Tuesday, December 3, 2024
Magazine
More
    HomeRMGকরোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাকখাত:

    করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাকখাত:

    দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশ হয়েও বাংলাদেশ নামটি যে কারণে বিশ্বদরবারে সকলের দৃষ্টি কেড়েছে,তার মূল কারণ হল পোশাক শিল্প। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হল এইশিল্প। বহু শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের বেকারত্ব ঘুচিয়ে সচ্ছল জীবন-যাপন করতে সক্ষম হচ্ছে এ খাতের মাধ্যমে। কিন্তু হঠাৎ করেই অন্যসকল দেশের অর্থনীতির চাকা থেমে যাওয়ার সাথে সাথেআমাদের দেশের অর্থনীতির চাকাও থমকে গিয়েছে একটি অদৃশ্য শত্রুর কারনে যার নাম করোনা ভাইরাস বা COVID-19. বর্তমান সময়ে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য এক আতঙ্কের নাম এইকরোনা। বাংলাদেশে প্রথম এই রোগ শনাক্ত হয় ৮ই মার্চ, ২০২০ তারিখে এবং এখন পর্যন্ত দিন দিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১১ই মার্চ, ২০২০তারিখে করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী (Pandemic) হিসেবে ঘোষণা করেছে।

    কলকাতার সংবাদপত্র “সংবাদ প্রতিদিন” গত পহেলা মে তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশে মোট ৯৮১ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্তযার ভিতরে চিকিৎসক ৩৯২ জন, নার্স ১৯১ জন এবং টেকনোলজিস্ট-সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৩৯৮ জন। যা মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ১২ শতাংশ।

    ✒️ Personal Protective Equipment বা পিপিই:

    করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকরী উপকরণ হল পিপিই (PPE), যার পূর্ণরূপ হল ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম(Personal Protective Equipment)। যদিও পিপিই-এর সঙ্গে আমাদের পরিচয় এইকরোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই। যখন পুরো পৃথিবীতে লাশের মিছিল ও শোক ছড়িয়ে পড়ছিল,তখন থেকেই ডাক্তাররা রোগীদের কাছে এসে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এই উপকরণটির ব্যবহারজরূরী মনে করেন। অর্থাৎ যেখানে একব্যক্তি থেকে অন্যব্যক্তিতে রোগ সংক্রামণের সম্ভাবনা থাকে এবং তা যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে সেক্ষেত্রে পিপিই ব্যবহার আবশ্যক।

    ১৭ শতকে ইউরোপে প্লেগ রোগটি মহামারী আকারে দেখা দিলে ফরাসি চিকিৎসক চার্লস ডি লরমি পিপিই হিসেবে অদ্ভুত ধরনের পোশাক তৈরি করেন। যদিও তা তেমন কার্যকরী ছিল না কিন্তু সেখান থেকেই পিপিই ধারণার উদ্ভব হয়।

    পিপিইতে পর্যাপ্ত সুরক্ষার জন্য পাঁচটি উপকরণ থাকা উচিত। সেগুলো হল-১. জুতার কাভারসহ গাউন,২. গ্লাভস,৩. মুখের আবরণ(ফেস শিল্ড),৪.চোখ ঢাকার জন্য মুখের সাথে লেগে থাকা চশমা বা গগলস,৫.মাস্ক।
    পিপিই তৈরিতে এমন কাপড় ব্যবহার করা হয় যা কোনোভাবেই তরল শুষে নেয় না।এটি এমন পদার্থের হতে হবে যাতে কোনো ধরণের তরলকে ধারণ না করে।মোট কথা,পিপিই যেন সম্পূর্ণ শুষ্ক থাকে এবং এটি যেন কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অনুজীব থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্রদান করতে পারে এদিকে অবশ্যই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পিপিই এর মূলত কয়েকটি লেভেল রয়েছে। এর একেকটি লেভেলের সুরক্ষা প্রদান করার ক্ষমতা একেকরকম।

    ✒️ করোনা চলাকালীন সময়ে PPE উৎপাদনে বাংলাদেশ:

