গ্লাস ফাইবার বা গ্লাস তন্তু বা কাচ তন্তু হল কাচের অনেকগুলাে সৃক্ষ এবং শক্তিশালী তন্তুর সমন্বয়। যখন সিলিকা ভিত্তিক যৌগ ও অন্যান্য কাচ জাতীয় যৌগকে সুতার মত খুব পাতলা এবং নমনীয় আকৃতি প্রদান করা হয় তখন গ্লাস ফাইবার সৃষ্টি হয়।
গ্লাস ফাইবার মূলত হালকা ওজনের অত্যন্ত শক্তিশালী ফাইবার। যদিও এর শক্তির কার্বন ফাইবারের তুলনায় কিছুটা কম, তবে এর উপাদানগুলাে খুব কম ভঙ্গুর হয় এবং কাঁচামালগুলি খুব কম ব্যয়বহুল। এটি প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে পরিচিত ফাইবার।
সর্বপ্রথম ১৯৩০ এর দশকে কাচ থেকে ফাইবার তৈরি শুরু হয়।১৮৯৩ সালে ওয়ার্ড কলম্বিয়ান এক্রোজিশনে এডওয়ার্ড ডুরমন্ড লিবি সর্বপ্রথম রেশম সুতার সাথে কাচ তন্তু মিশিয়ে একটি পােশাক বানিয়ে প্রদর্শন করেন। এটিই ছিল কাচ তন্তুর তৈরী প্রথম পরিধেয় পােশাক।
গ্লাস ফাইবারের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৯৩৬ সাল থেকে। ১৯৩৮ সালে দুটি বৃহৎ কাচ নির্মাতা কোম্পানি ওয়েন্স-ইলিনয়িস গ্লাস কোম্পানি এবং করনিং গ্লাস কোম্পানি একত্রিত হয়ে ওয়েন্স-করনিং ফাইবার গ্লাস কর্পোরেশন গঠন করে কন্টিনিউয়াস ফিলামেন্ট পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে ফাইবার গ্লাস উৎপাদন শুরু করে এবং মার্কেটিং এর মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে। ওয়েন্স-করনিং আজকের যুগেও সর্ববৃহৎ ফাইবারগ্লাস উৎপাদনকারী কোম্পানি।
গ্লাস ফাইবারের মূল উপাদান হল সিলিকা (বালি) বা SiO2। সাধারণ অবস্থায় এটি একটি পলিমার বা (SiO2)n হিসেবে থাকে । গ্লাস ফাইবার তৈরির উপাদানের মধ্যে কাঁচামাল হিসেবে রয়েছে কোয়ার্টজবালি(SiO2),অ্যালুমিনিয়াম,চুনাপাথর(CaCO3),ডলোমাইট,সোডা অ্যাশ,বোরিক এসিড,গ্লাবারের লবন,ফ্লোরাইড।
গ্লাস ফাইবারের কোন সাধারণ গলনাঙ্ক নেই তবে প্রায় ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করলে তা নরম হয়ে যায় এবং গলতে শুরু করে। ১৭১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এর অণুগুলো মুক্তভাবে চলাচল করতে সক্ষম তবে এই তাপমাত্রা থেকে দ্রুত ঠাণ্ডা করে সংগ্রহ করা হলে গ্লাস ফাইবারের আকৃতিতে আনা সম্ভব হয় না।
গ্লাসের রাসায়নিক উপাদানঃ
সিলিকন ডাইঅক্সাইড= ৫৫%
ক্যালসিয়াম অক্সাইড= ১৬-২৫%
এ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড= ১২-১৬%
ব্যারন অক্সাইড= ৮-১৩%
সোডিয়াম ও পটাশিয়াম অক্সাইড= ০-১%
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড= ০-৬%
গ্লাস ফাইবারের রাসায়নিক গুনাবলিঃ
(১) এসিডে ক্রিয়াঃ হাইড্রক্লোরিক ও গরম ফসফোরিক এসিডে ক্ষতি হয়।
(২) ব্লিচে ক্রিয়াঃ কোন ক্ষতি হয়না।
(৩) এ্যালকালিতে ক্রিয়াঃ এ্যালকালিতে প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল।
(৪) আলোয় প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ সূর্যের আলো কোন ক্ষতি করে না।
(৫) পোকামাকড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ আক্রান্ত হয়না।
গ্লাস ফাইবারের ভৌত গুনাবলিঃ
(১) শক্তি, টেনাসিটি (গ্রাম/ ডেনিয়ারঃ ৬.৩ থেকে ৬.৯
(২) ঘনত্ব (গ্রাম/সিসি): ২.৫
(৩) স্থিতিস্থাপকতাঃ ভাল নয়
(৪) আদ্রতা ধারন ক্ষমতাঃ ০%
(৫) ছিড়ে যাবার পূর্বে প্রসারনঃ ৩%
(৬) রংঃ বর্ণহীন বা সাদা
(৭) তাপ প্রতিরোধক ক্ষমতাঃ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত ভাল।
গ্লাস ফাইবারের ব্যবহারঃ
১। ফাইবার গ্লাস সাধারণত ম্যাট বা ফেব্রিক হিসেবে তাপ, শব্দ ও বিদ্যুৎ নিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২। তীর, ধনুক, ক্রুশ ধনুক, যানবাহনের খোল, জাহাজের খোল, ইত্যাদি ফাইবার গ্লাসের সাহায্যে তৈরী করা হয়।
৩। ঘরের মেঝে বা ছাদ ফাইবার গ্লাসের সাহায্যে তৈরী করা হয়।
৪। কোন বস্তুকে শক্তি প্রদান করতে বা এর রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে উপরে গাইবার গ্লাসের আস্তরণ দেওয়া হয়।
৫। বিকিরন এর বিরুদ্ধে ব্যবহার, এক্সরে ও রেডিয়েশন প্রতিরোধের জন্য গ্লাস ফাইবারের তৈরি কাপড় ব্যবহার করা হয়।
Information Source :
Textile Fiber Book ( M.A.Sayem)
Textile Fiber Book (Mohibul Islam)
Wikipedia
Google
Textile LAB.
Writer Information:
Israt Jahan Nadia
Department Of Clothing & Textile
Batch:35, 1st Year
College Of Ho
me Economics