতের ভিত্তি fashion design development centre “Fashionova” প্রথমবারের মত উদ্ঘাটন করেছে personal protective equipment (PPE) এর কীট “কভিড নারী কবচ’ যা শাড়ি এর সাথেও পরা যাবে ।
“আমাদের করোনার যোদ্ধাদের কাছে বর্তমানে দেওয়া পিপিই কিটগুলির সাথে শাড়ি পরা যায় না যেখানে অনেক পেশাদার মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী শাড়ি পরা পছন্দ করেন। সম্প্রতি, কেরালা সরকার কোভিড কেয়ার কর্মীদের টি-শার্ট বা শার্ট পরা বাধ্যতামূলক করেছে এবং এটি মহিলা কর্মীদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফ্যাশনোভা সৌরভ মন্ডলের ফ্যাশন ডিজাইনাররা শাড়ি পরতে পারেন এমন পিপিই কিট বিকাশের সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে, ডিজাইন কেন্দ্রটি প্রতিদিন 5,000 পিপিই কিট উত্পাদন করছে।”- বলেন ফ্যাশনোভা পরিচালক অনুপম গোয়াল।
এই কিটটি দক্ষিণ ভারত টেক্সটাইল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (SITRA) দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে যা COVID-19 সুরক্ষার জন্য পিপিই কভারগ্রালগুলি পরীক্ষা করার জন্য ভারত সরকারের পরীক্ষাগার হিসাবে স্বীকৃত।এছাড়াও অনুপম গোয়াল ফ্যাশনোভা সম্পর্কে আরও বলেন,” ফ্যাশনোভা হল টেক্সটাইল সিটি সুরত এর নকশা বিকাশের প্রথম কেন্দ্র। এটি এর সহযোগীদের পুরোপুরি প্রচার করে এবং তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সহায়তা প্রদান করে এবং তাদের সৃজনশীলতা প্রদর্শনের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সাহায্য ও সরবরাহ করে। এই পরীক্ষামূলক সময়ে সহায়তা করার জন্য সমস্ত সম্ভাব্য প্রচেষ্টা করা এটি একটি উদীয়মান সূচনা।” ধারনা করা হচ্ছে উক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নারী চিকিৎসক ও নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা ও কাজে স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে বিশেষ ভুমিকা রাখবে।
উল্লেখযোগ্য যে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ চিকিৎসক, নার্সসহ আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। মৃত্যু হয়েছে ২৮ চিকিৎসকের। এছাড়া করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।শনিবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এখন পর্যন্ত ১ হাজার তিন জন চিকিৎসক, ৮৫৩ জন নার্স এবং ১ হাজার ৩০৮ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।”
দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল মারা যান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈনউদ্দীন আহমেদ। এরপর মে মাসে মোট ১২ জন চিকিৎসক মারা যান। এরপর চলতি জুন মাসে মারা যান ২০ জন চিকিৎসক। গতকাল মারা গেছেন বিআরবি হাসপাতালের ডাক্তার সাজ্জাদ হোসেন।এছাড়া মে মাসে ৪ জন এবং জুন মাসে একজন চিকিৎসক কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
অথচ মারাত্মক এই মহামারী মকাবেলায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের ২৫ শতাংশ এবং নার্সদের ৬০ শতাংশ এখনও পিপিই পাননি। আর যেসব স্বাস্থ্যকর্মী পিপিই পেয়েছেন তারাও সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে ‘সন্দিহান’।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ-এর এক যৌথ জরিপে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।শনিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ওই জরিপ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
পিপিই নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোভাব ও চিকিৎসা নিয়ে তাদের পরিস্থিতি তুলে ধরে গবেষক বুশরা জেরিন ইসলাম বলেন, “করোনা চিকিৎসায় অগ্রভাগে থাকা ৭৫ ভাগ চিকিৎসক এবং ৪০ শতাংশ নার্স পিপিই পেয়েছেন। কিন্তু রেইনকোটের মতো যে পিপিই দেওয়া হয়েছে, সেটা আদৌ কাজ করে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা।”
আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ হচ্ছে, এগুলো একবার ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের সেগুলো পুনরায় ব্যবহার করার কথা বলা হচ্ছে। এসব বিষয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বড় রকমের মানসিক চাপ তৈরি করছে।চিকিৎসকরা পিপিই পরিধান, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন নিজ উদ্যোগে জেনে নিলেও নার্সদের অধিকাংশ এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পাননি বলে গবেষণায় ধরা পড়েছে।যার ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক নার্স ও চিকিৎসা কর্মী।
তাই এমন সন্দিহান অবস্থায় সরকারকে ও গার্মেন্টস মালিকদের দ্রুত প্রয়োজনীয় কিট ও পিপিই সরবরাহ এর জন্য আহ্বান জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাবিদরা।
সোর্সঃ fibre2fashion,India dot com
লেখক পরচিতি:
সাব্বির আলম শুভ
বি এস সি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
ক্যাম্পাস কোর টীম মেম্বার, TES
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।