পাট থেকে, রেশম থেকে সুতা তৈরি আমরা কমবেশি সবাই দেখেছি। কিন্তু কলাগাছের বাকল থেকেও নাকি তৈরি হচ্ছে সুতা! বছরজুড়ে পাহাড়ে কলার ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। এখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর অনেকটা কলা চাষের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ের কলা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন সমতল জেলায়।
জানা যায়, কলাগাছের বিকল্প ব্যবহার না থাকায় কলার ছড়া কাটার পর কেটে ফেলা হতো কলাগাছও। কিন্তু বর্তমানে এ পাহাড়ে পরিত্যাক্ত কলার বাকল থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের সুতা।খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য এলাকায় সারা বছর কলার ব্যাপক ফলন হয়। জুম মৌসুম ছাড়া অনেক জুমিয়ার কলা বিক্রি করে সংসার চালায়। কলা বিক্রি করার পর গাছের বিকল্প ব্যবহার না থাকায় গাছটি কেটে ফেলা হয়। কিন্তু পরিত্যক্ত কলার বাকল থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে উন্নত মানের ফাইবার বা সুতা। খাগড়াছড়িতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ প্রকল্প শুরু করে। এতে অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত কলাগাছের বাকল থেকে উন্নত মানের সুতা উৎপাদনকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে উদ্যোক্তারা। কলা সংগ্রহের পর কৃষকরা গাছটি কেটে ফেলে। এটি পরিত্যক্ত হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু পরিত্যক্ত বাকল থেকে ফাইবার বা সুতা উৎপাদন করে সাফল্য পাওয়া গেছে। একটি কলাগাছের বাকল থেকে কমপক্ষে দু’শ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। তিনি জানান, প্রতিটি কলাগাছ ১৫ টাকা দরে কেনা হয়। তবে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় দূর থেকে কলাগাছ কিনতে গেলে খরচও বাড়ে। ৫টি গাছের বাকল থেকে অন্তত এক কেজি সুতা পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৩০ টাকা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কলাগাছের বাকল থেকে ফাইবার বা সুতা উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক। কলার বাকল থেকে ফাইবার অংশ সংরক্ষণের পর অবশিষ্ট অংশ বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করা যায়। কৃষকপর্যায়ে বার্মি কম্পোস্টের চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি কম্পোস্ট সার বিক্রি হয়ে ২০ টাকায়। খাগড়াছড়িতে জেলা সদরের গঞ্জপাড়ায় চলছে কলার বাকল থেকে সুতা উৎপাদন। জার্মান দাতা সংস্থা ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফের অর্থায়নে আনন্দ বিল্ডিং কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ অব স্মল হোল্ডারস ইন বাংলাদেশ প্রজেক্টের আওতায় কলাগাছের বাকল থেকে সুতা তৈরির প্রকল্প চলছে। ওয়েস্ট এগ্রোর কারিগরি সহায়তায় চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে আনন্দ এই কার্যক্রম শুরু করে।
শ্রমিকদের কাজের ভিত্তিতে কমিশন দেয়া হয়। প্রতি কেজি ফাইবার বা সুতা উৎপাদনে একজন শ্রমিক পায় ১৩ টাকা। অনেক সময় একাধিক শ্রমিক কাজ করলেও সমান মজুরি পাবে। দৈনিক একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ ৫০ কেজি পর্যন্ত সুতা উৎপাদন করতে পারে। এ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘কলার বাকল থেকে প্রাপ্ত সুতা বা ফাইবার জুট বা কটনের সঙ্গে মিশ্রণে পেপার, হ্যান্ডি ক্রাফট, হ্যান্ড ব্যাগসহ নানা পণ্য তৈরি করা যায়।
বর্ষন সাহা
আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি
ব্যাচঃ৩৯