কারুপণ্য কে মহাকাব্য কিংবা অসীম মমতায় গড়া কোন শিল্প বললে ভুল হবে না যার পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাস,ঐতিহ্য ও আর শৈল্পিক কারুকার্য। এ যেন কাজ করার এক সবুজ কর্মক্ষেত্র। আপনার কল্পনায় গ্রীণ ফ্যাক্টরি বললেই যেই ব্যাপার গুলো সামনে আসে( কার্বন নির্গমন হ্রাস, পরিবেশ-বান্ধব, পানির অপচয় হ্রাস কিংবা ন্যাচারাল ওয়ে তে প্রোডাকশন) তার সবই বিদ্যমান এই ফ্যাক্টরি-টিতে আর তাইতো খুব কম সময়ের মাঝেই লীড সার্টিফাইড প্লাটিনাম ক্যাটাগরির গ্রীণ ফ্যাক্টরি হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারস সোসাইটি তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই ইন্ডাস্ট্রি এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে আর তারই ধারাবাহিকতায় এবার ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,রংপুরের এক ঝাঁক উদ্দমী ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ হয় রংপুর কারুপণ্য লিমিটেড এ ভিজিট করার। ফ্যাক্টরি ভিজিটের পুরো সময় জুড়ে সার্বিক সহযোগিতা এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কারুপণ্য লিমিটেড এর হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে কর্মরত পলাশ স্যার। অত্যন্ত মজার এবং বন্ধুসুলভ একজন মানুষ তিনি, আলোচনার এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরি ভিজিটে যাওয়া এগারো জনকে ডেকে বসলেন ” ওরা এগারোজন” নামে যা ১৯৭২ সালে মুক্তিপাওয়া একটি বাংলাদেশি চলচিত্র।
ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের এক পর্যায়ে পলাশ স্যারের ভাষ্যমতে ওরা এগারো জন এর সাথে কারুপণ্যের জ্যানারেল ম্যানেজার সায়েদ আনোয়ার হাবিব স্যার এবং সিদ্ধার্থ লাহিরী স্যার সেই সাথে এইচ আর পলাশ স্যার কারুপণ্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের এক্সপিরিয়েন্স সহ কিভাবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া অবস্থাতেই নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন,আলোচনার এক পর্যায়ে সায়েদ আনোয়ার হাবিব স্যার বলেনঃ
আমাদের এডুকেশন কারিকুলামে কিছু সংস্কারের খুব প্রয়োজন এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের টেকনিক্যাল নলেজ টা খুব দরকার নিজেদের টেকনিক্যালি সাউন্ড হয়ে উঠার জন্য কারণ আমাদের অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি’তে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ফরেইনার’রা নিয়ে যাচ্ছে শুধু মাত্র আমাদের দক্ষতার অভাবে এবং টেকনিক্যালি সাউন্ড না-হোয়ার কারণে।
বলে রাখা ভালো আলোচনা টা ছিলো খুবই ইন্টারেক্টিভ এখানে কেবল স্যারেরাই তাদের মতামতা শেয়ার করেন নি বরং আমরাও আমাদের প্রশ্ন,মতামত এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গুলো তাদের সাথে শেয়ার করি।
আলোচনার এক পর্যায়ে সিদ্ধার্থ লাহিরী স্যার বলেন, আমাদের এখন উচিৎ সাসটেইনেবল মেনুফেকচারারিং এর দিকে নজর দেওয়া, আসলে এটা একটা প্রসেস যেখানে পরিবেশের ক্ষতি না করে রিসোর্স ও এনার্জি এর সংরক্ষণ ইনশিওর করে পণ্য উৎপাদন করা যা ব্যবসার জন্য ভালো হবে ও কর্মীবাব্ধব হবে এবং ভোক্তা ও পরিবেশকে নিরাপদ রাখবে। দেখুন আমরা গ্রীণ ফ্যাক্টরি, গ্রীণ মানে কিন্তু চোখের দেখা গ্রীণ না।
চোখের দেখা গ্রীণ কিন্তু গাছ লাগিয়েই করা যায়,ধরুণ একদিকে আমরা সবুজায়ন করলাম অন্যদিকে কালো ধুয়া বের করতে লাগলাম এবং ডায়িং এর ওয়েস্টেজ গুলো নদীতে চলে গেলো সেটা কিন্তু গ্রীণ হলো নাহ, গ্রীণ বলবো তাকে যেখানে কার্বন নির্গমন কম হবে, গ্রীণ হাউজ গ্যাস নর্গমন কম হবে, ডায়িং এর পানি রিসাইক্লিং করে পুনঃ-ব্যবহারযোগ্য করা যাবে এবং কর্মক্ষেত্র হবে সম্পূর্ন কর্মীবান্ধব অর্থাৎ তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা সেখানে থাকবে বিদ্যমান,তবেই কেবল প্রোডাক্টিভিটি যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি ফ্যাক্টরির পরিবেশ ও হবে পরিবেশবান্ধব আর সেখান থেকেই আমাদের কর্মক্ষেত্রের উপযোগী পরিবেশ তৈরির এই উদ্যোগ।
বলে রাখা ভালো, আমাদের পুরো আয়োজনের কোর্ডিনেশনের দায়িত্বে ছিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারস সোসাইটির ক্যাম্পাস টিম কো-অর্ডিনেশন এর দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ রাশিদ। ফেক্ট্রী ভিজিট সম্পর্কে তিনি বলেন, “অর্গানাইজেশনে যুক্ত থেকে শুধুমাত্র নিজের কথা চিন্তা না করে সেই অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত আপনার টিমমেটদের উন্নয়নের লক্ষ্যে যদি আপনি কাজ করেন, এর প্রতিদান স্বরূপ আপনার নিজেরই উন্নতি হবে। এই সোসাইটিতে যুক্ত থেকে আমি বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরি ভিজিট এর সুযোগ পেলেও আমার টিমের সদস্যদের জন্য এটি ছিল প্রথম ফ্যাক্টরি ভিজিট। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, তারা তাদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে এবং ইন্ডাস্ট্রি এনভায়রনমেন্ট সম্পর্কে চমৎকার ধারণা পেয়েছে। আগামীতে তারা আরও ভালো করবে বলে আমি আশাবাদী।”
সবমিলিয়ে শতরঞ্জির অস্তিত্ব রক্ষায় কাজ করতে নামা কারুপণ্যের বিচরণ এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে পুরো বিশ্ব জুড়ে। কারুপণ্য যেনো সবুজের মাঝে এক অপরুপ কর্মক্ষেত্র এখানে বিদ্যমান চোখ ধাধানো সকল ভাস্কর্য, মন মাতানো পানির ফোয়ারা আর শ্রমিক বান্ধব সকল নান্দনিক ব্যাবস্থা মুহূর্তেই আপনাকে কারুপণ্যের মায়ার চাঁদরে জড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হবে এবং একজন প্রকৃতি প্রেমি হয়ে উঠতে বাধ্য করবে।
WRITER INFORMATION
ARAFAT KHAN PRITOM
Campus Ambassador
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College.