ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এই অঞ্চলে পাটের চাষ হলেও এখানে প্রথম পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালের মাঝামাঝিতে নারায়ণগঞ্জে,বেসরকারি পরিচালনায় প্রতিষ্ঠিত এই মিলটির নাম ছিলো বাওয়া পাটকল। পরবর্তীতে এই সময়েই একই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী পাটকলের এবং এর পরপরই কয়েক বছরের মধ্যে গড়ে ওঠে অসংখ্য শিল্প কারখানা, ১৯৬০ এ যার সংখ্যা ১৬টি ও ১৯৭১ সালে যা দাঁড়ায় ৭৫টিতে।
সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত নানা চড়াই-উতরাই পার করে এখনো টিকে আছে এই শিল্পটি। আজও বিশ্বের অন্যতম পাট রপ্তানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ।
যেহেতু পাটের তৈরি কাপড় তুলনামূলক গরম তাই শীতপ্রধান দেশে এর সমাদর কিছুটা বেশিই। পাটের তৈরি পোশাক নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। বর্তমানে পাটের তৈরি শাড়ি যথেষ্ট নাম কুড়িয়েছে। এছাড়াও পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবির কাপড়, জিন্স, পর্দার কাপড়, স্যুটের কাপড়, প্যাকিং সরঞ্জাম, পাটের তৈরি ব্যাগ, টব, জুয়েলারি, খেলনা, ম্যাটস, স্যান্ডেল, ব্যাসকেট প্রভৃতি। পাট গাছ বড় দেখতে হলেও এর ফাইবার ছোট হওয়ায় এ থেকে সুতা তৈরির কাজ খুব একটা সহজ না। পাট থেকে সুতা বানানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এক ধরনের সুতা তৈরিতে দেড় বছরের বেশি সময় লাগে। পাটের সূক্ষ্ম আঁশ বিভিন্ন রাসায়নিক এর সাথে মিশিয়ে সাদা করে তা বিভিন্ন অনুপাতে অন্য তন্তু এর সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নতুন সুতা।
পরীক্ষামূলক নতুন সুতার স্থায়িত্ব ও ব্যবহার উপযোগিতা নজরে পড়ার মতো।পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী জান্নাতুল বাকি মোল্লা ভাষ্যমতে ৩০% ডিসকচ, ৭০-৮০% জুট এবং কটন এই তিন এর সমন্বয়ে পাটের সুতা তৈরি করা সম্ভব। পাটের যে ধরনের সুতা দিয়ে কাপড় তৈরি হয় তা মসৃণ করা হয়। এর ফলে শাড়িতে বা কাপড়ে অ্যালার্জিক ভাব থাকে না যেমনটা চটের বস্তায় দেখা যায়।
বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ লাখেরও বেশি এবং বছরে প্রায় এক ট্রিলিয়ন টন পলিথিন ব্যবহার করা হয়। এর ক্ষতিকর দিকের শিকার আজ পৃথিবী। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সবুজ পৃথিবীর কথা চিন্তা করে বর্তমান বাজারে পাট এক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে নাম অর্জন করতে পেরেছে। এর ফলে চেনা পরিচিত চট ও বস্তার পর এবার বিশ্ব বাজারে চাহিদা বেড়েছে পাটের কাপড়ের। এছাড়া পাট চাষাবাদে মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। পাট চাষাবাদ কালে হেক্টরপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টন পাতা মাটিতে পড়ে। পাটের পাতায় বিদ্যমান থাকা নাইট্রোজেন, ক্যারোটিন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা পাটের তৈরি বৈচিত্র্যময় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে কয়েক গুণ। পাটের ২২ জাতের সুতা রপ্তানি হচ্ছে প্রায় ১৪ টি দেশে। শীত প্রধান দেশগুলোতে প্রায় ৫০ ধরনের পাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে।
পাটের অর্থনীতিতে অবদানের জন্য একে সোনালি আঁশ বলা হয়ে থাকে। এর উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরার জন্য পাটকে ২০২৩ সালে প্রোডাক্ট অব দা ইয়ার বা বর্ষপণ্য-২০২৩ এবং কৃষি পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। ২০১৫ সালে ড. মোবারক আহমেদ খান সোনালি আশ থেকে সোনালি ব্যাগ তৈরি করেছেন যা প্লাস্টিকের মতো এবং প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মানুষের চাহিদার সাথে পেরে উঠছে না পরিবেশবান্ধব এই সোনালি ব্যাগ।
সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতাই পারে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে।
Writer information
গৌরাঙ্গ রাজবংশী
শিক্ষার্থী, টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)