    বাংলাদেশে অল্প কিছু পোশাক কারখানাতে করোনা পূর্ববর্তী সময় থেকেই পিপিই প্রস্তুত করা হতো। কিন্তু সেসব পিপিই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলাকালীন এই মহামারি পরিস্থিতিতে পর্যাপ্তসুরক্ষা দিতে সক্ষম নয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, নিরাপত্তারক্ষাকারীসহ যারা সামনে থেকে সরাসরি কাজ করে যাচ্ছেন তাদের নিরাপত্তার জন্য লেভেল ৩ এবং ৪ মানের পিপিই প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে লেভেল ৩ এবং ৪ মানের পিপিই তেমন প্রস্তুত করা হয় না বললেই চলে। তাই এটি অবশ্যই বাংলাদেশ পোশাক খাতে এবং পোশাক কারখানা মালিকদের কাছে একটি নতুন বিষয়, সেই সাথে একটি সম্ভাবনাময় বিষয় হিসেবেওগ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।

    বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ হতে একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে আমাদের দেশের পোশাক উদ্যোক্তাগন সাধারনত পিপিই প্রস্তুত করেন না। পিপিই প্রস্তুত করতে যে ফেব্রিক ব্যবহার করা হয় তার মেডিকেল গ্রেড থাকে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান বজায় রেখে তা প্রস্তুত করতে হয়। এই ফেব্রিক বাংলাদেশে প্রস্তুত করা হয়না। চীন থেকে ফেব্রিক আমদানি করে তা দিয়ে পিপিই তৈরি করা হয়। এছাড়াও পিপিই পোশাক তৈরির জন্য গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে বিশেষ ধরনের মেশিনারিজ ব্যবহার করতে হয়। কারখানায় জীবানুমুক্ত পরিবেশে এটি প্রস্তুত করতে হয় যার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষনও প্রয়োজন। বিজিএমইএ থেকে জানানো হয় এইসবকিছু প্রস্তুত করে বাংলাদেশী ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে পিপিই তৈরি করার জন্য কমপক্ষে ৬ মাস অথবা এরও অধিক সময় প্রয়োজন।কিন্তু বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে করোনা পরিস্থিতির কারনে পিপিইর চাহিদা দিন দিন অনেক বেড়ে চলেছে। বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের পিপিই এর চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা মেটাতে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির দেশ হিসেবে ২৪ শে মার্চ অফিশিয়ালি বাংলাদেশকে লেভেল ১ এর পিপিই উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়। বিজিএমইএ এর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে লেভেল ১এর এই পিপিই প্রস্তুত হচ্ছে।এটি মূলত পানিরোধক ও প্রফেশনাল পিপিইর কাছাকাছি – এমনটাই জানিয়েছে বিজিএমইএ।

    কিন্তু সম্প্রতি প্রদত্ত নমুনার গুণাগুন বিবেচনা করে WHO এবং বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পে ইট ফর বাংলাদেশ এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এই দুটি সংস্থাকে যৌথভাবে লেভেল ২ এবং ৩ এর পিপিই প্রস্তুত করার অনুমতি প্রদান করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশেই তৈরি করা এই নমুনা যথাযথ মানসম্পন্ন বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। পে ইট ফর বাংলাদেশ এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাদের প্রস্তুতকৃত লেভেল ২ এবং ৩ এর পিপিই গাউনগুলো কয়েকবার সাবান দিয়ে ধুয়ে জীবানুমুক্ত করে পুণরায় ব্যবহার করা যাবে এবং এটি করোনা মোকাবিলায় অনেক বেশি সুরক্ষা প্রদান করবে।

    ✒️ করোনা পরিস্থিতিতে পিপিই উৎপাদনে ইন্ডাস্ট্রি এবং বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা:

    বাংলাদেশে এর পূর্বে কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি পিপিই তৈরি করলেও তা ছিল খুবই সাধারন মানের। সেসব পিপিই বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম নয়। কিন্তু WHO এবং বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গৃহিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রি উচ্চমানের সুরক্ষা প্রদানকারী লেভেল ১, ২ এবং ৩ এর পিপিই উৎপাদন করছে। তবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ছে বিশেষায়িত কাপড় এবং উপকরণ মেলানো। পিপিই প্রস্তুতের জন্য যে উচ্চমানের ফেব্রিক প্রয়োজন তা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। তাই চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে ফেব্রিক আমদানী করে তা দিয়ে পিপিই তৈরি করতে হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চীন সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে লকডাউন এবং অচলাবস্থা অব্যাহত থাকায়, সেই সাথে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকার কারনে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলো পিপিইউৎপাদনের পর্যাপ্ত কাচামাল এবং ফেব্রিকের যোগান পাচ্ছেন না। এর কারনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও পিপিই উৎপাদন অনেকটাই পিছিয়ে যাচ্ছে।

