টেক্সটাইল বা কাপড়হচ্ছে একটি নমনীয় উপাদান যা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম সুতা বা তন্তুর দিয়ে তৈরী হয়। পাঁকিয়ে সুতা তৈরীতে সাধারনত ব্যবহৃত হয় উল, তিসি, তুলা, বা অন্যান্য উপাদান।সেলাই, কাটা, বোনা, বাঁধা ইত্যাদির সাহায্যে কাপড় তৈরী হয়।
কাপড়ের ইতিহাস:
প্রজাতন্ত্র জর্জিয়ার গুহায় আবিষ্কৃত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৩৪,০০০ সালে তৈরী রঙ করা কাপড় – যা প্রাগৈতিহাসিক যুগে কাপড়ের মত বস্তুর উপস্থিতি প্রমাণ করে।
কাপড়ের ব্যবহার:
কাপড়ের বহুবিধ ব্যবহার আছে। তার মধ্যে সব থেকে সাধারণ ব্যবহার হচ্ছে পোশাক হিসেবে এবং পাত্র যেমন ব্যাগ ও ঝুড়ি হিসেবে। বাসাবাড়িতে কার্পেট, আসবাবের উপরে, দরজা জানালার পর্দা, তোয়ালে, টেবিলের ঢাকনা, বালিশ ও বিছানায়, কাঁথা সহ নানাবিধ শিল্পকর্মে কাপড় ব্যবহার করা হয়। কর্মক্ষেত্রে কাপড় ব্যবহৃত হয় শিল্প ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় যেমন পাতন। এছাড়াও কাপড়ে বিবিধ ব্যবহার রয়েছে যেমন পতাকা, পিঠে ঝোলানো ব্যাগ, তাবু, জাল, রুমাল, ন্যাঁকড়া, পরিবহন উপকরণ যেমন বেলুন, ঘুড়ি, পাল এবং প্যারাশুট। যৌগিক পদার্থ যেমন ফাইবার গ্লাস এবং শিল্প জিয়োটেক্সটাইলস শক্তিশালীকরণে বস্ত্র ব্যবহৃত হয়। অনেক ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প যেমন সেলাই, নকশী কাঁথা ইত্যাদি সূচিকর্মে কাপড়ের ব্যবহার হয়।
কাপড়ের উৎস ও ধরণ:
বিভিন্ন উপাদান থেকে বস্ত্র তৈরী করা যেতে পারে। চারটি প্রধান উৎস থেকে এই উপাদানগুলো পাওয়া যায়ঃ পশু (উল, সিল্ক), উদ্ভিদ (তুলা, শণ, পাট),খনিজ (অ্যাসবেসটস, গ্লাস ফাইবার), এবং সিন্থেটিক (নাইলন, পলিয়েস্টার, এক্রাইলিক)। অতীতে প্রাকৃতিক উৎস যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী ও খনিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত সুতা দিয়ে বস্ত্র বয়ন করা হতো। ২০ শতকে পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরী কৃত্রিম তন্তু থেকে কাপড় তৈরী শুরু হয়।
কাপড় বা ফেব্রিক এর প্রকারভেদ:
কাপড় কত প্রকার বা কাপড়ের প্রকারভেদ কি কি হতে পারে প্রশ্নটি একটি সহজ শুনা গেলেও বিষয়টি আসলে তেমন সহজ নয়। এ বিষয়ে সাধারন ধারনা পেতে আমাদের কিছু না কিছু স্টাডি করা আবশ্যক। উৎসভেদে কাপড়ের প্রকারভেদ প্রধানত: তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক, কৃত্রিম এবং মিশ্র ধরণের। এই তিন প্রকারের কাপড়ই মুলত: দেশীয় বা আন্তর্জাতিক বাজারে পরিধেয় বস্ত্র হিসাবে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ন্যাচারাল ফেব্রিকস তিন প্রকারের হয়ে থাকে:
১) উদ্ভিদ জাত ফেব্রিকস: যেমন- কটন, লিনেন
২) প্রাণি জাত ফেব্রিকস: যেমন- উল, সিল্ক
৩) খনিজ পদার্থ হতে: যেমন এসবেসটস
কৃত্রিম ফেব্রিকসও আবার উৎসের উপর ভিত্তি করে কয়েক ধরণের হয় :
১) রিজেনারেটেড: রেয়ন, লয়সেল
২) সিনথেটিক: নাইলন, পলিষ্টার, এক্রিলিক, স্পানডেক্স।
কাপড়ের কিছু উৎপাদন পদ্ধতি:
বয়ন বা বোনা হচ্ছে কাপড় তৈরীর পদ্ধতি যেখানে এক সারি লম্বা সুতা থাকে এবং এর মধ্য দিয়ে আড়াআড়িভাবে আরেক সারি সুতা থাকে। এটা একটি কাঠামো বা যন্ত্রের সাহায্যে করা হয় যা তাঁত নামে পরিচিত।
স্প্রেড টো কাপড় তৈরীর একটি পদ্ধতি যেখানে সুতাউলো পাতলা টেপের মধ্যে ছড়িয়ে রাখা হয় এরপর টেপ গুলোকে লম্বালম্বি বোনা হয়।
ব্রেইডিং অথবা প্লেইটিং পদ্ধতিতে সুতা একত্রে পাকিয়ে কাপড়ে পরিনত করা হয়। সুতা একত্রে বেধে ম্যাকরেম প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়।
কার্পেট, রাগ, মখমল, ভেলর এবং ভেলভেটীন ইত্যাদি তৈরীতে সেলাই করা কাপড় থেকে প্রাপ্ত সুতা থেকে প্রস্তুত করা হয়। একটি তুলতুলে স্তর তৈরী করা হয় যা ন্যাপ বা পাইল বা গাদা নামে পরিচিত।
সুতোর মধ্যে বন্ধন তৈরী করে বুনন না করা কাপড় তৈরি করা যায়। বন্ধন তাপীয় যা যান্ত্রিক হতে পারে,
আঠাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাপড় রঞ্জনের কিছু পদ্ধতি:
কাপড়কে প্রায় সব রঙেই রঙ করা যায়। প্রতি পাউন্ড কাপড় রঙ করার জন্য কয়েক ডজন গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়।রঙিন নকশা তৈরী করতে বিভিন্ন রঙের কাপড় একত্রে জুড়ে দেওয়া হয় (টার্টান বা উজবেক ইকার্ট), কাপড়ের উপর রঙিন সুতো সুইয়ের সাহায্যে যুক্ত করা হয় (এম্ব্রয়ডারি বা সূঁচিকর্ম), রঙের সাহায্যে প্যাটার্ণ তৈরী করা হয়, নির্দিষ্ট এলাকা ঢেকে রেখে অন্য এলাকায় রঙ করা (টাই-রঞ্জনবিদ্যা), কাপড়ের উপর মোম দিয়ে নকশা অঙ্কন এবং এর মধ্যে রঙ করা (বুটিক), অথবা কাপড়ের উপর বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ভারতসহ পৃথিবীর অনেক স্থানে এখনো কাঠের ব্লক ব্যবহার করা হয় যা ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনে কাপড় বিরঞ্জনে ব্যবহৃত হতো। কাপড়কে ফ্যাকাশে বা সাদা করতে অনেক সময় ব্লিচ করা হয়।
কাপড়ে অনেকসময় রাসায়নিকের ব্যবহার করা হয় তাদের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনার জন্য। ১৯ শতকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে কাপড়ের দাগ এবং কুঞ্চন দূর করতে ব্যাপক ভাগে স্টার্চ ব্যবহার করা হতো।
তথ্যসূএ :bishra.com , উইকিপিডিয়া।
Writer Information
CAMPUS AMBASSADOR
Textile Engineers society (TES)
Zannatul Ferdous putul
Govt. College of Applied Human Science, DU
Department of Clothing and Textile.