Tuesday, December 3, 2024
Magazine
More
    HomeTraditional Textileকার্পেটের/গালিচার আদ্যোপান্ত

    কার্পেটের/গালিচার আদ্যোপান্ত

    পর্ব- ১: গালিচার ইতিহাস :

    কার্পেট/গালিচা এর কথা শুনলে প্রথমে আমাদের যেটার কথা মনে আসে তা হল রেড কার্পেট/লাল গালিচা অথবা আলাদিনের সেই ম্যাজিক কার্পেট বা গালিচা। আলাদিনের সেই গালিচা দেখে ইচ্ছা হয় ইশ! যদি আমারো থাকত। আর লাল গালিচা  অস্কার, গ্রামি অ্যাওয়ার্ড কিংবা রাষ্ট্রীয় অতিথিকে স্বাগত জানানো মূলত ঐতিহ্যগতভাবে, কোন রাষ্ট্রীয় অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য এবং বর্তমানে প্রথাগত কোনও অনুষ্ঠানে কোনও অতিবিশিষ্ট বা মহামান্য ব্যক্তি ও তারকাদের সংবর্ধনা দেয়ার জন্য লাল গালিচা ব্যবহার করা হয়। এই গালিচায় পা দিয়ে হাটার শখও অনেকের আছে। কিন্তু এর কাহিনী কি আমরা জানি? আলাদিনের গল্পের অন্যতম আকর্ষণ ম্যাজিক কার্পেট। এমন এক গালিচা, যা উড়তে সক্ষম আর তার সওয়ারকে নিয়ে যেতে সক্ষম যেখানে যেতে তার মন চায়। আলাদিনের গল্পে এই জাদু কার্পেট খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এই কার্পেট বাস্তবে না পেলেও এই কার্পেট শুধু রেড কার্পেটে সীমাবদ্ধ নয়, এর আছে নানা ধরণ নানা ডিজাইন। নানা দেশে আছে নানা ধরনের কার্পেট। 

    কার্পেট হচ্ছে একটি Textile floor।  গালিচা/ কার্পেটকে অন্যকথায় বলা যায়, পশুলোমে প্রস্তুত আবরণ বস্ত্রবিশেষ, ঘরের মেঝেতে পাতবার শৌখিন ফরাশবিশেষ। ফার্সি ভাষায় কার্পেটকে বলে ফার্শ।  কার্পেটের ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ২৫০০ বছর। তবে কোন সময়, কোন এলাকায়, কোন জাতি সর্বপ্রথম গালিচা তৈরি করেছিল তার সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও জানা যায়নি। যদিও কার্পেট তৈরির ঐতিহ্য দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান ছিল :-  তাই কার্পেটের ছবি, উদাহরণস্বরূপ, মিশরীয় ফেরাউনের সমাধিগুলিতে পাওয়া যায়।  সেই দূরবর্তী সময়ে কার্পেটগুলি তাদের অধিকারী ব্যক্তির অবস্থা এবং সম্পদের নির্দেশক হিসাবে কাজ করেছিল এবং বাসস্থানের প্রসাধনগুলির উপাদান হিসাবে কাজ করেছিলো।  বিশেষ করে শক্তিশালী, কার্পেটওয়ার্কটি সামনে এশিয়ার অঞ্চলে পাওয়া গেছিলো।  কিন্তু এটি সত্ত্বেও, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কার্পেটটি পাওয়া যায় নি। সারা বিশ্ব জুড়ে খননার সময় কার্পেটের অনেকগুলি টুকরা আবিষ্কৃত হয়েছিল। মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলির কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নির্দেশ করে যে কার্পেট কাজটি আমাদের যুগে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দীতে ব্যাপক ছিল। অতএব, এই জায়গাকে কার্পেটের প্যাডেল বলা হয়। লোকেরা তুর্কিসস্তান থেকে পশ্চিমে, ককেশাসে, পূর্ব চীন থেকে এবং তারপর ভারতে এই রূপটি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হয়। উপরন্তু, জায়গা এই পরিসীমা একটি প্রাচ্য কার্পেট বেল্ট হিসাবে পরিচিত হয়।