    এরই মধ্যে বিভিন্ন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা আরো উন্নতমানের পিপিই তৈরির চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এগিয়ে আসা উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন যে, লেভেল ৩ এবং ৪ মানের পিপিই তৈরির অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা চলছে। টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকআবদুল্লাহ হিল রাকিব জানিয়েছেন পিপিই লেভেল ৩ এবং ৪ এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যপার। বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব মেশিনারিজ আছে, সেসব দিয়ে সব লেভেলের পিপিই প্রস্তুত করা যাবে। কিন্তু কাচামাল ও টেস্টিং ইকুইপমেন্টের সংকটের কারনে তা বাইরের দেশ থেকে আমদানির চেষ্টা চলছে এবং সেগুলো চলে আসলে খুব দ্রুতই উচ্চমানের পিপিই প্রস্তুত করা সম্ভব।অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ WHO সার্টিফাইড পিপিই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশগুলোতে রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে দেশের রপ্তানিমুখী ১২ টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান এই লক্ষ্য ওউদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লোকালি পিপিই উৎপাদন করে যাচ্ছে। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর তত্ত্বাবধানে এই কারখানাগুলো কাজ করছে। যে ১২ টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-

    ১) আজমি ফ্যাশন
    ২) অ্যালায়েন্স অ্যাপারেলস
    ৩) জেএম ফেব্রিকস
    ৪) লাক্সমা ইনওয়্যার
    ৫) উর্মি গার্মেন্টস
    ৬) স্নোটেক্স আউটারওয়্যার
    ৭) টিআরজেড গার্মেন্টস
    ৮) ফোরএ ইয়ার্ন অ্যান্ড ডায়িং
    ৯) ডেকো ডিজাইন লিমিটেড
    ১০) ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড
    ১১) অ্যারিস্টোক্র‍্যাট গ্রুপ ও
    ১২) মোহাম্মদী শার্টেক্স লিমিটেড।

    তবে এর পাশাপাশি আরো অনেক পোশাক কারখানা ফেব্রিক এবং অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।

    প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ চারটি দেশ যথা আমেরিকা, কুয়েত, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে পিপিই রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই চারটি দেশ থেকে হাই কোয়ালিটি পিপিই এর চাহিদাপত্র পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই অনুযায়ী উপরোক্ত ১২ টি পোশাক কারখানা সহ আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। ঊর্মি গ্রুপ, স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেড সহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে পিপিই তৈরি করছে যা দেশের গার্মেন্টস শিল্পের সুনাম বয়ে নিয়ে আসছে।

    আমাদের দেশ পোশাক রপ্তানিতে গোটা বিশ্বে ২য় হলেও যেহেতু বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিক এবং শ্রমিকদের কাছে পিপিই বিষয়টি অনেকটাই নতুন, তাই সুরক্ষার জন্য যে পিপিই প্রয়োজন তা নিশ্চিতকরণে নিজেদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরছে। তবে এই সীমাবদ্ধতার ভিতরেই তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে । তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অভিভাবক সংস্থা BGMEA ২০,০০০ হাজারটি লেভেল ১ গ্রেডের PPE সারা বাংলাদেশে সরবরাহ করে । তবে তা দেশের সামগ্রিক চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল অনুযায়ী সারা দেশে প্রায় ১,০২,৯২৭ জন। নিবন্ধিত চিকিৎসক, ৫৬,৭৩৪ জন নার্স এর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যাক স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে যাদের সুরক্ষার জন্য বিপুল সংখ্যাক PPE প্রয়োজন। তবে দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে,

    ★মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
    ★BGMEA, British retail giant Marks & Spencer
    ★অরুনাচল ট্রাস্ট
    ★বুয়েট অ্যালুমনাই অ্যাসোসিয়েশন

