জীবনানন্দ দাসের কবিতা পড়ছিলাম,
“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিষার নেশা”
আর তখনই সামনে দিয়ে পোষা ভেড়া টা এমন ভাব নিয়ে যাচ্ছিল মনে হয় মনে মনে বলছিল ,”হুম্যান(হিউম্যান)তোমরা মাথায় এত বড় বড় ফাইবার নিয়ে ঘুরো এই চুল গুলা কোন কাজের হ্যাঁ ?আমরা ভেড়ারা তোমাদের চেয়ে উত্তম।আমাদের লোম তো তাও কাজে লাগে।’ এত বড় অপমান সইতে না পেরেই আজ আমার এই আর্টিকেল লিখতে বসা। টেক্সটাইল শিল্পে তো পশুর চুলের ব্যবহার প্রচুর। কিন্তু মানুষের চুলের ব্যবহার?
এবার জেনে নেই জ্ঞানীগুণী মানুষেরা কিভাবে চুল কে বিশ্লেষণ করেছেন।চুল হল স্তন্যপায়ী প্রাণিদের আত্মরক্ষার একটি ব্যবস্থা। আর জটিল করে বলতে গেলে চুল হল প্রোটিন ফিলামেন্ট। যা কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, সালফারের একটি মিশ্রণ ।এছাড়াও চুলে এমিনো এসিড, সেরিন সাইটোসিন উপস্থিত আছে।
মনে পড়ে? আমাদের ফার্স্ট ইয়ারে একটা প্রশ্ন ছিল, “মানুষের চুল টেক্সটাইল ফাইবার নয় কেন?” এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশটা ক্লিয়ার হওয়াটা জরুরি।টেক্সটাইল ফাইবার হল এমন একক যার দৈর্ঘ্য প্রস্থের পুরুত্বের অনুপাত ১০০০ বা এর বেশি হয়।এর ফ্লেক্সিবিলিটি, স্পিনিং মানে পাকানোর যোগ্যতা, মজবুত, ফ্রি প্রোজেক্টিং এডজ, রং ধারণ করার ক্ষমতা এবং সু্ক্ষ্মতা থাকতে হয়।যাতে প্রচলিত নিয়মের মাধ্যমে স্টেপ বাই স্টেপ কাপড় তৈরি করা যায়।
এবার কেশকথন-
চুলের দৈর্ঘ্য প্রস্থ পুরুত্বের অনুপাত মাত্র ১০০। দুইটি চুল একসাথে পাক দিয়ে মানে স্পিনিং করা সম্ভব নয়।ফ্রি প্রোজেক্টিং এডজ নেই।ফ্লেক্সিবিলিটি,রং ধারণ ক্ষমতা,সুক্ষ্মতা খুব কম। যারফলে প্রচলিত নিয়মের মাধ্যমে চুলের সুতা তৈরি করে কাপড় বানানো সম্ভব নয়। এইসব কারণের জন্যই মানুষের চুল টেক্সটাইল ফাইবার নয়।
এখন প্রশ্ন হতেই পারে চুলে রং করে অপু ভাই কিভাবে ভাইরাল হল? চুলের নিজেরই একটা স্ট্রং কালার আছে ,এই কালার কে দূর করে তবেই চুলে রঙ করা যায়।আর এভাবেই যদি আমরা টেক্সটাইলের জন্যেও ডাইং করি এটা হবে খুব ব্যয়বহুল।
এবার মূল অংশে আসা যাক।চুলকে প্রক্রিয়াজাত করে ফাইবার বানানো সম্ভব। আসলে অন্যান্য ফাইবারের সাথে এভাবে মিক্সিং করা হয় অনেক দিন থেকেই।কিন্তু যদি বলি সরাসরি চুল থেকেও ফেব্রিক বানানো সম্ভব। না, আমি প্রচলিত ভাবে বানোনোর কথা বলছিনা। ফ্রেন্স ডিজাইনার “অ্যালিক্স বিজিত” চুলকেই ইয়ার্ণ হিসেবে ব্যবহার করে উভেন বুনন পদ্ধতিতে বানিয়ে ফেলেছেন জ্যাকেট,গাউন সহ দারুন সব ফ্যাশন।এই অর্জন ফ্যাশন দিগন্তের এক নব সূচনা।চুল একটি বায়ো বর্জ্য। পঁচতে অনেক দিন সময় নেয়। প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে চুল ফেলে দেওয়া হয় বর্জ্য হিসেবে।যেহেতু পঁচতে অনেক দিন সময় নেয় তাই এটা দূষণের সৃষ্টি করে।এই রিসাইকেলের যুগে বিশাল চুল বর্জ্য কাজে লাগানোর এটি এক অভূতপূর্ব সুযোগ। একজন সাইবেরিয়ান আর্টিস্ট চুল দিয়ে ১২০০ স্কয়ার ফিটের একটা কার্পেট বানিয়ে এক সম্ভবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন। এখন তার অনুসারি অনেক জন।
এসব ছাড়াও আরো অনেক কাজে চুল ব্যবহার করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়ঃ
- চুল ফ্লেক্সিবল মাইক্রো ইলেকট্রোড হিসেবে
- কসমেটিক্স ব্রাশ হিসেবে*ওয়েল ফিল্টার হিসেবে
- দড়ি তৈরিতে*অ্যামিনো এসিড এক্সট্রাকশনে
- নাইট্রজেন থাকাতে সার হিসেবে
- সফট টয়েস বানাতে
- কুশন ,তোশক,গদি বানাতে
মজার ব্যাপার হল সয়া সস বানাতে চুলের অ্যামিনো এসিড ব্যবহৃত হয়।চুল দিয়ে শিল্প কর্মও তৈরি হয়। চুলের দারুণ দারুণ শিল্প কর্ম দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে Philadelphia এর Mutter Museum-এ।ধান ভানতে শীবের গীত তো অনেক হল। প্রতিদিন চুলকে ঘিরে আমদের জীবনে তো অনেক গল্পই ঘটে যায় এবার নাহয় চুলের টেক্সটাইল নিয়েও তৈরি হবে এক অন্য রকম গল্প।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, টেক্সটাইল টুডে, টেক্সটাইল ফোকাস, ইউটিউব
লেখকঃ
রওশন তাবাসসুম ডরিস
এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং(১ম ব্যাচ)
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
মনে হলো বিড়াল গল্প পড়ছি,
হাস্যরসাত্মকভাবে একটি ইনফরমেটিভ আর্টিকেল উপহার দেয়ায় ধন্যবাদ রওশন তাবাস্সুম দড়িশ কে