যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ,আধুনিক হচ্ছে মানুষ ,যান্ত্রিকতার সাথে বাড়ছে সখ্যতা ,চাকচিক্য আর জাঁকজমকতায় নিজেকে হারানোর লোভ এখনকার মানুষ কোন মতেই হাত ছাড়া করতে চায় না । এই আধুনিকতার ধারায় বাংলাদেশও বিশ্ব দরবারে সকলের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে ।তবে আধুনিকতার ছোঁয়া যতই লাগুক না কেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলার উঁচু শ্রেণীর এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা বাংলার সেকেলে গ্রাম্য সাধারণ মানুষের সহজ জীবন যাত্রাতে হারিয়ে যেতে চায় যান্ত্রিকতার কোলাহোল থেকে বেরিয়ে । যেমন ধরুন নববর্ষেও বাংলার দারিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা পান্তা খেতো ,মূলত সকাল বেলা পান্তা ছিল গ্রাম বাংলার মানুষের চিরায়াচরিত রূপ কিন্তু আজ তা হয়ে গেছে ধনী আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নতুন বছর উদযাপনের আধুনিকতার রূপ স্বরূপ । ঠিক তেমনি এক সময় গ্রাম বাংলার একটি অতি সাধারণ চিত্র ছিল সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে খোলা মাঠে হাট বসা । সেই হাটে পাওয়া যেত রোজকার ব্যবহার্য সামগ্রী থেকে শুরু করে , পরিহিত কাপড় সামগ্রী । সেই হাট আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় । তবে আজও শহরে হাট বসে সেই গ্রাম বাংলার সাধারণ হাটের মতো করে না হলেও হাটের আমেজ ঠিকই থাকে । শহরের ধনী আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা থাকে সেই হাটের ক্রেতা।
এমনি এক শহুরে ধারার হাট বসেছে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানার সাওরাইদ বাজারে। হাটটি ৬ জানুয়ারি,২০২১ তারিখ, বুধবার শুরু হয়।আর এখন থেকে প্রতি বুধবার নিয়মিত হাট বসবে সাওরাইদ বাজারে। প্রথম দিন হলেও সেদিন হাটে বেশ ভালোই জনসমাগম ছিল। প্রায় ৬০ টার মতো দোকান বসেছে হাটে। এই হাট সম্পর্কে অভিমত জিজ্ঞেস করা হলে একজন বিক্রেতা মিরাজবাবু বলেন, “করোনার সময় দোকান গুলোতে কেনা- বেচা একবারেই কম,সেই তুলনায় এইরকম অস্থায়ী হাটে আমরা কাপড় বিক্রি করতে পেরে খুবই লাভবান হচ্ছি ।এজন্য যারা এটার আয়োজন করেছেন তাদের ধন্যবাদ এবং যারা কাপড় কিনতে এসেছেন তাদেরও ধন্যবাদ।আমরা চাই এরকম হাটের ব্যবস্থা সারা বাংলাদেশেই করা হোক ।”
সাওরাইদ বাজার হাটে সেদিন দেখা মেলে বিভিন্ন ধরনের কাপড়(ভয়েল,পপলিন) ,লুঙ্গি ,গামছা ,বিছানার চাদর,বোরকা, ওড়না, টি শার্ট ছাড়াও আনুষাঙ্গিক আরো অনেক কিছু। হাটে কম মূল্যে ভালো মানের সকল সামগ্রী এক সাথে পাওয়া যায় বলে ক্রেতা সমাগম বেশী হয় এই ধরনের হাটে। গ্রাম বাংলার সাধারণ জীবন ব্যবস্থার অতি সাধারণ রূপ ছিল এই হাট তবে আজ আধুনিকতার মাঝে হাট সেকেলে হয়ে গেলেও আজও বাংলার মানুষের জীবনযাত্রার রূপকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে এই হাট । যদিও হাট আজ বিলীন তবুও এই হাট আমাদের ঐতিহ্য সরূপ । সীমিত পরিসরে হলেও যদি সারা বাংলাদেশে সাওরাইদ বাজারের মতো হাটের আয়োজন করা হয় তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে আমাদের আদি ঐতিহ্য টিকে থাকবে গ্রাম বাংলার অতি সাধারণ রূপ যা বাংলার ঐতিহ্য স্বরূপ ।
Writer information:
Abida Ferdousi
Department of Textile Engineering,
BGMEA University of Fashion &Technology (BUFT)