মার্চেন্ডাইজিং অনেকের জন্য স্বপ্ন,অনেকের কাছে অজানা কোনো এক অধ্যায় আবার অনেকের জন্য কৌতুহলের আরো একটি বিষয়। আজকের আলোচনায় আমরা আপনাকে সেই মার্চেন্ডাইজিং সম্পর্কে কিছুটা জানানোর চেষ্টা করবো।
আপনি কি আপনার ব্যবসাকে রপ্তানীমুখী করতে চাইছেন? মার্চেন্ডাইজিং হলো এমনই একটি বিষয়বস্তু যা এই সমস্যায় আপনাকে সহায়তা করতে পারে। এমনকি মার্চেন্ডাইজিংকে “Backbone of the Export Garments Business” বলা চলে। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে মার্চেন্ডাইজার ছাড়া বিদেশ থেকে অর্ডার পাওয়া খুবই দূর্লভ এবং অকল্পনীয়। মার্চেন্ডাইজিং-এর প্রক্রিয়াটি ৩ টি বিষয়বস্তু জড়িত। যথা:
১। কোম্পানি, যা কিনা কাস্টমারদেরকে নির্দিষ্ট কোনো পন্য বন্টনের ক্ষমতা রাখে। মার্চেন্ডাইজিং এমন একটি ব্যবস্থা যা কোনো খুচরা বা পাইকারি স্তরের ক্রেতার কাছে তার কোম্পানির পন্যগুলো বিক্রয়ের আবেদন রাখে। এই পর্যায়ে তারা তাদের পন্যের গুনগত মান, সুবিধাসমূহ, সব মিলিয়ে পন্যের প্রদর্শন এমন ভাবে রাখে যেন রটি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে।
২। ক্রেতা, যারা কোনো কম্পানির মার্চেন্ডাইজারদের লক্ষবস্তু।
৩। মার্চেন্ডাইজার, যারা কোম্পানির পন্যের সাথে ক্রেতার সেতুবন্ধনের কাজে নিযুক্ত থাকে।
মার্চেন্ডাইজিং সাইকেলে প্রভাব ফেলে এমন কিছু বিষয়:
মার্চেন্ডাইজিং সাইকেলে দেশ থেকে দেশে ভিন্নতা রয়েছে এমনকি অনেক সময় দেশের অভ্যন্তরেও আরো ক্ষুদ্র একক পরিমান এলাকায় এটি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত সপ্তাহিক ছুটি, ঋতুবৈচিত্র, স্থানীয় সময়, খ্যাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় বিশ্বাসসহ আরো অনেক বিষয়বস্তু এই ভিন্নতা আনে। উদাহরণস্বরূপ: মরুভূমিতে কখনও শীতপ্রধান দেশের পোষাকের প্রয়োজন পড়বে না। দারিদ্রপ্রধাণ দেশে দামী গাড়ি, বিলাশবহুল রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করা ফলদায়ী হবে না।
মার্চেন্ডাইজিং সাধারণত ৫টি পদক্ষপ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায়, যেগুলো হচ্ছে;
১। সঠিক পন্য, ২। সঠিক জায়গা, ৩। সঠিক সময়, ৪। সঠিক দ্রব্যমূল্য এবং ৫। সঠিক প্রশ্ন।
মার্চেন্ডাইজাররা সবসময় তাদের ক্রেতাদের সাথে সম্পর্কীত যে কোনো কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকে। ক্রেতারা কি নিতে আগ্রহী, কেনো আগ্রহী, কোথায়,কখন,কিভাবে নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে, তাদেরকে আরো ভালো কি কি সার্ভিস দেওয়া যাবে, তাদের সাধ্যের ভিতর সর্বোচ্চ কি পরিমাণ দ্রব্য বা সেবা প্রদাণ করা যাবে সব কিছু তারা রক্ষণাবেক্ষণ করে। মার্চেন্ডাইজিং এর কাজের গঠন দেখলে দেখা যাবে:
১) ডিজাইন সেটিং
২) বিক্রয় মূল্যের যথাযথকরণ
৩) সোর্সিং
৪) অর্ডার প্লেসমেন্ট
৫) কাঁচামালের উৎসের সন্ধান সহ পন্যের প্রস্তুতকরণ
৬) প্রোডাকশন ফলো আপ
৭) শিপমেন্ট
৮) যথাযথ ক্রেতার কাছে পন্যের বন্টণ
৯) ক্রেতাদের অধিকারের প্রতি সজাগ দৃষ্টিপাত
১০) বাজারে পন্যের চাহিদা বেশি থাকলে তার সদ্ব্যবহার করা
একটি কোম্পানিতে মার্চেন্ডাইতজিং ডিপার্টমেন্টের গঠণ: এর গঠণ বহু ভাবে সম্ভব, সাধারণ ভাবে এটি গঠিত হয়- ১) গ্রাহক ২) পন্য ৩) ভৌগোলিক অবস্থান এর ৩টি প্রভাবকের কথা মাথায় রেখে।
গ্রাহকের ভিত্তিতে:
মার্চেন্ডাইজাররা যথাযথ ক্রেতাদের ধরে রাখে এবং তারাই তাদের গ্রাহকদের হয়ে কোম্পানিগুলোতে প্রতিনিধিত্ব করে। IKEA, LI &FUNGs, WALMART, TESCO ইত্যাদি কোম্পানিগুলো এই জাতীয় ডিপার্টমেন্টের গঠনমূলক কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে।
পন্য/উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে:
১) ইয়ার্ন মার্চেন্ডাইজিং ২) ফেব্রিক/এক্সেসরিজ মার্চেন্ডাইজিং ৩) প্রোডাকশন মার্চেন্ডাইজিং
মার্চেন্ডাইজারেদের কাজের স্থান বা ক্ষেত্রসমূহ:
১/ উন্নয়ন
২/ সাপ্লাইয়ারদের সোর্সিং
৩/ কস্টিং
৪/ অর্ডার প্লেসমেন্ট
৫/ মালামাল সরবরাহ
৬/ মালামাল চিহ্নিত করা
৭/ ব্যবসায় সম্প
র্কীত লিখিত ডকুমেন্ট অনুসরণ করা
৮/ প্রোডাকশন ও গুণগত মান অনুসারে কাজ রক্ষণাবেক্ষন করা
৯/ বাল্ক প্রোডাকশনের জন্য স্যাম্পল কালেক্ট করা
১০/ পন্যের উৎপাদন, উৎপাদনশীলতা ও গুনগত মান নিশ্চিত করা
১১/ শিপমেন্টের ব্যাপারে সব সময় সচেতন থাকা
কাজের ধরণ অনুসারে মার্চেন্ডাইজাররা হতে পারে, ১) ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজার ২) এক্সপোর্ট মার্চেন্ডাইজার ৩) রিটেইল মার্চেন্ডাইজার
ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজার: তারা ট্রেন্ডিং ফ্যাশন, পন্যের উন্নয়ন, পন্যের বিকাশের সাথে জড়িত থাকে।
এক্সপোর্ট মার্চেন্ডাইজার: মূলত তারা এপারেল এক্সপোর্ট মার্চেন্ডাইজিং এর কাযে নিয়জিত থাকে। তাদের মূল কাজ ক্রেতা জোগাড় করা, তাদের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখা এবং পন্যের শিপমেন্টের পর ক্রেতার প্রতিক্রিয়া পাওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষনিক যোগাযোগ স্থাপন রাখা।
রিটেইল মার্চেন্ডাইজার: তারা সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পন্য বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকে। অর্থাৎ, তারা ফ্যাক্টরির আশেপাশের এলাকা থেকে যথা সম্ভব সর্বোচ্চ দূরে (অনেক সময় ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য না রেখে) স্বল্প বা যথাযথ লাভে পন্যের প্রদর্শনী অথবা বিক্রি করে থাকে। তারা হোল সেলার এবং ক্রেতাদের মধ্যবর্তী মাধ্যম হিসেবেও অনেক সময় কাজ করে থাকে।
একজন এক্সপোর্ট মার্চেন্ডাইজারের কর্তব্য:
১) যোগাযোগ ২) পূর্বাভাস ৩) সোর্সিং এবং ক্রয় ৪) সন্ধিস্থাপন করা ৫) মূল্য নির্ধারণ ৬) পরিকল্পনা ৭) অনুসরণ ৮) সিদ্ধান্ত প্রদাণ ৯) নিয়ন্ত্রণ ১০) সমন্বয় সাধণ
একজন গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজারের দায়িত্ব এবং কর্তব্যসমূহ:
১) ক্রেতাদের থেকে পাওয়া পন্যের ফিডব্যাকের RCVD পর্যালোচনা করা,
২) প্রোডাক্ট ডেভলপমেন্ট টিমাকে ক্রেতার দ্বারা নির্দেশিত পরিবর্তনগুলো বুঝানো,
৩) ক্রেতাদেরকে কোম্পানির কাজের স্বচ্ছতার ব্যাপারে যতদূর সম্ভব নিশ্চিন্ত রাখা,
৪) নির্ধারিত সময়ের আগে পন্য ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত রাখা,
৫) সব রকম মূল্য নির্ধারণ করা,
৬) ক্রেতাদের সাথে পন্যের দামের ব্যাপারে সন্ধিস্থাপন করা,
৭) স্যাম্পলের ভালো ফিডব্যাক পাওয়ার পর মূল পন্যের দাম ও গুনগত মান অক্ষুণ্ণ রাখান।
অর্ডার নিশ্চিতকরণ:
১) কারখানার সক্ষমতা মাথায় রেখে ক্রেতার কাছে পন্য প্রদানের তারিখ ঠিক করা,
২) টেকনিক্যাল প্যাড বা অর্ডার শিটের সমস্ত বিবরণ যাচাই করা,
৩) পন্যের ব্যাপারে যে কোনো প্রকারের পরামর্শে ক্রেতার স্মরণাপন্ন হওয়া,
৪) প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে অর্ডার শিট ক্রেতার নির্দেশ মোতাবেক বুঝিয়ে দেওয়া।
Writer Information:
Name: Deep Sarkar
Institute: Primeasia University
Batch: 182
E-mail: [email protected]
Contact: +880 1993-048156
দারুন হয়েছে