Friday, November 22, 2024
Magazine
More
    HomeFiberছাগলের উল থেকে শাল

    ছাগলের উল থেকে শাল

    📌 একটি বুনতে কমপক্ষে সাত মাস !!!!

    ✒ বলছি পশমিনা শালের কথা। সিন্ধু সভ্যতায় রাজপুরোহিতের আবক্ষ মূর্তির কাঁধে ছিল একটি ফুলকাটা শীতবস্ত্র। দেখলেই চেনা যায়— ‘এ যে কাশ্মীরি শাল! এর তিনটি ভাগ:

    ১.শাহতুষ,
    ২.পশমিনা,
    ৩.রাফল।

    📌 শাহজ়াদা দারা শিকো প্রেয়সী রানাদিলকে হিরের আংটি পরাতে গেলে তিনি নাকি তা ফিরিয়ে দেন। তখন এক জাদু দেখান শাহজ়াদা। ওই আংটির মধ্য দিয়েই অক্লেশে গলিয়ে দিলেন এক বহুমূল্য শাল। শালটি ছিল পশমিনা।

    📌 পশমিনা হচ্ছে কাশ্মিরী উল থেকে প্রস্তুত চাদর। সর্বপ্রথম ভারতের কাশ্মিরে এই পোশাক তৈরী শুরু হয়। পশমিনা শব্দটি ফারসি শব্দ পাসমিনা থেকে এসেছে যার অর্থ উল থেকে প্রস্তুত এবং কাশ্মিরী ভাষায় এটাকে বলা হয় নরম সোনা। কাশ্মিরী জাতের ছাগল থেকে এই উল সংগ্রহ করা হয়। এই জাতের ছাগলের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। কাশ্মির অঞ্চলের চ্যাংথাং প্লাতু’র চ্যাংথাই ছাগল, কারগিল এলাকার মারলা এবং উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের চেঙ্গু ছাগল ও নেপালের ছায়াঙ্গারা ছাগল থেকে পশমিনা উল সংগ্রহ করা হয়।পশমিনা ছাগলকে কাশ্মিরী বলা হয় চ্যাংথাই। শীতের শেষে বসন্তে পশম সংগ্রহ করা হয়। একটি ছাগল থেকে আনুমানিক ৮০-১৭০ গ্রাম উল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে ছাগলগুলো খালি চামড়ায় বেঁচে থাকতে সক্ষম। শীতে পূণরায় এদের শরীরে পশম গজায়। চিরুনির মাধ্যমে এই উল সংগ্রহ করা হয়। লাদাখ অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী পশমিনা উল প্রস্তুত করে চ্যাংপা নামের এক সম্প্রদায়। কাশ্মির এবং নেপালে হস্তচালিত তাঁতে পশমিনা শাল তৈরী করা হয়।একটা চাংথাঙ্গি ছাগল থেকে প্রতি বছর গড়ে ২০০-৩০০ গ্রাম অপরিশোধিত পশম পাওয়া যায়।

    📌 ৩য় খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং ১১ শতকে লিখিত আফগান পুঁথিতে কাশ্মিরে উলের শাল তৈরীর কথা উল্লেখ আছে। তবে ১৫ শতকে ঐতিহাসিক পশমিনা শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন কাশ্মিরী শাসক জয়নুল আবিদিন, তিনি মধ্য এশিয়া থেকে তাঁতীদের নিয়ে আসেন এবং এখনো তার মাজারে পোষাকনির্মাতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

    💰 বাজারদরঃ

    পশমিনা আঁশের দৈর্ঘ্য যত বেশি হবে আর তা যত সরু হবে, ততো উচ্চ তার মান।পূর্ব লাদাখের পশমিনা সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।প্রতি কিলো কাঁচা পশমিনার জন্য ২,৫০০ থেকে ২,৭০০ টাকা দেয়া হয়। চাহিদা কমতে থাকার কারণে এই মূল্য বিগত ৪-৫ বছরে বিশেষ বাড়েনি। পাঞ্জাব থেকে আসা পশমের জামাকাপড় আর পশমিনা ব্যতীত অন্য শাল বাজারে ঢুকে পড়ায় এই ব্যবসার খুব ক্ষতি হচ্ছে।“শাল যত দূরে যাবে তত তার দাম বাড়বে। (শালের উপর) বেশি হাতের কাজ মানেই অধিক উৎপাদন সময় ও অধিক দাম। সারা গায়ে নক্সাদার একটি শালের দাম ১ লাখ থেকে ৫-৬ লাখ, অপরদিকে নক্সাবিহীন একটি শালের দাম হয় ১০,০০০ আর শুধু পাড় থাকলে ৩০,০০০-৪০,০০০ টাকা।”…

    ✒ যত্ন নেয়াঃ

    📍 ঠিকঠাক রাখলে পশমিনার যৌবন একশো বছর পার করে। আয়ু বাড়াতে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখবেন।
    📍 বর্ষায় প্রায় দশ দিন পনেরো মিনিট করে পশমিনায় জোলো হাওয়া খাওয়ান।
    📍 একরঙা পশমিনা ঠান্ডা জলে ধোবেন। নিংড়াবেন না আর ছায়ায় শুকোবেন। কারুকাজ করা শাল হলে পালিশ করিয়ে নেওয়াই ভাল।

    ✒ অন্য ব্যবহারঃ

    📍 শীত ছাড়াও অন্য সময়ে পশমিনায় স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করুন। পশ্চিমি পোশাকের সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা যায় পশমিনার স্টোল বা স্কার্ফ। তবে জড়ানোর কায়দা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
    📍পশমিনা খুব হালকা। এটিকে পেঁচিয়ে গলার হার করে পরলেও নজর কাড়বেন।
    📍বেল্ট হিসেবে পশমিনা তো মুঘল যুগ থেকেই পছন্দের তালিকায়।

    📌 মুঘলপুরুষরা পরতেন পশমিনার চোগা, আচকান, জামা। অন্তঃপুরিকারা চাপাতেন ফিরান। উনিশ শতক থেকে জামা, ফিরানের পিছনেও ডিজ়াইন থাকে। সম্ভ্রান্ত ঘরের মেঝেয় পাতা হয় পশমিনা জাজিম। যার অলঙ্করণে ভ্রম হয়। একরাশ চিনার পাতা ছড়িয়ে বুঝি!

    📌 ইংরেজরাও পশমিনার প্রেমে পড়ে। স্কটল্যান্ডে শালের কারখানা বসল। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পাটমহিষী জোসেফিন তিনশোটা পশমিনার অর্ডার দিয়েছিলেন। ইউরোপের আবদারে কাশ্মীরি শালকররা কাপড়ের কোনায় নার্গিস ফুল, কল্কা, লতাপাতা, জ্যামিতির ছাঁদ তুলতে লাগলেন। বিখ্যাত হল নিম জামেয়ার, বেলদার পাড়। সে শাল মন ভোলাল মহারানি ভিক্টোরিয়ার।

    📌 তথ্য সূত্র:গুগল,আনন্দবাজার পত্রিকা

    WRITER:

    Shakline Pranto
    Campus ambassador
    Ahasanullah university of science and technology

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed