Pic 1
প্রাকৃতিক উপায়ে সুতা ও কাপড় তৈরী বা টেক্সটাইল শিল্পে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান , প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গাছ,গাছের অংশ,,ফল বা ফলের খোসা ব্যবহার নতুন কিছু নয়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে কাপড়,সুতা,ব্যাগ সহ অন্যান্য অনেক উপাদান তৈরী করে আসছে ,টেক্সটাইল শিল্পে এসব উপাদানের মধ্যে কলার আঁশ ও অন্যতম। বহুমুখী ব্যবহার ও উপকারিতা রয়েছে কলা ও কলাগাছের বিভিন্ন অংশের।
কলাগাছের ভৌগলিক উৎস বাংলাদেশ,ভারত বা ভারতীয় উপমহাদেশের অঞ্চল গুলো না হলেও তা শতবছর ধরেই তা আমাদের দেশে চাষ হয়ে আসছে ও এদেশের ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে। ফল, শবজি,গবাদি পশুর খাদ্য, ভেলা, সার কিংবা প্রাকৃতিক পাত্র; বিভিন্ন রুপে বাংলা সংস্কৃতির একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে কলা। বর্তমানে দেশের টেক্সটাইল শিল্পেও ব্যবহার হচ্ছের কলার আঁশ, গবেষণায় মিলেছে আশার আলো। দেশের অনেক অঞ্চলেই তাই সরকারী বেসরকারী বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে হচ্ছে কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা , ফাইবার বা ব্যাগ তৈরীর প্রকল্প।
কলার আঁশ বা banana fiber এর বৈশিষ্ট্য ও কলাগাছ এর আঁশ থেকে সুতা তৈরীর কিছু যুক্তিঃ
· কলার আঁশ অত্যন্ত শক্ত ।
· ওজনে হালকা
· আদ্রতা ধরে রাখা ও ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা অনেক বেশি।।
· সেলুলোজ,হেমিসেলুলোজ ও লিগনিন দ্বারা গঠিত।
· Banana fiber এর fineness ও spinnability বাঁশ ও রেমি তন্তুর থেকে বেশি।
· নিম্ন ঘনত্ব।
· প্রসারণ শক্তি বা tensile strength অত্যন্ত বেশি।
· সুতা পাকানোর প্রচলিত প্রায় সবগুলো পদ্ধতিই কলার আঁশের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়, খরচ ও বেশি নয় সেজন্য।
· Bamboo fiber এর সাথে বেশ মিল রয়েছে এর।
· রাসায়নিক এর ব্যবহার করতে হয় না চাষ ও সুতা উৎপাদনের সময়।
· Biodegradable হওয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই।
· টেকসই ও মানসম্পন্ন।
উৎপাদন পদ্ধতিঃ
মুলত কান্ডের অংশ থেকে আঁশ বের করা হয়। এর জন্য চাষ, আঁশ নিস্কাশন,আঁশের প্রক্রিয়াজাত এর মত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়। কান্ড কেটে প্রথমে ন্দী বা পুকুরে ডুবিয়ে নরম করে নেওয়া হয় পরে এখান থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এর পর এই আঁশ গুলো প্রস্তত করে মেশিন বা হাতের সাহায্যে পাকানো হয়। এরপর শুকানোর ধাপ আসে।
ব্যবহার ও প্রয়োগক্ষেত্রঃ
দেশে কিছুটা নতুন হলেও যেহেতু প্রকৃতিগতভাবেই কলার আ কাপড় বা এই ধরনের টেক্সটাইল পণ্যের জন্য উপযোগী, অন্যান্য দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই কলার আঁশ এর ব্যবহার রয়েছে।। জাপানী রা তাদের মুদ্রা ইয়েন তৈরীতে এই আঁশ ব্যবহার করে, নেপালের অধিবাসী রাও Banana Fiber থেকে কম্বল তৈরী করে আসছে বহুদিন যাবত। দড়ি, ব্যাগ,টেবিল ক্লথ, পর্দা ও মাদুর ও তৈরী করা হয় এটি থেকে। ছাল বা ডাটার বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় এটি থেকে বিভিন্ন ধরণের কাপড় বা বস্তু তৈরী সম্ভব হয়।এ থেকে তৈরী কাপড় অত্যন্ত নরম ও আরামদায়ক হয়ে থাকে। শুধুই কাপড় নয়, বরং ভ্যাকুয়াম ব্যাগ,টিব্যাগ,ব্যাংকনোট,কাগজ,প্যাম্পারস, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও আজকাল তৈরী হচ্ছে কলার আঁশ থেকে।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে এর বর্তমান অবস্থাঃ
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারী ও বেসরকারী প্রকল্পের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কলার আঁশ সংগ্রহ, প্রস্ততকরণ ও বাজারজাত হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে একটি বেসরকারী সংস্থা ও বেশ কয়েক বছর আগে কলার আঁশ থেকে উন্নতমানের সুতা তৈরীর প্রকল্প শুরু করেছে। কলা গাছ আর আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরী করা হয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ,এটিও তত্ত্বাবধান করেছে মেনোনাইট নামের একটি সংস্থা। লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, মিঠাপুকুর, যশোর, টাংগাইল,খাগড়াছড়ি, ঠাকুরগাঁও সদরসহ দেশের সাত স্থানে কলাগাছ থেকে সুতা উৎপাদন এর প্রকল্প চলছে। মানিকগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেশিন ব্যবহার করে সুতা উৎপাদন করছেন কয়েকজন। যেতেতু দেশে ব্যপক পরিমাণ কলাগাছ প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে ও এর চাষাবাদ ও সহজ ও লাভজনক; কলার আঁশ প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে উন্নতমানের কাপড় ও অন্যান্য পোষাক সামগ্রী তৈরী করে টেক্সটাইল সেক্টরে উৎপাদন ও রপ্তানি আরো এক ধাপ বৃদ্ধি করা যেতে পারে ও এর মাধ্যমে কৃষিখাতের সাথে টেক্সটাইল খাতের মেলবন্ধন আরো জোড়ালো করা যেতে পারে।
লেখক
আবু জোনায়েত
সাউথইষ্ট ঊনিভার্সিটি