Tuesday, December 24, 2024
Magazine
More
    HomeBusinessকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্যতম হাতিয়ার হবে ভবিষ্যতে

    কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্যতম হাতিয়ার হবে ভবিষ্যতে

    ▪প্রযুক্তির অন্যতম এক শাখা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দ্রুতগতিতে নিজের বিকাশ ঘটাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের ছোট-বড় যেকোনো কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধির প্রযুক্তি। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে মানবদেহের বাইরে লালিত এই বুদ্ধির প্রয়োগ দিন দিন বাড়বে, সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। সর্বপ্রথম Artificial Intelligence নামক টার্মটি ব্যবহার করা হয় ১৯৫৫ সালে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সংক্ষেপে AI। এটি প্রকৌশল বিদ্যার সেই শাখা যেখানে যন্ত্রকে দেওয়া হয় মানুষের সমতুল্য বিচারবুদ্ধি। একটি যন্ত্র নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কাজ করবে, এটাই তার বুদ্ধিমত্তা। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ভরে যাচ্ছে পৃথিবী।

    ▪জটিল এই জিনিসের সহজ রূপঃ

    কেমন হতে পারে আপনার আশেপাশে থাকা একটি কার্যকরী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রূপ? আচ্ছা ভাবুন তো, ঘরের কাজে সাহায্যকারী মানুষটি আসতে না পারলে সারা দিনের কাজে কত ঝামেলা হয়ে যায়! অথচ বারো মাসই এসব কাজে সাহায্য করার জন্য ঘরে থাকতে পারে একটি দারুণ গৃহকর্মী রোবট, যে কিনা ঘরের কাজে সুনিপুণ, একেবারে মনের মতো একজন কর্মী। মেঝেতে ময়লা দেখলেই ঝাঁট দিয়ে পরিস্কার করে ফেলবে সে। কাপড় শুকিয়ে গেলেই বারান্দা থেকে তুলে ঘরে এনে রাখবে। আর তার পিছে কাজ নিয়ে মানুষের চেঁচানো লাগবে না মোটেও! সেটি কিন্তু হবে এ.আই-এর অবদান। প্রোগ্রাম করে রোবটটিকে তেমন ভাবেই বানানো হবে যে, সে সময় ও পরিস্থিতি খেয়াল করে সেই অনুযায়ী নিজের করণীয় নির্ধারণ করতে পারবে।

    আবার কোনো কোনো যন্ত্র তার বুদ্ধিমত্তার অতিরিক্ত প্রয়োগও করতে পারে। ঘরের কাজে পটু এমন সুবোধ এক রোবটও ঘটাতে পারে অঘটন। আপনার তৃষ্ণা পেলে সে যদি দিনের বেলা আপনার জন্য ফলের রস বানিয়ে আনে, একই কাজ সে রাতের বেলায়ও করে বসবে। যখন চারদিক শুনশান, পড়শিরা ঘুমিয়ে পড়েছে, আপনার গৃহকর্মী লক্ষ্মী রোবট তখন বিকট শব্দে জুসার চালু করে গোটা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে! কী ভাবছেন? কেবল সুবিধাটুকুই দেখবেন, ভোগান্তি পোহাবেন না? সবকিছুরই আছে ভালো আর মন্দ, এক মুদ্রার যেমন দু’খানা পিঠ।

    ❝কয়েক বছর পরই হয়তো দেখা যাবে যে, দুপুরবেলা পাশের বাড়ির রোবট গৃহকর্মী চেঁচিয়ে ডেকে একটু জিরার গুঁড়া চাচ্ছে। তখন যেন অবাক হবেন না! কেননা তাকে ঐ বাসার ভাবী এমন কথাই শিখিয়েছেন!❞

    কৃত্রিম বুদ্ধি মানেই যন্ত্রকে শেখানো। যা জানাবেন, তা-ই জানবে সে, তা থেকে শিখেই সে ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া দেখাবে। বিজ্ঞানের এই শাখাটা বেশ বিস্তৃতি নিয়ে ডালপালা মেলছে। যন্ত্র যতই নিজে থেকে কাজ করা শিখবে, তত বিশ্রাম পাবে মানুষ। তাই হয়তো গোটা দুনিয়ায় যন্ত্রদের শেখানোর এত আয়োজন! এই শাখার পড়াশোনা সংক্রান্ত কথাবার্তা নিয়ে সাজানো হয়েছে লেখাটা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাঠ্যক্রমে কোন বিষয়গুলো রয়েছে, তার মধ্যে থেকেই কিছু জিনিস আলোচনা করবো আজ।

    ▪শুরুর দিকের গল্পঃ

    আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগ শুরু হয়েছিলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রদূত অ্যালান টিউরিংয়ের হাত ধরে, ১৯৫০ সালে। সাড়া জাগানো টিউরিং টেস্ট নামক একটি পরীক্ষার মাধমে অ্যালান টিউরিং যাচাই করা শুরু করেছিলেন যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা। এই পরীক্ষায় আপনি আড়াল থেকে একজন মানুষ এবং একটি মেশিনের সাথে আলাপচারিতা চালাবেন, সত্তা দু’টি আপনার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং আপনি তাদের বুদ্ধিমত্তার মান যাচাই করবেন। কিছু সময় পর আপনাকে সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে হবে, এদের মধ্যে কোন সত্তাটি মেশিন। আপনি যদি মেশিনটি সনাক্ত করতে না পারেন, তবে সেই মেশিন বুদ্ধিমান হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। টিউরিং টেস্টের এই ধারণা কাজে লাগিয়েই সেই যুগে মাপা হতো একটি যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা।

    ▪দামের মধ্যস্থতাকারীরা ই-কমার্স চ্যাটবটঃ

    ভাবুন দেখি, কম্পিউটারের এইপাশে বসে অনলাইন কেনাকাটা করছেন, আর ওইপাশে নির্দিষ্ট দামের দোকানের বদলে আছে পছন্দমত দাম করার সুবিধা দেয়া একটা ই-কমার্স সাইট, আর এই ‘দাম করা’ কাজটুকু নিষ্ঠার সাথে পালন করছে একটা চ্যাটবট! হ্যাঁ, এই সেবা নিয়েই বানানো হয়েছে প্রকল্পটি। একদামের দোকান নিয়ে আপত্তি যাদের, তাদের অনলাইন কেনাকাটাকে আনন্দময় করতে এই সিস্টেম কাজে লাগবে। মূলত বিক্রি বাড়ানোর পন্থা হিসেবেই এই উপায় বেছে নেয়া হয়েছে। তিনটি প্রধান পদ্ধতিতে কাজ করে এটি- দ্যা গেম থিওরি, ডিসিশন থিওরি এবং দ্যা নেগোসিয়েশন অ্যানালাইসিস। 
    পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে সক্ষম এই ব্যবস্থাটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত বিকল্প দেখাতে পারে দক্ষতার সাথে। কিছু তাত্ত্বিক সমস্যা আর যোগাযোগ নীতিমালা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা রয়েছে এই ব্যবস্থাটির।

    ▪নলেজ ইঞ্জিনিয়ারিংঃ

    জ্ঞান নিয়েই এই শাখার যত কারবার। নামটা পড়ে কী মনে হচ্ছে আপনার? লেখাপড়ার সবটা জুড়েই তো জ্ঞানচর্চা, তার আবার আলাদা করে প্রকৌশলবিদ্যা কেন! এই নলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা ইনফরমেশন টেকনোলজির এমন এক শাখা যেটা নলেজ বেজড সিস্টেম বা জ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থা তৈরি করা এবং সেটার রক্ষণাবেক্ষণ আর কার্যকারণ নিয়ে কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা, দরকারি তথ্যাদি বাছাই করা, সেগুলোকে যথাযথ জায়গায় সঠিক উপায়ে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা, নলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং হলো এসব কাজের সমষ্টি।

    নলেজ বেজড সিস্টেমগুলোর মধ্যে আছে এক্সপার্ট সিস্টেম, নিউরাল নেটওয়ার্ক, কেস বেজড রিজনিং, ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট ইত্যাদি। কেস বেজড রিজনিং যেমন এর কাজ হচ্ছে নতুন পরিস্থিতিতে পুরনো কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। একটা ভিত্তি থাকে যেখানে তথ্যাদি থাকে একেকটা কেস বা ঘটনার আদলে। তার উপর ভিত্তি করে ভিন্ন কোনো কাজে নতুন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া, এটাই কেস বেজড রিজনিংয়ের মূল কথা। নতুন পরিস্থিতে সিস্টেম তার নলেজ বেজে সংরক্ষণ করে রাখা কেসগুলো ঘেঁটে দেখে কোনোটার সাথে নতুন কাজের মিল আছে কিনা, আর মিল পেয়ে গেলে সেটাকে কাজে লাগানো হয়।

    ▪মাইক্রোফটঃ

    মাইক্রোফট হচ্ছে একটা ওপেন সোর্স নলেজ নেভিগেটর এবং বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগত সহকারী। মাইক্রোফটকে ব্যবহার করা যাবে যেকোনো জায়গায়, কম্পিউটার থেকে নিয়ে গৃহকর্মের কোনো যন্ত্রেও। অর্থাৎ ঘরের কাজে সহায়তা দিতেও মাইক্রোফট সঙ্গী হতে পারে আপনার। ছোট-বড় যেকোনো প্রকল্পেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই সিস্টেমটি। পাঠ্য ভাষাকে যন্ত্রের উপযোগী করে তুলতে এই সিস্টেমে ব্যবহার করা হয় এডাপ্ট নামক পার্সার।
    বাক্যের সংশ্লেষণের জন্য এটি কাজে লাগায় ফ্লাইট-বেজড মিমিক, যেটা বার্তাকে কথায় রূপান্তর করার একটা দ্রুতগামী সফটওয়্যার।

    ▪মেশিন লার্নিংঃ

    মেশিন অর্থাৎ যন্ত্র, যাকে আপনি কৃত্রিম উপায়ে বুদ্ধিসম্পন্ন করতে চাচ্ছেন, সেটিকে ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট বা বুদ্ধিমান সত্ত্বা বলা হয়। এই এজেন্টের কিছু শেখার পদ্ধতিটি হচ্ছে মেশিন লার্নিং। সম্পূর্ণভাবে প্রোগ্রাম করা না হয়ে নিজে থেকে কাজ করা, আগেকার করা কাজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে উন্নত করা, মেশিন লার্নিং বিষয়ের মূল প্রতিপাদ্য এটাই। মূলত দু’ভাবে শিখতে পারে একটা যন্ত্র। একটি হলো সুপারভাইজড লার্নিং, অন্যটি আনসুপারভাইজড লার্নিং।

    লার্নিং বা শেখার এই দুইটি উপায় কী নির্দেশ করে? সহজ ভাষায়, সুপারভাইজড লার্নিংয়ে একটি কাঠামো থাকে, আগে থেকেই জানা আছে এমন কিছু তথ্য সাজানো থাকে সেখানে, সেটি ব্যবহার করে নতুন কোনো কাজ করা হয়। আনসুপারভাইজড লার্নিংয়ে ঘটে উল্টোটা। যে কাজটা করা হচ্ছে সে সংক্রান্ত পূর্বের কোনো তথ্য মেশিন জানে না, অর্থাৎ কাজটা সম্পূর্ণই নতুন তার কাছে। কম্পিউটার বিজ্ঞান যেহেতু অ্যালগরিদমের উপর ভিত্তি করে কাজ করে, কাজেই এআই শাখায়ও রয়েছে বহু অ্যালগরিদম। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলো আলাদা করা হয় সুপারভাইজড ও আনসুপারভাইজড লার্নিংয়ের সূত্রে।

    ▪গুগল ব্রেইনঃ

    গুগল ব্রেইন, একটি ডিপ লার্নিং গবেষণামূলক প্রকল্প, যেটা সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে সবিস্তারে মেশিন লার্নিং গবেষণা ও গুগল কম্পিউটিংকে সমন্বিত করে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বেশ স্পষ্ট- যন্ত্রকে আরো চৌকস করে তুলে মানুষের জীবনযাত্রা সহজতর বানানো। গুগল ব্রেইন শুরু হয় ২০১১ সালে একটা খণ্ডকালীন গবেষণা হিসেবে, আর বর্তমানে এর আছে ২৪০টির বেশি প্রকাশনা। 
    ২০১৬ সালে গুগল ব্রেইন প্রকল্প থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা এনক্রিপশন সিস্টেম তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করা হয় নিউরাল নেটওয়ার্কের একটি ছবি বর্ধিতকরণ বা ইমেজ এনহ্যান্সমেন্ট সিস্টেম, যা একটা ৮x৮ মাত্রার ছবিকে ৩২x৩২ মাত্রায় পরিবর্তন করতে সক্ষম।

    ▪ডাটা মাইনিংঃ

    অনেকগুলো তথ্য থেকে আপনি প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য বের করে নেবেন, মূলত এটিই ডাটা মাইনিংয়ের আলোচ্য বিষয়। অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সেগুলোকে কাজে লাগানোর বিদ্যা শেখায় ডাটা মাইনিং। নলেজ ডিসকভারি ফ্রম ডাটা নামক একটি প্রক্রিয়া রয়েছে, সংক্ষেপে (KDD) কেডিডি, ডাটা মাইনিংকে অনেকেই কেডিডির অপর নাম হিসেবে জানেন। আবার কারো কারো মতে, এই নলেজ ডিসকভারি প্রক্রিয়ার একটা জরুরি ধাপ হচ্ছে ডাটা মাইনিং। ডাটা থেকে নলেজ ডিসকভারি অর্থাৎ তথ্য থেকে জ্ঞান লাভের এই যে প্রক্রিয়া, এর ধাপসমূহ হচ্ছে ডাটা ক্লিনিং, ডাটা ইন্টিগ্রেশন, ডাটা সিলেকশন, ডাটা ট্রান্সফরমেশন, ডাটা মাইনিং, প্যাটার্ন ইভাল্যুশন এবং নলেজ প্রেজেন্টেশন।

    ডাটা মাইনিং পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে ক্লাসিফিকেশন অ্যানালাইসিস, ক্লাস্টার অ্যানালাইসিস, রিগ্রেশন অ্যানালাইসিস, আউটলায়ার ডিটেকশন, অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড কো-রিলেশন অ্যানালাইসিস ইত্যাদি। যেমন অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড কো-রিলেশন অ্যানালাইসিস পদ্ধতিতে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব। আর সে অনুযায়ী একটি কাজের ধারা তৈরি করা সম্ভব।

    ব্যবসা সংক্রান্ত একটি ছোট উদাহরণ দিয়েই বোঝানো যাক। একটি দোকানে ক্রেতারা প্রায় সময়ই যেকোনো দুটি জিনিস একসাথে কেনেন। হতে পারে সেটা রুটি আর মাখন, খাতা আর কলম কিংবা সুপারশপের মাছ আর সবজি! যখন ক্রেতাদের কেনাকাটার ধারা বিশ্লেষণ করে এই প্যাটার্ন বা ধরনটা জানা যাবে যে, তারা ঐ দুটো জিনিস বেশিরভাগ সময়ই একত্রে কিনছেন, তখন দোকান কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে কৌশল অবলম্বন করতে পারে। যেমন তারা দোকানের বিন্যাস বদলালো যাতে একসাথে বিক্রি হওয়া জিনিসগুলো পাশাপাশিই থাকে। কিংবা কোনো একটি পণ্যতে ছাড় দেওয়া হলো যাতে ক্রেতারা একসাথে দুটো পণ্য কিনতে আরো আগ্রহী হয়। এই বিষয়টাকে বলা হয় মার্কেট বাস্কেট অ্যানালাইসিস, যা ব্যবসাক্ষেত্রে বেশ কার্যকর।

    ▪কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন পোষা প্রাণীঃ

    আদরের পোষা প্রাণীটা আপনার সময় ভালো কাটাতে ভূমিকা রাখে নিশ্চয়ই। সে আপনাকে সঙ্গ দেয়, সময় দেয়, তার আদুরে এবং মজার মজার কাজকর্ম দেখে আপনার দিন দিব্যি হেসেখেলে কাটতে পারে। সময় আপনিও তাকে দিচ্ছেন, তাকে খাওয়ানো বা পরিস্কার রাখা, দেখভাল করা সবকিছুই আপনার করতে হচ্ছে। আর জীবনের পরম সত্য মেনে আপনার আদরের পোষা প্রাণীটি এক সময় মারা যাবে। এ.আই সেই জায়গাটিকেই বেছে নিচ্ছে তার প্রয়োগক্ষেত্র হিসেবে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু কল্যাণ গবেষক ডক্টর জিন-লুপ রল্টের মতে, ইতোমধ্যেই এই রোবট পেট, অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পোষ্যদের লালনপালনে আগ্রহী প্রচুর মানুষ রয়েছে এবং এগুলো ২০২৫ সাল নাগাদ ব্যাপকভাবে পাওয়া যাবে। রল্ট আরো বলেন, আগামী ১০-১৫ বছরে এ.আই এবং রোবটিক্স শাখায় এমন সব উন্নয়ন সাধিত হতে যাচ্ছে যে, মানুষের সাথে আবেগী সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম পেট-বটস তৈরি করা সম্ভব হবে। ভেবে রাখুন আগেভাগেই, এই দেশে সহজলভ্য হলে, নিতে চাইবেন কিনা এমন একটি পেট রোবট।

    ▪ওষুধ গ্রহণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাঃ

    চিকিৎসাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার মূলত এমন একটি ধারণা, যেখানে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী সেবা দেয়া হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই হবে স্বয়ংক্রিয়, যেখানে ব্যবহৃত মেশিনের নিজে থেকেই শেখার ক্ষমতা থাকবে। আপাতদৃষ্টিতে পুরো জিনিসটি সরল মনে হলেও তেমনটা নয়, মূলত অনেকগুলো বিষয়কে একসাথে করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। যেমন- সবার প্রথমেই একজন রোগীর সাক্ষাৎকার নেয়া হবে এবং পাশাপাশি কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে।

    তারপর প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর্ব চলবে। যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পর কোন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে সেটা নির্ধারিত হবে। চিকিৎসা পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান এবং মনিটরিংয়ের দায়িত্ব থাকবে এসব মেশিনের উপর। মেশিনগুলো একজন রোগীর রোগের ইতিহাস, বয়স, লিঙ্গ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল, সেনসিটিভিটি, ডিএনএ সিকোয়েন্স এবং অসংখ্য ক্যাটাগরির তথ্য মজুদ রাখবে। যে পরিমাণ তথ্য একজন মানুষের মনে রাখা সম্ভবের বাইরে।

    ▪আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পাঠ্যক্রমে আছে আরো অনেক বিষয়। সেগুলোর মাঝে কিছু হচ্ছে প্যাটার্ন রিকগনিশন, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, রোবোটিকস, কম্পিউটার ভিশন ইত্যাদি।

    প্যাটার্ন অর্থ ধরন বা বৈশিষ্ট্য। সেটিকে চিহ্নিত করার বিদ্যাই প্যাটার্ন রিকগনিশন। একটি বস্তুর বৈশিষ্ট্যাবলী পর্যবেক্ষণ করে তাকে শ্রেণীভুক্ত করা নিয়ে প্যাটার্ন রিকগনিশন কাজ করে থাকে। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং বা এনএলপি, মানবজাতি এবং যন্ত্রসমাজ, এই দুইয়ের যোগাযোগের ভাষার মাঝে সামঞ্জস্য রাখাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই শাখার কাজ।

    রোবোটিকস শাখায় রোবট কিংবা ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট তৈরির কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর কম্পিউটার ভিশন কাজ করে যন্ত্রের দেখার ক্ষমতার উপর। কম্পিউটারের ইমেজ প্রসেসিং ক্ষমতা, ভিশন ক্ষমতা থেকে তথ্য সংগ্রহের দক্ষতা ইত্যাদি নিয়েই এর কারবার।

    ▪কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চর্চা বাড়ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও। কম্পিউটার বিজ্ঞানের বহু শিক্ষার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রে জায়গা করে নিচ্ছে এআই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদানে যুক্ত হচ্ছে এই বিষয়গুলো। আর সব জায়গায় অটোমেশনের কদর বাড়ার এই সময়ে এআই কতটা দরকারি, তা নিয়ে বাক্যব্যয় না করলেও চলে। এই সংক্রান্ত ওয়ার্কশপ আর সেমিনার আয়োজিত হয়ে থাকে, সেসবে অংশ নিয়েও কেউ চাইলে নিজের আগ্রহকে আরো অনেকটাই পাকাপোক্ত করে তুলতে পারে। আর অবশ্যই, নিজের ভালোলাগার বিষয় নিয়ে জ্ঞান থাকা উচিত পাঠ্যসূচীর বাইরেও। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মত চমৎকার বিষয় নিয়ে খানিক বাড়তি পড়াশোনা খুব একটা খারাপ ব্যাপার হবে না সম্ভবত!

    সোর্সঃ Roar.Media

    Sajjadul Islam Rakib 
    Campus Ambassador – TES
    NITER (10th Batch)

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed