সংখ্যায় কম হলেও বিয়েতে শাড়ির বদলে লেহেঙ্গা পড়ার প্রবণতা কনেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনেক আগে থেকেই। প্রথাগত লাল রঙের পরিবর্তে অন্য রঙের বৈচিত্র্য দেখা দিয়েছে বিয়ের পোশাকে। আইভরি, প্যাস্টেল, সাদা, গোলাপি রঙের বিয়ের পোশাক হরহামেশাই দেখা যায় এখন। এবার বিয়ের সাজপোশাকে ভিন্নমাত্রা যোগ করলো ডেনিম, নীল রঙের ডেনিম।
রুক্ষতা সত্ত্বেও টেকসই, আরামদায়ক, আবেদনময় ডেনিম পোশাক ফ্যাশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফ্যাশনপ্রিয়দের ওয়ারড্রবের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে ডেনিমের পোশাকের দখলে। ১৯৬৯ সালে ‘আমেরিকান ফেব্রিকস’ নামক ম্যাগাজিনের একজন রিপোর্টার লিখেছিলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম আদি ফেব্রিক হলেও ডেনিমের যৌবন চিরন্তন।’ কথাটা কিন্তু দিনের আলোর মতোই সত্যি। সেই ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ড রাশের সময় মানে সতেরো শতক থেকে এখন পর্যন্ত ডেনিমের জনপ্রিয়তা আর চাহিদা কেবল বেড়েই চলেছে। কিন্তু বিয়ের পোশাক হিসেবে ডেনিম ব্যবহারের কথা উঠলে উচ্চবর্গীয় শ্রেণীর নাক সিটকানো চোখে পড়ে। বিয়ের মতো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে ডেনিমের মতো নৈমিত্তিক অনানুষ্ঠানিক পোশাক পড়া অনেকের কাছেই অসম্মানজনক এবং দৃষ্টিকটু। তবে “ডেনিম থিমড” বিয়ে হলে ডেনিম ব্যবহারে কোনো কড়াকড়ি নেই।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক অহনা খোসলা ও শিহান মিনোচা বিয়েতে ভিন্ন ঘরানার ডেনিম পোশাক পড়ে আলোচনায় আসেন। বাবা মানভিরাজ খোসলা ব্যাঙ্গালুরুর নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ায় ফ্যাশন জগতের সাথে অহনার পরিচয় ছিল ছোট বেলা থেকেই। অন্য সব কনের মতো বিয়ের পোশাককে অন্যদের চেয়ে আলাদা, বৈচিত্র্যময় করার প্রয়াস থেকেই বিয়ের পোশাকে ডেনিম ব্যবহারের চিন্তা আসে অহনার মাথায়।
নিজের সত্তা, ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা এবং বিয়ের পোশাক পুনরাবৃত্তি করাই ডেনিম ব্যবহারের মূল কারণ ছিল। মেয়ের ইচ্ছা পূরণে কাজে নেমে পড়েন বাবা। বিয়ের ডেনিম লেহেঙ্গার পুরোটা জুড়ে ছিল এমব্রয়ডারি করা ফুল, লতাপাতা, ফড়িং এবং প্রজাপতির কাজ। এছাড়াও রিভেট লাগানো ছিল কিছু অংশ জুড়ে। ফড়িং এবং প্রজাপতি পরিবর্তন বা নবসূচনা অন্যদিকে ফুল লতাপাতা সৌন্দর্য, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা প্রকাশ করে। লেহেঙ্গার সাথে ছিল এমব্রয়ডারি করা প্রজাপতির নকশা আঁকা ক্রপ টপ এবং ডেনিমের উপর নকশা করা বিয়ের ওড়না।
বর শিহানের পোশাকও কনের পোশাকের আদলে ডেনিম নির্মিত এবং পোশাকে ফুল, ফড়িং, প্রজাপতির নকশা এমব্রয়ডারি করা। এমনকি বিয়ের জুতা পর্যন্ত ডেনিমের তৈরি।
ব্যাপক পরিসরে ডেনিমের শাড়ি, লেহেঙ্গা তৈরি এবং ব্যবহার হলেও বিয়েতে ডেনিমের লেহেঙ্গা নতুন ফ্যাশনের দ্বার উন্মোচন করেছে।
টেকসই ফ্যাশন, প্রযুক্তির নতুনতর সংযোজন আর পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠা, পুনব্যবহারের প্রয়াস ডেনিমকে যে ভবিষ্যতের কাঙ্ক্ষিত ফ্যাশন মেটেরিয়ালে পরিণত করবে, তাতে সন্দেহ নেই।
Writer information:
সুমাইয়া বিনতে সামজাদ
শিক্ষার্থী, টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)