    এসকল সংগঠন মিলিতভাবে PPE তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও উর্মি গ্রুপ, Snowtex, আমান গ্রুপ, Dekko Group, Smartex ইতিমধ্যে PPE তৈরী করা শুরু করেছে। Snowtex এর ব্যবস্হাপনা পরিচালক জনাব এস.এম খালিদ বলেছেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার পিস পিপিই উৎপাদন করবো যার ভিতরে ১৭ হাজার পিস বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।“ তিনি আরো বলেন, “আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি করা হবে।“ পাশাপাশি উর্মি গ্রুপের ব্যবস্হাপনা পরিচালক বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পিপিই হতে কোন লভ্যাংশ গ্রহণ করা হবে না কারণ বর্তমানে এটি অতি জরুরী প্রয়োজনীয় ৷ আমরা শুধু ফ্রেবিকের খরচটা রাখব যা আমাদের কাচামাল হিসেবে কিনতে হয়েছে।“ এছাড়াও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড এই মহামারীপ্রতিরোধে বিনা লভ্যাংশে করোনা প্রতিরোধমূলক ফেস মাস্ক এবং PPE তৈরীর প্রস্তাব দিয়েছে।

    পিছিয়ে নেই বাংলাদেশর অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো লিমিটেডগ্রুপের ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগ বেক্সিমকো ফার্মা পিপিই বিতরণ শুরু করেছে, যার মধ্যে দুটি পর্যায়ক্রমে অত্যন্ত উচ্চমানের আমদানিকৃত টিওয়াইক প্রোটেকটিভ কাভারসস (প্রতিরক্ষামূলকগাউন), ফেস মাস্ক, গ্লাভস, প্রতিরক্ষামূলক গগলস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি এই সরঞ্জামের প্রথম চালান হস্তান্তর করেন এবং হস্তান্তরকালে তিনি বলেন বেক্সিমকো চিকিৎসক, নার্স এবং রোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এবং যতটা সম্ভব হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।“

    এছাড়াও কিছুদিন আগে বাংলাদেশের আরেক বৃহৎ গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্হাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভির DGMS এর ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল মোঃ ফাসিউর রহমানের কাছে ১০০০ পিপিই এবং ৫০০০০ হাজার মাস্ক হস্তান্তর করেন। পাশাপাশি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে হাসপাতাল পর্যায়ে পিপিই সরবরাহ করছে। গত ২৫ মার্চ চট্টগ্রামে তারা ১০০০ পিস পিপিই বিনামূল্যে সরবরাহ করে।

    চট্টগ্রামের স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেড তৈরি করছে এক লাখ পিপিই। গত ৪ বছর ধরে এই পিপিই তৈরী করছে চট্টগ্রাম ইপিজেডের স্মার্ট জ্যাকেট নামের এই গার্মেন্টেস। আমেরিকা ও ইউরোপেরচিকিৎসকেরা এই পিপিই ব্যবহার করে করোনাভাইরাসসহ সংক্রমণ রোগের চিকিৎসা করছেন। আমেরিকার এক বায়ারের জন্য মাসে অন্তত ৩ লাখ পিপিই তৈরী করে এই গার্মেন্টসটি। সর্বশেষ ১লাখ পিপিই এর অর্ডার ছিলো তাদের। এ তথ্য জানাজানির পর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তাগিদে অর্ডার বাতিল করে দেশের জন্য পিপিই তৈরী শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিছুদিন আগে তৈরিকৃত ৫০ হাজার পিপিই এর প্রথম চালান ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং বাকি ৫০ হাজার পিপিই তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। যে কোন সময় সরকারকে দিবেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। এ পিপিইগুলো চিকিৎসক, নার্সরা ব্যবহার করবেন এবং গত ২৪ মার্চ এ কার্যাদেশপেয়েই কারখানার শ্রমিকরা কাজে নেমে পড়েন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই সরকার পিপিই তৈরির জন্য পছন্দ করেছেন। পিপিই তৈরির মধ্য দিয়েআমরাও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত।

    ✒️ পিপিই উৎপাদন ও সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞদের চিন্তাভাবনা:

    এই সংকট মুহূর্ত আমাদের দেশের গার্মেন্টস সেক্টর তাদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও যে যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসছে। BGMEA এর সভাপতি ড. রুবানা হক UNB কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, “আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য গোটা বিশ্বে খুব তাড়াতাড়ি পিপিই রপ্তানি করা। পোশাক রপ্তানিকারকরা ইতিমধ্যে সরকার নির্ধারিত মানের পিপিই তৈরীতে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে lLO, WHO, WFP, UNICEF এর সাথে মিলিতভাবে কাজ করার সমঝোতায় এসেছি তারা আমাদের কে সাপ্লাই চেইন এবং কারিগরি জ্ঞান দিয়ে সহায়তা করবে। বর্তমানে বিজিএমইএর অনেক সদস্য ফ্রেবিক দিয়ে সাহায্য করছেন। আমরা ফ্রেবিক কেনার তহবিল দেওয়ারও পরিকল্পনা করছি। তিনি আরো বলেন, “ফেব্রিক মিলগুলি যারা বিজিএমইএর সদস্য তারাও সংহতির লক্ষণ হিসাবে কম দামে ফেব্রিক বিক্রি করছে। আমরা অন্যান্য সরকারী ও আধা-সরকারী সংস্থার সাথে ডিজিএইচএসে পিপিই বিতরণ করব। আমাদের লক্ষ্যগুলি একই হওয়ায় আমরা অন্যান্য সংস্থা ও এনজিওদের সাথে মিলতভাবে কাজ করছি। তিনি আরো জানান, পিপিই স্যুট কেবলমাত্র চিকিৎসক এবং নার্সদেরই নয়, সমস্ত হাসপাতালের কর্মীদের জন্যও প্রয়োজনীয়।

    বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান পিপিই চাইছে। পিপিই স্যুট স্থানীয় পোশাক উৎপাদনকারীরা তৈরি করেন না। চিকিৎসা গ্রেড এবং WHO স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাব্রিক প্রধানত চীন থেকেও আমদানি করা হয়। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ডাক্তার, নার্সদের সুরক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে এখন পিপিই এর সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পুলিশ, সেনাবাহিনী, সমাজকর্মী সহ যারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্য পিপিই অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারকদেশ হিসেবে বাংলাদেশের সামনে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে পিপিই খাত।

    পিপিই তৈরিতে বাংলাদেশের তেমন অভিজ্ঞতা না থাকলেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে বেশ কিছু পোশাক কারখানা পিপিই তৈরি শুরু করেছে। বিশ্ববাজারে ৫০০ কোটি ডলারের পিপিইর চাহিদা থাকায় সেই চাহিদার যোগান দিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান যোগ হচ্ছে এই খাতে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কুয়েত পিপিই আমদানি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাসে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুরক্ষা নিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি ও বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পিপিই এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার বিশেষ যন্ত্র ভেন্টিলেটর নিতে চায়। এ সময় সেনাপ্রধানও এসব পণ্যে কুয়েতের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। যেটা আমাদের পোশাকখাতের জন্য অত্যন্ত আশার বানী। এই খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে বিশ্বমানের পিপিইর ব্যাপক চাহিদারয়েছে। বিশ্বমানের লেভেল ৪ বা চতুর্থ ধাপের পিপিই তৈরির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনা করছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে পিপিই রপ্তানি বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে সংগঠনটি। বাংলাদেশ যদি শুরুতে এই বাজার ধরতে পারে তাহলে পোশাকশিল্প খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

    বিজিএমইএ জানায়, পুরো বিশ্বের এই সংকটময় সময়ে সুরক্ষা সরঞ্জাম ও সামগ্রীর সংকট কাটাতে এরই মধ্যে পিপিই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিজিএমইএ। এই বিশেষ পোশাক তৈরিতে দেশের ১০-১২টি কারখানা যুক্ত হয়েছে। এই কারখানাগুলোর মধ্যে কেউ পিপিইর জন্য সরবরাহ করছে বিশেষ কাপড়, আবার কেউ বা বিনা মূল্যে সেলাই করে দিয়ে এ উদ্যোগে অংশীদার হচ্ছে। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, “বর্তমানে বিজিএমইএ সদস্যরা দেশের স্বাস্থ্য খাতে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বেশ কিছু পিপিই তৈরি করছে। মূলত আমরা প্রথম স্তরের পিপিই বানাচ্ছি। কিন্তু করোনার চিকিৎসাকাজে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজন তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের পিপিই। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বিশ্বমানের ওই ধরনের পিপিই তৈরি করা, যা বিদেশে রপ্তানি করা যায়।“ তিনি বলেন, “এরই মধ্যে আইএলও, ডাব্লিউএইচও, ডাব্লিএফপি, ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছে মানসম্মত পিপিই উৎপাদন ও আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা চেয়েছি।তাদের সহায়তায় আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এই খাতকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করতে পারব এবং চতুর্থ ধাপের পিপিই তৈরি করার মতো ক্ষমতাও জ্ঞান অর্জন করবে বলে আশা করছি।“ বিজিএমইএর পিপিই বিষয়ক সমন্বয়ক নাভিদুল হক বলেন, ‘শতভাগ মেডিকেডেট পিপিই তৈরি করতে বাংলাদেশের আরো কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, দক্ষ কর্মী, কাঁচামাল, স্বীকৃত মান সনদ দেয় এমন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সনদ নিতে হবে। বর্তমানঅভিজ্ঞতা কাজে লাগানো গেলে পোশাক খাতের ভবিষৎ সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে এই পিপিই।’

    ✒️ বাংলাদেশে উৎপাদিত পিপিই এর সঠিকতার বিষয়ে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত:

    চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে মানের পিপিই প্রস্তুত করা হচ্ছে এগুলোই লেভেল ৩ ও ৪ এর মতো নিরাপত্তা ঝুকি কমাতে সহায়ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা আক্রান্তদেরচিকিৎসায় লেভেল ৩ এবং ৪ মানের পিপিই দরকার হলেও এগুলোই সুরক্ষা দেবে ডাক্তার, নার্সসহ নিরাপত্তা ঝুকিতে থাকা সকলকে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিদউয়ানউর রহমান জানান যেতারা করোনার চিকিৎসা কার্যে লেভেল ১, ২ এর যেসব পিপিই পাচ্ছেন সেটাতেও ৯৫ ভাগ, ৯৭ ভাগ কমবেশি নিরাপত্তা সুরক্ষা আছে। বাংলাদেশে ব্যবহার করা পিপিই কতটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত জানান যে, সরকারিভাবে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত যেসব পিপিই দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস ঠেকাতে সক্ষম। গার্মেন্টস এর দেশ হিসেবে করোনা পরিস্থিতিতে সঠিক PPE তৈরিতে বাংলাদেশ কতটুকু সফল এমন প্রশ্নের সমাধান অনুসন্ধান করতে গিয়ে Team Tex-Terminators কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেয়েছে।

    ✒️ PPE উৎপাদনে বাংলাদেশের সফলতা:

    বাংলাদেশের অর্থনীতি এদেশের গার্মেন্টসে উৎপাদিত পোশাক রপ্তানির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। করোনা নামক মহামারী বাংলাদেশে আঘাত হানার ফলে বাংলাদেশের পোশাকখাতঅতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাতিল হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য পণ্যের অর্ডার। সেই সাথে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক পোশাক কারখানা। যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে করেছেমন্থর। এই মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি শুধু পোশাকখাতেই নয় বরং প্রায় সকল খাতেই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এতো ক্ষতির মাঝেও পোশাকখাতে সামান্য আশার আলো নিয়ে এসেছে এই পার্সোনালপ্রোটেক্টিভ ইকুয়েপমেন্ট বা PPE। অনুসন্ধানে এসেছে বিশ্ববাজারে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের সঠিক পিপিইর চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিপিই উৎপাদনে বেশ আগ্রহী ভূমিকা পালনকরছে। গত ২৪ মার্চ বিজিএমই এর তত্ত্বাবধানে থাকা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি লেভেল ১ এর পিপিই উৎপাদনের অনুমতি পায় বাংলাদেশ। এছাড়াও আরও বেশকিছু ইন্ডাস্ট্রি লেভেল ১,২ ও ৩ এর পিপিইউৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন আমাদের তৈরীকৃত পিপিই গুলো ৯৫% থেকে ৯৭% পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে সক্ষম। সেই সাথে BGMEA জানিয়েছে সঠিক পদ্ধতি ও কর্মদক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী ছয় মাস থেকে একবছরের মাঝে বাংলাদেশ লেভেল ৩ এবং লেভেল ৪ এর পিপিই শতভাগ উৎপাদনে সক্ষম হবে। আর এরই প্রেক্ষিতেপ্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা, কুয়েত, শ্রীলংকা ও নেপালে এসকল পিপিই রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর সবচেয়ে আশা জাগানিয়া তথ্য হচ্ছে যুক্ত্ররাষ্ট্র এবং কুয়েত এ ব্যাপারে বেশ ভাল আগ্রহ দেখিয়েছে।

    এভাবে সঠিক মান নিয়ন্ত্রন করে যদি আমাদের দেশীয় PPE পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হয় তাহলে আমাদের সফলতা ধরা দিতে আর বেশি দেরী নেই। তাই বলা চলে করোনার এই ভয়াল থাবারমধ্যে থেকেও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় আমরা PPE উৎপাদনে আংশিক সফল। সম্পূর্নভাবে সফল হতে হলে আমাদেরকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে পিপিই ও সার্জিকাল মাস্কের উপর উৎপাদন, ব্যবসা ও সরবরাহসহ সব পর্যায়ে প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ৬ মে রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক আদেশ জারি করে এই সুবিধা দেয়। এনবিআর বলেছে, এর ফলে ওইসব সুরক্ষা সামগ্রী তৈরিতে খরচ কমবে এবং সহজলভ্য হবে। এ অব্যাহতি ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে এনবিআরের ঘোষনায় জানানো হয়। এটিও বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য একটি ভালো সংবাদ।

    ✒️ কেন আমরা সম্পূর্নভাবে সফল নই এবং এর জন্য ভবিষ্যতে আমাদের যেসকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:

    আমাদের দেশে আগে খুবই অল্প সংখ্যক পোশাক কারখানায় পিপিই উৎপাদিত হত যা পরিপূর্ণ সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম নয়। মানসম্মত পিপিই প্রস্তুতের জন্য উচ্চমানের ফেব্রিক এবংকাঁচামাল এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসকল কাঁচামাল বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না বলে চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে ফেব্রিক আমদানী করতে হয়। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চীন সহবিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও অচল অবস্থা বজায় রয়েছে। তাই সেসকল দেশে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকার কারনে আমাদের দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলো পিপিই উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্তকাচামাল এবং ফেব্রিকের যোগান পাচ্ছেন না। এর কারনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও পিপিই উৎপাদন অনেকটাই পিছিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সঠিক পিপিই উৎপাদনের জন্য দক্ষকারিগর এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশেরও অভাব রয়েছে। এসকল বাধাবিপত্তি থাকার কারনেই আমরা পিপিই উৎপাদনে পুরোপুরি সফলতা অর্জন করতে পারিনি। এসকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হলে আমাদের সর্বপ্রথম পণ্য উৎপাদনের জন্য গুণগত মান নিশ্চিতকরতে হবে। অত্যাধুনিক মেশিনারিজ এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দক্ষ শ্রমিক তৈরীর পাশাপাশি সাপ্লাই চেইন এবং কারিগরি সহায়তা প্রদানকরতে হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হচ্ছে দেশেই সঠিক পিপিই উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরী করতে হবে। এসকল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত অবলম্বনের মাধ্যমে আমরা সফলতা অর্জনে আরও একধাপ এগিয়ে যাব।

    ✒️ আমাদের মতামত:
    করোনা পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি দেশের মত আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকাও ভেঙে পড়েছে। তারওপরে আবার যেই পোশাকখাতের উপর বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভর করছে সেই পোশাকখাতের প্রায় অচল অবস্থা আমাদের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই অপূরণীয় ক্ষতির মাঝেও আমাদের পোশাকখাতের জন্য একটি সম্ভাবনা উকি দিচ্ছে যার মাধ্যমে পোশাকখাতকে আমরা আরো একটু উঁচু অবস্থানে নিয়ে যেতে পারি। আর সেটি হচ্ছে সঠিক পিপিই উৎপাদন এবং সেটি বিদেশে রপ্তানিকরণ। করোনাভাইরাস এর ভয়াল থাবায় পিপিই এখন প্রত্যেকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। করোনার রেশ কাটার পরও পৃথিবীর মানুষ ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিবেসাথে ভবিষ্যতেও যে এরকম মহামারী হানা দিবেনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অতএব পিপিইর প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এই সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে যদি বাংলাদেশ সঠিক পিপিইউৎপাদনের উপর জোর দেয় তাহলে তৈরী পোশাক রপ্তানির পাশাপাশি আমাদের প্রস্তুতকৃত পিপিই আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সঠিক পিপিই উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে আংশিকভাবে সফল হলেও ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ সফলতা উকি দিচ্ছে। এটিকে ধরে রেখে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই পোশাকখাতে আমরা আমাদের দেশেরঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সক্ষম হব এবং Made in Bangladesh ট্যাগের গর্বিত অংশীদার হতে পারব।

    ✒️ তথ্যসূত্র- বিজিএমইএ, প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সমকাল, ইনকিলাব, Wikipedia, WHO,IEDCR, Textile Lab.

    Writers information:

    1. Raktim Roy Rocky (JUST)
    2. Md. Parvej Hossain (AKMU)
    3. Md. Rashid (DWMTEC)
    4. Istiaque Hossain (DWMTEC)
    5. Md. Kawsar Hossain (KUET)

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed