বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ এবং এই দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টেক্সটাইল বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যা প্রতিবছর দক্ষ বস্ত্র প্রকৌশলী এবং টেক্সটাইল শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশের চাকরির বাজারে একক আধিপত্য করছে।
বুটেক্স থেকে প্রতিবছর প্রায় ৬০০ জন বস্ত্র প্রকৌশলী দেশের বিভিন্ন লিডিং ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে প্রবেশ করছে। তাদের মধ্যে অনেকে আবার নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান ব্যাবহার করে উদ্যোক্তা হয়ে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
আজকের এই বুটেক্সের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯২১ সালে। ঢাকার নারিন্দাতে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলের সময় টেক্সটাইলের উপর কারিগরি শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘ দি ব্রিটিশ স্কুল অফ উইভিং ‘ । পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ ইস্ট বেঙ্গল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ‘। ওখানে তখন টেক্সটাইল টেকনোলজির উপর ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলের অবসান ঘটার পর ১৯৫০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ ইস্ট পাকিস্তান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট ‘। সাত বছর পর ১৯৫৭ সালে নারিন্দা থেকে ঢাকার তেজগাঁও শিল্পনগরীর বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এর নাম পরিবর্তন করে ‘ বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট ‘ রাখা হয়।
পরিবর্তিত ১৯৭৮ সালে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চারবছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রি প্রদান শুরু করে এবং ‘দি কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ হিসেবে পুননামকরণ করা হয়। দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে একে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুনরায় নামকরণ করেন এবং ২০১১ সালের ১৫ মার্চ একে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চালু করেন।
১১.৬৭ একর জমির উপর অবস্থিত এই ক্যাম্পাসের রয়েছে বিশাল অবকাঠামোর ৮৬,৮০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে রয়েছে অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিল্ডিং , ১৫ টি ওয়ার্কশপ এবং ৮৪,০০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে রয়েছে ল্যাবরেটরি সমূহ।
স্নাতক পর্যায়ে ৫ টি অনুষদের আওতায় ১০ টি বিভাগে শিক্ষার্থীদের বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয় বুটেক্সে।
- টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে ২ টি বিভাগ হলো:
১) ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং
২) ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং - টেক্সটাইল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে ৩ টি বিভাগ হলো:
১) ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং
২) ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
৩) এনভায়রনমেন্ট সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জনিয়ারিং - ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে ২ টি বিভাগ হলো:
১) অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং
২) টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন - টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে ২ টি বিভাগ হলো:
১) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট
২) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং - সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে ১টি বিভাগ হলো:
১) টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স - বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্যনুযায়ী বুটেক্সে প্রায় ১৪০ জন শিক্ষক রয়েছে যেখানে শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত হলো ১:১৮। তাছাড়া প্রতিবছর একজন শিক্ষার্থীর পিছনে বুটেক্স প্রায় ১.১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে থাকে । এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বই এবং জার্নাল সহ প্রকাশনা রয়েছে প্রায় ১১,৪৬২ টি।
- তাছাড়া বুটেক্সে শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত কিছু সংগঠন/ক্লাব রয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরাসরি যুক্ত রয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফান্ডিং ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে ক্লাবগুলোকে। ক্লাবগুলো হলো:
১) বুটেক্স ডিবেটিং ক্লাব
২) বুটেক্স ক্যারিয়ার ক্লাব
৩) বুটেক্স বিজনেস ক্লাব
৪) বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি
৫) বুটেক্স সাহিত্য সংসদ
৬) বুটেক্স স্পোর্টস ক্লাব
৭) বুটেক্স রেডিও
৮) বুটেক্স ইসলামিক সোসাইটি
৯) বুটেক্স ইয়ুথ ডেভেলোপমেন্ট ক্লাব
১০) আর্টেক্স
১১) বুটেক্স অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব
১২) একাত্তর সাংস্কৃতিক সংঘ
১৩) বুটেক্স স্পিনার্স ক্লাব
১৪) ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপ ক্লাব
১৫) বাঁধন বুটেক্স ইউনিট
তাছাড়া সারা বাংলাদেশে বুটেক্স অধিভুক্ত ১০ টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে যেখানে প্রায় ১৮৬ জন শিক্ষক রয়েছেন।