    এছাড়া, মনে করা হয় যে পারস্যেরও আগে কারুকার্যখচিত গালিচার পীঠস্থান ছিল তৎকালীন ব্যাবিলনে। সম্রাট সাইরাস ব্যাবিলন আক্রমণ করলে তিনি সেখানকার গালিচাশিল্প দেখে মুগ্ধ হন এবং ঐতিহাসিকদের মতে তিনিই পারস্যে গালিচা শিল্পের পত্তন ঘটান। এরপরে বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গালিচা শিল্প হস্তান্তর হতে থাকে। ৬২৮ খ্রীষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিউস আক্রমণ করেন সাশানদের রাজধানী তিসফুন (Ctesiphon), সেখান থেকে তিনি বহু কার্পেট নিয়ে যান। 

    তবে লাল গালিচার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে,  গালিচা বা কার্পেট আরো অনেক আগের। ঐতিহাসিকদের মতে, গ্রীক ট্র্যাজেডির কবি এসকরোসাস খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে রেড কার্পেটের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা রেড কার্পেট পাড়ার ইতিহাসের প্রথমতম রেকর্ড হতে পারে। প্রদর্শনীর কার্পেট বিছানোর রীতি হাজার বছরের পুরানো।কবি এসকরোসাস তার একটা বইয়ে –  প্রাচীন গ্রিসের ইস্কিলুসের ট্র্যাজেডিতে এই লালগালিচার উল্লেখ পাওয়া যায়। যখন গ্রিসের সম্রাট আগামেমনন ট্রোজান যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে দেশে ফিরে আসেন, তখন সম্রাজ্ঞীর নির্দেশে তাঁকে স্বাগত জানাতে লাল গালিচা বিছানো হয়েছিল। অর্থাৎ, খ্রিষ্টের জন্মেরও ৫০০ বছর আগে রাজকীয় সংবর্ধনায় লালগালিচা ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা পাওয়া যায়। তাই বলা কার্পেট বা গালিচার ইতিহাস অনেক পুরনো কাল থেকে চলে আসছে।  

    প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৯৪৯ সালে এটি সুপরিচিত ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য মূল্যবান জিনিস গুলোর সাথে আবিষ্কার করেছিলেন।  বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, যে ৬ ষ্ঠ শতাব্দীতে পাজির কার্পেট তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু কার দ্বারা একটি বড় প্রশ্ন। এটি ছিল, উচ্চ মানের পণ্য – এবং এই কার্পেট ইরানের বোনা ছিল, যেখানে এই নৈপুণ্যটি আরও বেশি ডিগ্রি অর্জন করা হয়েছিল এবং যেখানে নোডের বয়ন পদ্ধতিটি খুবই প্রাচীন ছিল। পাজির গালিচা বিশ্বের প্রাচীনতম। এর আকার 1.83 × 2.00 মিটার, এবং বেধ 2.4 মি.মি.। আবিষ্কারের একটি বিস্তারিত গবেষণার সাথে, এটি পাওয়া যায় যে এটি লাল, সবুজ, হলুদ এবং সোনার রং গুলির একটি থ্রেডের উপর ভিত্তি করে ছিল এবং নোডের ঘনত্বটি 1,600 নোডুলগুলি 1 DM²  – সেই সময়ের জন্য অত্যাশ্চর্যজনকভাবে জটিল কাজ। যাইহোক, বিরল আধুনিক কার্পেট একই বৈশিষ্ট্য আছে। একটি ভেড়া উল একটি কার্পেট উৎপাদন উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। 

    কিভাবে তৈরি হয় এই কার্পেট : 

    গালিচার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। আগে ছিল হাতে বোনা কার্পেট। এখন হাতে বোনা কার্পেটের পাশাপাশি মেশিনে তৈরি কার্পেটও ব্যাপকভাবে উৎপাদন হচ্ছে।প্রাচীনকালে  কার্পেট যখন তৈরি হয়েছিল তখন মেশিনপাতি ছিল না। বাড়ি কিংবা ঘরের ভেতরে প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ হাতের সাহায্যে কার্পেট বুনেছিল তখন। প্রাথমিক পর্যায়ে তো এখনকার মতো সূতোর ব্যবহার ছিল না কারণ তখন সূতোই আবিষ্কার হয় নি। সে সময় লতাগুল্ম, খেজুর পাতা কিংবা গাছের ছাল বাকলকে পিটিয়ে নরম করে মানুষ বিচিত্র সাজি বা ঝুড়ি তৈরি করতো। পরবর্তীকালে মাদুর জাতীয় জিনিস তৈরি করেছে। তারও অনেক পরে পশুর চামড়া এবং পশম ব্যবহার করে মাদুর বানিয়েছে। মেষ বা দুম্বা জাতীয় পশুকে পোষ মানিয়ে লালন পালন করার মধ্য দিয়ে কার্পেট শিল্পীরা ধীরে ধীরে ওইসব পশুর পশম ব্যবহার করে পশমি কার্পেট নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইতিহাস অনুযায়ী প্রথম কার্পেট বোণার কাজটি করেছিল মহিলারা। ইতিহাসের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মহিলারাই কার্পেট নির্মাণের কাজটি চালিয়েছিল। তারা কার্পেট কিংবা মাদুর বুণতো। আবার গৃহপালিত পশু যেমন গাধা, মেষ বা ঘোড়ার পিঠের ওপর দেয়ার জন্য এক ধরনের জিন বা খোরজিন তৈরি করতো। খোরজিন হলো পশুর পিঠের দুইপাশে ঝুলে থাকা ব্যাগ যার ভেতর সফরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হয়। এগুলো মহিলারা হাতে বুণতো। এছাড়া বাজারঘাট করার জন্য ব্যাগ বানাতো তারা। 

    বর্তমানে, সফ্টওয়্যার পরিচালিত গালিচা তৈরির যন্ত্রপাতি বাজারে পাওয়া যায়। এবং এই যন্ত্রপাতিগুলির সাহায্যে আপনি আপনার নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের আলংকারিক গালিচা তৈরি করতে পারবেন। সাধারণত, আপনি এই যন্ত্রপাতিগুলির সাহায্যে ১৭ থেকে ২০ মিটার প্রশস্ত গালিচা তৈরি করতে পারবেন। এই যন্ত্রটি আটটি টোন লাইনের কম্পিউটার জ্যাকুয়ার্ড গোলাকার গালিচা যন্ত্র। আপনি এই যন্ত্রের মাধ্যমে আট রঙের গালিচা উৎপাদন করতে পারবেন। 

    বর্তমান, প্রধান কাঁচামাল হলো উলের সুতা এবং সিনথেটিক সুতা এবং রঞ্জক এবং রাসায়নিক। এছাড়াও, আপনি সিনথেটিক ফাইবার বা পাট ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত, কাঁচামালগুলির প্রয়োজনীয়তা আপনি যে নির্দিষ্ট ধরণের কার্পেট উৎপাদন করতে চান তার উপর নির্ভর করে।

    বর্তমানে সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে গালিচা উৎপাদন হয়ে থাকে :

    • সুতা কেনা, বিস্তৃতকরণ, ধোয়া এবং শুকানো ;
    • গ্রাফ পেপারে নকশা আঁকা এবং তারপরে তা মনে রাখা ;
    • তাঁত স্থাপন করা ;
    • উপযুক্ত সুতা ব্যবহার করে গালিচা বুনন ;
    • ভারী দাঁতযুক্ত ধাতব চিরুনি ব্যবহার করে প্রতিটি সারিতে নীচে চাপ দেওয়া ;
    • পশমী সুতোর বুনন গাঁথার পরে অবশিষ্ট অংশগুলি কেটে ফেলা হয় গালিচাকে মসৃণ দেখানোর জন্য ;
    • গালিচা ধুয়ে শুকানো ;
    • গালিচা ঠিক মতো মোড়ানো এবং গুছিয়ে রাখা ;

    মূলত, গালিচা তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। আজকাল, প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে, আপনি অর্থোপার্জনের জন্য সহজ প্রক্রিয়াতে গালিচা তৈরি এবং বিক্রয় উভয়ই করতে পারবেন।

    References : 

    1. Wikipedia 
    2. Prothom Alo
    3. Bangladesh Protidin 
    4. Share my store
    5. Textile Today 
    6. EO Carpet 

    Written by: 
    Md. Nazmul Hasan Nazim 
    Member of TES
    National Institute of Textile Engineering and Research 

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed