আধুনিকতার আলোতে আলোকিত হয়নি এমন ক্ষেত্র খুজে পাওয়া দুষ্কর। ব্যবহার্য্য পোশাক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রের গগনে আধুনিকতা নামক তারাটি জল জল করে আলো জালিয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে মানব মনে। সেই সাথে নতুন নতুন উদ্ভাবন আধুনিকতা নামক প্রান্তরে এনে দিচ্ছে নবযাত্রার নিত্য নতুন ঠিকানা।পোশাকের রুচি সে যার যাই হোকনা কেনো,কিন্তু সকলের কাছে নিজের ব্যবহৃত পোশাক যে হতে হবে চমকপ্রদ এতে কমতি রাখতে চাননা কেউই।এই চাহিদা কে গুরুত্ব দিয়ে উদ্ভাবিত হয়েছে নতুন নতুন সব তন্তু,সেই সাথে উদ্ভাবিত হয়েছে হরেক রকমের আধুনিক সব নকশা। একটা সময় ছিলো যখন মানুষের কাছে পোশাক মানে ছিল শুধুই শরীর ঢাকার বস্তু কিন্তু এখন তা পরিণত হয়েছে ফ্যাশনে। এই ফ্যাশনের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে উদ্ভাবিত হওয়া নতুন এইটি ফাইবার নিয়ে আজকের আলোচনা।
আলোচনার শুরুতেই জানিয়ে দেই আজকের আলোচ্য বিষয় ” ক্যামেল উল”।উলের জগতে সম্ভাবনাময় নতুন এ ক্যামেল উল সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিত জানা যাক। শুরুতেই কিছু প্রাথমিক ধারনা নেয়া যাক।উটের উল বলতে সাধারণত উটের দেহ থেকে সংগ্রহকৃতপশমকে বোঝায়। বাক্ট্রিয়ান উট থেকে সাধারত এ পশম সংগ্রহ করা হয়।উক্ত ব্যাক্ট্রিয়ান উট সচরাচর এশিয়া,চায়না, তুরস্ক ও সাইবেরিয়ায় বসবাস করে। এছাড়াও মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, আফগানিস্তান, ইরান, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া থেকেও সংগ্রহ করা হয় এই উটের পশম বা উল । একটি প্রাপ্তবয়স্ক উট এর শরীর থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ১০ কেজি পশম বা উল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।সংগ্রহকৃত এ উল বা পশম গুলো গুণমানের দিক দিয়ে অনেক উন্নত হয়ে থাকে। উন্নত হওয়ার কারনে উটের পশমগুলো থেকে তৈরি করা হয় আভিজাত্য ও বিলাসবহুল সব টেক্সটাইল সামগ্রী।
এবার ক্রমান্বয়ে জানা যাক কিভাবে উটের পশম থেকে ফাইবার এবং তা থেকে টেক্সটাইল সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়।প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ধাপে ক্যামেল উল প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।ধাপ গুলো হলো সংগ্রহ, বাছাই, ডিহেয়ারিং, স্পিনিং এবং বুনন।উটের পশম সংগ্রহ করার পর তা বাছাই এর জন্য পাঠানো হয়।বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়াতে মোটা চুলগুলি সূক্ষ্ম, নরম চুলের থেকে পৃথক করা হয়ে থাকে।সংগ্রহের পর পশম গুলোকে ওয়াস করা হয় যাতে করে কোনও ময়লা বা ধ্বংসাবশেষ লেগে না থাকে । এরপরেই বাছাই করা এবং ধোয়া পশম গুলোকে ফাইবার হিসেবে প্রস্তুত এর জন্য পরবর্তী ধাপে স্থানান্তর করা হয়ে থাকে। উটের চুলের কিছু সাধারণত সেই সাথে উপযোগী গুনাবলি রয়েছে।উক্ত গুনাবলির জন্যই উটের পশম থেকে তৈরি ফাইবার অন্যান্য ফাইবার থেকে একে কিছুটা আলাদা উচ্চতা দান করেছে। উটের পশম এমন একটি ফাইবার যা থেকে প্রস্তুতকৃত পোশাক,পোশাকের অতিরিক্ত ওজন ছাড়াই শরীরে উত্তাপ ছড়ায় । উটের পশমের এই থার্মোস্ট্যাটিক বৈশিষ্ট্যর জন্যই উট চরম ঠান্ডা পরিস্থিতিতেও নিজেকে রক্ষা করতে এবং উত্তাপ ছড়ানো মরুভূমিতে নিজেদের শীতল রাখতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই তাই উটের চুল থেকে বোনা কাপড় তৈরি করার সময় এই বৈশিষ্ট্যগুলো কিছুটা তৈরিকৃত পোশাকে স্থানান্তরিত হয়।
উটের পশমগুলো সাধারণত দুটি কার্যকর উপাদান রয়েছে।যা ক্রমান্বয়ে, গার্ড হেয়ার এবং আন্ডারকোট। গার্ডহেয়ার বহিরাগত প্রতিরক্ষামূলক পশম, যা মোটা সেই সাথে নমনীয় হয়ে থাকে। আন্ডারকোট গার্ডহেয়ারের চেয়ে পাতলা এবং সূক্ষ্ম।আন্ডারকোর্ট পশম খুব নরম হওয়ায় এটি প্রায়শই কোট তৈরির জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে ইউরোপীয় দেশ গুলোতে।এছাড়াও উটের পশম বিলাসবহুল কম্বল তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।মঙ্গোলিওরা উটের পশম থেকে আকর্ষণীয় শীতের পোশাক এবং মাদুর তৈরি করে থাকে।পশ্চিমা দেশগুলোতে উটের পশম থেকে তৈরি পোশাক খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।দৈনন্দিন জীবনে তারা এই পশম থেকে গরম জ্যাকেট, ব্লেজার, স্কার্ট, সোয়েটার, স্কার্ফ, মাফলার সহ ঠান্ডা নিবারণের জন্য হাতমোজাও তৈরি করে থাকে।দিন দিন বিশ্বব্যাপি উটের পশম থেকে তৈরি বস্ত্রাদির জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
বিজ্ঞানের জাদুর ছোয়ায় আজ আমরা এমন কিছু দূর্লভ বস্তুকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যে পরিণত করেছি যাকিনা কল্পনাতীত। টেক্সটাইল গবেষক গণ দিনের পর দিনের উদ্ভাবন করে আসছে মানব সভ্যতার জন্য অকল্পনীয় সব টেক্সটাইল সামগ্রী। সমুদ্র গর্ভের “সি সিল্ক” থেকে শুরু করে উটের পশম সব কিছু থেকেই তারা তন্তু প্রস্তুত করে পোশাকের জগতে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা।সময়ের পরিক্রমায় পোশাক শিল্প উত্তর উত্তর সমৃদ্ধ সেই সাথে বৈচিত্র্যময় হয়ে বিরাজমান হবে এই ধরনীতে এটিই মূখ্য চাওয়া সকলের।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া
- মুনতাসির রহমান
- Department Of Textile Engineering
- Batch:201
- BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY