টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে আরেকটি বৃহৎ বাজার হলো গার্মেন্টস স্টক লট।
মূলত রপ্তানি বা এক্সপোর্ট নির্ভর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে বিভিন্ন সময়ে অনেক পোশাক স্টক হিসাবে জমা পরে,যেগুলোকে গার্মেন্টস এর ভাষায় স্টক লট বলে।বায়ারের কাছে পোশাক গুলো না পৌছালে সেগুলো স্টক লট হয়ে যায়। শিপমেন্ট ক্যান্সাল, শিপমেন্ট এ দেরি, এলসি সমস্যা, কন্টিনিউয়াস রি-চেক এবং অন্যান্য কারণে গার্মেন্টেস গুলোতে স্টক লট জমা হয়। আর এসব জমা হওয়া স্টক লট আইটেম গুলো দেশের লোকাল মার্কেট ও স্টক লট ব্রোকার দের কাছে নির্ধারিত মূল্যের তুলমায় অনেক কম দামে বিক্রি করা হয়। আর এইভাবেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে এসব স্টক লট পণ্য কে ঘিরে ব্যবসা গড়ে উঠেছে।
স্টক লটের ধরণ:
গার্মেন্টস থেকে বিভিন্ন ভাবে স্টক লট হওয়া প্রোডাক্ট গুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। পরিমাণ এবং কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে এই ক্যাটাগরি বিভক্ত। পরিমান গত দিক থেকে, কোনো গার্মেন্টেসে স্টক লট হওয়া সবগুলো পোশাক যদি বিক্রয় হয় তখন তাকে লং বা ফুল কোয়ান্টিটি বলা হয়, আর আংশিক বিক্রয় হলে সেক্ষেত্রে তাকে শর্ট কোয়ান্টিটি বলা হয়।
আবার অনেক স্টক লট রিজেক্টেড বা মিক্সড কোয়ালিটির থাকে সেগুলো বায়ার দের নির্ধারিত মূল্যের থেকে অনেক কম দামে বিক্রয় করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে ফুল কোয়ান্টিটি অথবা বৃহৎ পরিসরে ক্রয় করতে হয়।আবার যেসব স্টক লট প্রোডাক্ট ডিফেক্টলেস বা ইন্টেক্ট অর্থাৎ শিপমেন্টে দেরি বা এলসি সমস্যা অথবা অন্য কোনো কারণে বায়ারের কাছে পৌঁছাতে পারেনি সেসব প্রোডাক্ট বায়ারের নির্ধারিত মূল্যের কাছাকাছি অথবা রিজেক্টেড স্টক লট আইটেম অপেক্ষা অনেক বেশি মূল্যে বিক্রয় করা হয়।আর এ ধরনের স্টক লট প্রোডাক্ট সাধারণত শুধু বিভিন্ন বাইং হাউজে পাওয়া যায়, মার্কেট গুলোতে তেমন একটা পাওয়া যায় না, এবং অনেক জায়গা থেকেই এসব প্রোডাক্ট অনেক শর্ট কোয়ান্টিটিতে নেয়া যায়।
বাজার সম্ভবনা ও সার্বিক অবস্থা:
বাংলাদেশে স্টক লট বাজার একটি সম্ভবনাময় বাজার। দেশে এবং দেশের বাইরে এসব প্রোডাক্টের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। মূলত কম মূল্য এবং এক্সপোর্ট এর প্রোডাক্ট হওয়ায় স্টক লট প্রোডাক্টগুলোকে ঘিরে অনেক ক্রেতাদের বার্তি আগ্রহ থাকে। দেশে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, ফেসবুকে বাই-সেলিং গ্রুপ গুলো জনপ্রিয় হওয়ার দৌলতে এখন অনলাইনে রিজেক্টেড, মিক্সড লট, ফুল ফ্রেশ ইত্যাদি ধরনের স্টক লট প্রোডাক্ট ব্যাবসা দিন দিন বড় হচ্ছে। অনলাইন প্রোডাক্ট এর সিংহ ভাগ লেনদেন হয় ওয়াটস এপ যোগাযোগ এর মাধ্যমে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ এর উন্নতির কারণে এসব সোসাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসা মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় অনলাইনে এই বাজার ও এত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া অফলাইনে স্টক লট কে ঘিরে অনেক হোলসেল ও রিটেইল মার্কেট, বাইং হাউস, স্টক লট হাউস, গোডাউন গড়ে উঠেছে। দেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজিপুর, চিটাগং, আশুলিয়া ইত্যাদি জায়গায় স্টকলট এর বৃহৎ মার্কেট গুলো হলো বঙ্গবাজার, সিটি প্লাজা, আশরাফ সেতু মার্কেট, গাজিপুর কোনাবাড়ি, আশুলিয়ার জামগড়া ইত্যাদি। এসব মার্কেটের অনেক জায়গায় রিজেক্টেড ও মিক্সড লটের প্রোডাক্ট টিশার্ট, শার্ট,প্যান্ট ৫০-১০০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যায় যেসব সাধারণত মধ্যবিত্তের ক্রেতারা খুচরা মার্কেট থেকে ৮০০-১০০০ বা অনেক ক্ষেত্রে আরো বেশি মূল্যেও কিনে থাকে! তবে এ ধরনের প্রোডাক্টগুলোতে মাঝে মাঝে বেশি রিজেকশন থাকে যেগুলো ক্রেতারা নিতে চায় না, এজন্য এ ধরণের প্রোডাক্ট বড় বড় কোয়ান্টিটিতে বিক্রি হয় যার মধ্যে কম-বেশি রিজেকশন মিক্সড থাকে।
আর ফুল ফ্রেশ বা কোয়ালিটি চেক প্রোডাক্ট গুলো নরমালি বিভিন্ন বাইং হাউজে বিক্রি হয়, এছাড়াও অনেক মার্কেটেও মাঝে মাঝে পাওয়া যায়।এসব প্রোডাক্ট এর রিজেক্টেড বা মিক্সড লটের চেয়ে বেশি। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় ৯ নাম্বার সেক্টরে, আজিমপুরে, আশরাফ সেতু মার্কেটে, মিরপুর ১০ এ বিভিন্ন বাইং হাউস, স্টক লট হাউস, হোলসেল দোকান, গোডাউন ইত্যাদি জায়গায় ফ্রেশ স্টক লট আইটেম পাওয়া যায়।
সাধারণত বাইং হাউজ থেকে ফ্রেশ স্টক লট এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্নে ২৮০-৩০০ বা তার বেশি মূল্যে ফ্রেশ শার্ট, সর্বনিম্ন ৩৫০ বা তার বেশি মূল্যে ডেনিম জিন্স, ২৫০ বা তার বেশি মূল্যে টুইল প্যান্ট হোলসেলে পাওয়া যায়। আবার ব্র্যান্ড এর উপর ভিত্তি করেও মূল্য নির্ধারিত হয়। এডিডাস, রুকিস, লিভাইস, টমি, টম টেইলর ইত্যাদি ব্র্যান্ডের স্টক লটের চাহিদা অনেক। দেশের বাইরের থেকে স্টক লট প্রোডাক্ট এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা আফ্রিকান রা, রাজধানীর বঙ্গবাজারে অহরহ আফ্রিকান বায়ারদের আনাগোনা দেখা যায়।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সাবধানতা:
স্টক লট একটি সম্ভবনাময় ও লাভজনক বাজারের সাথে সাথে ব্যবসা হিসাবে ঝুকিপূর্ণও।কারণ এই ব্যবসায় প্রতারণার ঘটনা অহরহ ঘটে। ফুল ফ্রেশের নামে রিজেক্টেড, হাই কোয়ালিটির জায়গায় লো কোয়ালিটি বা কোয়ান্টিটিতে হের-ফের সহ বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে এই ব্যবসায়। এছাড়া অনেক স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই ব্যাবসায় যুক্ত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যবসায়ীক লেনদেনে ভায়োলেন্স দেখা যায়। নতুন উদ্যোক্তা হিসাবে কখনোই শুরুতে বড় কোয়ান্টিটির প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যাবসা করা উচিৎ নয় এবং এই লেনদেনের ক্ষেত্রে স্টক লট ব্রোকার দের যথাসম্ভব এভোয়েড করতে হবে। নির্দিষ্ট হাউজ বা মার্কেট এর দোকান অথবা অনলাইন হলে ওয়েবসাইট আছে এমন জায়গায় প্রোডাক্ট কেনা বেচা করতে হবে এবং সবসময় সাথে কিউসি এর জন্য লোক রাখতে হবে।
Writer information:
Mehedi Dipto
Primeasia University
Batch-181