“ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বোয়াল মাছের দাড়ি,
ইয়াহিয়া খান ভিক্ষা করে, শেখ মুজিবের বাড়ি।”
তখনকার দিনের গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের এক সরল প্রবচন। আর এরকম প্রতিবাদ হবে নাই বা কেন? আমরা যে মাছে ভাতে বাঙালী। আচ্ছা মাছ তো আমরা প্রতিদিনই খাই,
এই মাছ ধরার সাথেও কিন্তু টেক্সটাইল ফাইবার ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে। জ্বি হ্যাঁ,মাছ ধরার জালের কথাই বলছি। আসুন জেনে নেই এই Fishing net এ ফাইবারের অবদান।
মাছ ধরার ইতিহাস প্রায় ৪০ হাজার বছর পুরনো। ৪০ হাজার বছর আগে পেথিওলিক যুগে মাছ ধরার প্রমান পাওয়া যায়।প্রাচীন মানুষরা কোঁচ,বল্লম,বড়শি দিয়ে মাছ ধরত।তারপর বেশি পরিমাণ মাছ আরহনের জন্য জালের ব্যবহার শুরু করে। প্রাচীন মিশরীয়রা নীল নদে woven net ব্যবহার করে মাছ ধরত।ক্রমে ক্রমে অনেক রকম জালের আবিষ্কার হয়। মানুষ এখন জাল ব্যবহার করে গভীর সমুদ্র থেকে বিশাল বিশাল হাঙর ও শিকার করছে।
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। যেহেতু মাছে ভাতে বাঙ্গালী আমরা তাই মাছ ধরার জাল সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা উচিত।
মাছ ধরার কিছু জাল এর নামঃ
ফাঁস জাল(Gill net), বেড় জাল(seine net), তোলা জাল(Lift net), ট্রল নেট(Trawl net), ঝাঁকি জাল(Cast net), বুচনা জাল(Fyke net), সুতি জাল( Set bag net), ইত্যাদি।
যেসব তন্তু ব্যবহার করা হয়ঃ
প্রাকৃতিক তন্তু কটন(Gossypium গণ), হেম্প(Cannabias গণ), সিসাল (Agave গণ)ইত্যাদি ও কৃত্রিম তন্তু(নাইলন, টেরাইলন, ভিনাইল) ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক তন্তু থেকে তৈরী জাল দ্রুত পঁচে যায় কিন্ত কৃত্রিম তন্তু যেমন নাইলন থেকে প্রস্তুতকৃত জাল যেমন বহু দিন টিকে তেমনি সংরক্ষণে সুবিধা এবং মিঠা ও নোনা উভয় পানিতে ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন এক সময় লিনেন থেকে ঝাঁকি জাল তৈরী হলেও বর্তমানে সিনথেটিক ফাইবার যেমন নাইলন মনোফিলামেন্ট বা মাল্টিফিলামেন্ট জাল বুনন করা হয়ে থাকে।
নাইলন থেকে প্রস্তুতকৃত জালের মধ্যে রয়েছে ঝাঁকি জাল, বুচনা জাল, বোডা জাল, ফাঁস জাল ইত্যাদি।
মাছ ধরার জাল প্রধানত দুই প্রকারঃ
গিঁটযুক্ত ও গিঁটবিহীন জাল। জালের ফাঁশের আকার(mesh size) নির্ভর করে কোন আকারের মাছ ধরা হবে তার উপর। যেমন ফাঁশ যদি বড় আকারের হয়ে থাকে তাহলে ছোট মাছ তা ভেদ করে চলে যাবে ফলে ওই ফাঁশের জাল দিয়ে ছোট মাছ ধরা যাবে না।
কারেন্ট জালঃ
যাকে ফাঁস জাল ও বলা হয়ে থাকে। ইংরেজি নাম মনোফিলামেন্ট ফিশিং নেট। এটি এতো কম পুরুত্বের যে মাছ যখন আটকা পড়ে তখন বৈদ্যুতিক শক লাগার মতো কাপতে থাকে তাই এর নাম কারেন্ট জাল। কারেন্ট জাল দিয়ে নদী, খাল-বিল থেকে যে পরিমাণে পোনা,ডিমওয়ালা মাছ, জাটকা নিধন করা হচ্ছে অচীরেই দেশে দেশীয় প্রজাতির মাছের সংকট দেখা দিবে। ২০০২ সালে সংশোধিত মৎস সংরক্ষণ আইনে কারেন্ট জাল উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও এখনও কারেন্ট জাল দিয়ে মৎস নিধন চলছে। কারেন্ট জাল, বেড় জাল, ভেসাল জাল, সুতী জাল, ঝাঁকি জাল মাছ ধরার জালের মধ্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর জাল।
সাম্প্রতিক তথ্য:
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যা প্রায় ৩০০। বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি ৭০।
মাছ ধরার অনেক নীতিমালা সরকার প্রণয়ন করেছে। যেমনঃকারেন্ট জাল নিষিদ্ধ, নির্দিষ্ট সময়কালে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা।
আমাদের সকলের উচিত এসব নীতিমালা মেনে চলা।
মৎস্য মারিব,খাইব সুখে”-সুখী ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ প্রাচীন বাংলার লোকেমুখে বহুল প্রচলিত প্রবাদ। মাছ শিকারের কতশত গল্প যে বহন করে চলছে বাঙালির জীবন!বাঙালি ও মাছ একে অন্যের পরিপূরক। মাছ নিয়ে বাঙালির মনের কোণে আছে তীব্র আবেগ ও ভালোবাসা।
একজন বাঙালি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেনো, মাছ তাকে কাছে টেনে নিবেই। ”মাছে-ভাতে বাঙালি” যেন বাঙালির জীবনের ঐতিহ্য বহন করে।আর তাই তো মাছ ধারার বিভিন্ন পদ্ধতি ও জালের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে।
তথ্যসূত্র
উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিসংখ্যান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্র, বিদেশি জার্নাল
ebookbou.edu.bd
কালের কন্ঠ, Daily bangladesh
Writer information:
Rebeka Sultana Setu
Sharmin Maktum
Rawshan Tabassum Darish
1st batch
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College,pirganj, Rangpur.