টেক্সটাইল এর জগতে সিল্ক যে সব ফেব্রিক এর রানী তা আমরা সকলেই জানি। এর স্থায়ী রং, নমনীয়তা ও কোমলতার পাশাপাশি এর বাজার দর সিল্ক কে রানীর আসনে বসিয়েছে।অল্প কিছু প্রাকৃতিক ফাইবার এর মধ্যে সিল্ক একটি যা আমরা জীব থেকে পেয়ে থাকি । সব কিছু বিবেচনায় এর উচ্চ মূল্য আসলেই যথার্থ। তেমনই যথার্থ সকল ফেব্রিক এর রানী হওয়া।
তবে ক্ষতি কি যদি আমরা এমন ফেব্রিক তৈরি করতে পারি যার গুণাগুণ হবে প্রায় সিল্ক এর মতো?
এর সাথে সেই ফেব্রিক এর প্রোডাকশন কস্ট ও হয় সিল্ক এর থেকে অনেক কম?
হ্যাঁ, এমন এক ফেব্রিক নিয়ে আলোচনা করতে চাই যার নাম ভিসকোস। সিল্করই লো বাজেট ভার্সন হলো ভিসকোস। তাই প্রথমেই জেনে নেয়া যাক এই ফাইবার এর ইতিহাস।
ভিসকোস হলো প্রথম উৎপাদিত কৃত্রিম সিল্ক ফাইবার। এটি মূলত সেলুলোজিক ফাইবার। সিল্ক এর বিকল্প হিসেবে ১৯ শতকের শেষের দিকে এই ফাইবার তৈরি করা হয়। ১৬৪৮ সালে ইংরেজ প্রকৃতিবিদ রবার্ট হুক কৃত্রিম সিল্ক তৈরি এর জন্য একটি তত্ত্ব দিয়েছিল, ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত অনেক বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম সিল্ক তৈরির চেষ্টা করেও সফল হতে পারে নি। পরবর্তীতে ১৮৮৫ এবং ১৮৮৯ সালে দুই জন ফরাসি বিজ্ঞানী এই সিল্ক তৈরি করতে পারলেও গুনগত মানের জন্য প্রক্রিয়াটি অর্থনৈতিক ভাবে কার্যকর হয় নি। ১৮৯১ সালে ইংরেজ রসায়নবিদ চার্লস ফ্রেডরিক ক্রস এবং এডওয়ারজ্ জন বেভান ও তাদের সহযোগী
মিলে ” ভিসকোস” প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে ফাইবার টি তৈরি করে যা অর্থনৈতিক ভাবে খুব কার্যকর হয়।
এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে ভিসকোস ফাইবার তৈরি করা হয়।
ভিসকোস মূলত গাছের টুকরা বা cotton linters থেকে তৈরি করা হয়। পাইন, ইউক্যালিপটাস এর মতো দ্রুত বর্ধনশীল গাছ ব্যবহার করা হয়। বাঁশ থেকে ও এই ফাইবার তৈরি করা যায়।
** প্রথমে গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ করে সেগুলো কে
৭/৮×১/২×১/৪ ইঞ্চি আকারে ছোট ছোট টুকরো করা হয়।
**তারপর টুকরো গুলো কে কস্টিক সোডা দিয়ে ১৪ ঘণ্টা ফুটানো হয় এর ফলে সেলুলোজ সোডা সেলুলোজে পরিণত হয়, এবং এতে ৯০-৯৪% পিউর সেলুলোজ থাকে।
** সোডা সেলুলোজ গুলো কে পরিষ্কার করা হয় তারপর পাতলা পেপার শীট এ পরিণত করা হয়।
** পেপার শীট গুলো কে ছোট টুকরো করে কেটে
Shredder মেশিন এর মাধ্যমে ফাইন crumbs
পরিণত করা হয়।
**এরপর এই crumbs গুলো কে গ্যাভানাইজড ভেসেলে ২২°c তাপমাত্রায় ৩ দিন রেখে অক্সিডাইজ করা হয় যাকে এইজিং বলে।
** এইজিং করা সোডা সেলুলোজ এর সাথে কার্বন ডাই
সালফেট(10% wt of crumbs) মিশানো হয় ফলে
গাঢ় কমলা বর্ণের ঘন দ্রবন তৈরি হয় যা Sodium
Cellulose xanthate নামে পরিচিত।
** দ্রবনটিকে পাতলা করার জন্য এর সাথে পাতলা
কস্টিক সোডা ব্যবহার করা হয় ফলে Xanthate
দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং সোডিয়াম সেলুলোজ এর
পাতলা দ্রবন থাকে যা ভিসকোস লিকুইড নামে
পরিচিত।
** তারপর দ্রবনটিকে ৪-৫ দিন ১০-১৮°c তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তীতে ওয়েট স্পিনিং প্রক্রিয়ায় ভিসকোস ফাইবার তৈরি করা হয় ।
ভিসকোস এমন একটি ফাইবার যার গুনগত মান খুবই ভালো। ফাইবার টি খুবই মজবুত এবং হালকা ওজনের।
জাঁকজমকপূ্র্ন ফিনিসিং এবং নমনীয়তার জন্য এই
ফাইবার এর অবস্থান অনেক আগে। আরাম এর দিক থেকে ফাইবার টি অনেক টাই কটন এর মতো। ফাইবার টি কটন, স্পানডেক্স, পলিয়েস্টার এর মতো অন্যান্য ফাইবার এর সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে। এই ফাইবার এর রং শোষন ক্ষমতাও খুব ভালো তাই এই ফাইবার ব্যবহার করে অনেক সুন্দর, প্রাণবন্ত ফেব্রিক তৈরি করা যায়। গুণগত মান এতো ভালো হওয়া সত্ত্বেও এই ফাইবার দামে খুব সস্তা।
কিন্তু ফাইবারটির একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে এটি খুব সহজেই পানি শোষণ করে, এবং ভেজা অবস্থায় এর দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতা তুলনামূলক ভাবে কম তাই
এই ফাইবার দিয়ে সি-রোপ, ফিসিং নেট, নেট এবং এই ধরনের জিনিস তৈরি করা হয় না।
ফাইবারটির অন্যান্য গুণাবলী বিবেচনা করে এটি দিয়ে ফাইন ড্রেস, টেবিল ক্লথ, বেড কাভার, ট্রান্সপোর্ট ফার্নিসিং, চেয়ার কাভার, কুশন কাভার, ফিতা, সী বিচ ওয়ার, নাইট ড্রেস, স্পোর্টস ওয়ার, পর্দা তৈরি করা হয়।
Writer’s information
Name: Munthaha Alam Mumu
Semester : 2nd year, 1st semester.
Batch: 39
University : Ahsanullah University of science and Technology