যে রেখা বরাবর একাধিক পরতা কাপড় জোড়া লাগানো হয় ঐ রেখাকে ছিম বলে।কাপড় সেলাই করে বা বিকল্প কোন পদ্ধতিতে জোড়া লাগালেই ছিম উৎপন্ন হয়।সেলাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য এমন একটি ছিম তৈরি করা যার চেহারা এবং গুণাগুণ যেন আদর্শ মান সম্পন্ন হয় ও কম খরচে তৈরি করা যায়।
ভালো চেহারা সম্পন্ন ছিম বলতে যায় যে ছিমের মধ্যে সেলাই এর এককসমূহ সঠিক ও সুষম সাইজের উৎপন্ন হয়েছে এবং কাপড়ের কোন ক্ষতি সাধন হয় নাই।উপরন্তু সেলাই রেখা বরাবর কাপড় মসৃণ থাকবে অর্থাৎ কাপড় যেন কুঁচকে না থাকে। যদিও ছিমের মধ্যে কাপড়ের কুঁচি গ্রহণযোগ্য নয় তথাপি কখনো কখনো বিশেষ ডিজাইন সৃষ্টির জন্য ছিমের মধ্যে কাপড়ের কুঁচি ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয়।বিভিন্ন প্রকার আঁশ ও বিভিন্ন প্রকার কাপড়ের গঠনের কারণে ভালো চেহারার ছিম তৈরির জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা প্রয়োজন হয়।পোশাক তৈরির পর ব্যবহার করার সময় অথবা পরিষ্কার পর ছিমের চেহারা যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ছিমের গুণাগুণ বলতে তার শক্তি, স্থিতিস্থাপকতা, টেকসই, নিরাপত্তা, আরাম এবং কাপড়ের যদি কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে যেমন পানি প্রতিরোধক অথবা আগুনের শিখা প্রতিরোধক ইত্যাদি রক্ষা করা বুঝায়। ছিমের উল্লিখিত গুণাগুণ কিরূপ হওয়া উচিত তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
ছিমের শক্তি (Seam strength) :কাপড়ের শক্তির সমান অথবা কাপড়ের শক্তির চেয়ে সামান্য কম শক্তিসম্পন্ন হওয়া উচিত। এ শক্তি ছিমের লম্বালম্বি দিক বরাবর এবং আড়াআড়ি দিক বরাবর প্রযোজ্য।ছিমের শক্তি কাপড়ের শক্তির চেয়ে বেশি হলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অত্যাধিক বল প্রয়োগের কারণে কাপড় ছিড়ে যেতে পারে যা আমাদের কাম্য নয়।
ছিমের স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity) :বল প্রয়োগের কারণে পোশাকের কাপড় সম্প্রসারিত হতে পারে, তখন পোশাকের কাপড় সম্প্রসারণের সাথে সাথে ছিমও সম্প্রসারিত হতে হবে এবং বল অপসারিত হওয়ার পর কাপড়ের সাথে সাথে ছিমও পূর্বের আয়তনে ফিরে আসতে হবে। অর্থাৎ ছিমের স্থিতিস্থাপকতা কাপড়ের স্থিতিস্থাপকতার সমান অথবা বেশি হতে হবে।অন্যথায় ছিমের মধ্যস্থ সেলাই সুতা ছিড়ে ছিম খুলে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে,কোন কোন কাপড় বা পোশাক ১০০% বা আরো বেশি সম্প্রসারণশীল হতে পারে।
ছিমের টেকসই (Durability) : পোশাক ও পোশাকের কাপড় যতদিন টেকসই হবে ছিমও যেন কমপক্ষে ততদিন টেকসই হয়। বিশেষ করে ব্যবহারের সময় ও পরিষ্কার করার সময় ঘর্ষণ জনিত কারণে ছিম নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ছিমের নিরাপত্তা ( Security) : পোশাক ব্যবহারের সময় স্বাভাবিক কারণে হঠাৎ ছিমের সুতা খুলে বা ছিড়ে যাওয়ার কারণে ছিম যেন খুলে না যায় তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে, অন্যথায় নাজুক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।
ছিমের আরাম প্রদতা ( Comfort) : কিছু কিছু পোশাক যেমন জাঙ্গিয়া,গেঞ্জি বা ব্রা ইত্যাদি যা শরীরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে লেগে থাকে ঐসব পোশাকের ছিম এরূপ হতে হবে যাতে ব্যবহারের সময় কোন প্রকার অস্বস্তি বা অসুবিধার সৃষ্টি না হয়।
ছিমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ( Special properties) : কিছু কিছু পোশাক বা কাপড় সম্পূর্ণভাবে পানি প্রতিরোধ গুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। ঐসব পোশাক তৈরির সময় যদি সুই ও সুতা দ্বারা সেলাই করা হয় তবে সুই এর দ্বারা উৎপন্ন ছিদ্রের মধ্য দিয়ে পানি প্রবেশ করে উক্ত পোশাকের পানি প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে সেলাই রেখার উপর টেপ দিয়ে অথবা সুই এর দ্বারা উৎপন্ন ছিদ্রগুলো অন্য কোন উপায়ে বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে ঐ ছিদ্র পথে পানি প্রবেশ করতে না পারে। তবে বিকল্প উপায়ে যেমন ওয়েল্ডিং পদ্ধতিতে যদি ছিম তৈরি করা হয় তবে পানি প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য বেশ ভালো পাওয়া যায়।
কিছু কিছু পোশাক আছে যা আগুনের শিখা প্রতিরোধক গুণ সম্পন্ন। ঐসব পোশাক সেলাই করার সময় যে সেলাই সুতা দ্বারা তৈরি করা হবে ঐ সুতাও অবশ্যই আগুনের শিখা প্রতিরোধক গুণসম্পন্ন হতে হবে, অন্যথায় পোশাকের শিখা প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
Reference: Garments & Technology Book.
Writer Information
Snigdha Talukdar
4th year, batch 21,
Department of Clothing & Textile,
Bangladesh Home Economics College.