রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের আরেকটি স্বপ্ন দেখছি আমরা। সেখানে সোনালী আশ হিসেবে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে পাট। পাট একসময় বাংলাদেশে সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বচ্ছ পানিতে ধোয়া পাটের আঁশ দুপুরের রোদে ভাদ্র মাসে হাসির ঝলক দিত বলেই পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ।
পাট সাধারণত জাতীয় আঁশ নামেও পরিচিত।
এক সময় এদেশের মানুষ পাটকে নিয়ে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতো।স্বপ্ন মানুষ এখনও দেখছে,তবে যুগ টা পরিবর্তন হয়েছে। এখন মানুষ অন্যরকম ভাবে ভাবা শুরু করেছে। পাটকে নিয়ে মানুষ অন্যরকম ভাবে ভাবতে ভাবতে বর্তমান সময়ে এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে, যেটা কিনা বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলেই পরিবেশের জন্য আর্শীবাদ স্বরূপ।
আসুন এবার একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর সম্পর্কে জানি,যিনি কিনা বিদেশে গবেষণা করতে যেয়েও গবেষণার উপকরণ হিসাবে পাট ছাড়া বিকল্প জিনিস নিয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছে পোষণ করেননি। তিনি হলেন ড. মোবারক আহমেদ খান।
বর্তমানে তিনি বিজেএমসির একজন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসাবে আছেন।
তিনি পাট থেকে এমন কিছু উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন যেটা পরিবেশ উপযোগী এবং সাশ্রয়ী।
অনেক আগে থেকেই পলিথিনের ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়ে আসতেছে,কিন্তু এর সমাধান থাকলেও কিছু জটিলতার কারণে বাজারে এখনও পর্যন্ত ঐ পলিথিনটাই ব্যবহার করা হচ্ছে যেটা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।
আমরা যদি পাট থেকে তৈরি করা পলিথিন ব্যাগ ব্যপক উৎপাদনের মাধ্যমে বাজারে ছেড়ে দেই তাহলে আমরা কয়েকটি দিক থেকে উপকৃত হতে পারছিঃ
★ পরিবেশ উপযোগী উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।
★ বাংলাদেশের সোনালী আঁশের ব্যপক পরিচিতি লাভ করবে।
★সাথে যারা পাট উৎপাদনের সাথে জড়িত, তারা আরও বেশি পাট উৎপাদনে উৎসাহী হবে।
★অর্থনীতির চাকা সচল হবে এবং পরিবেশ কিছু টা হলেও সুস্থ থাকবে।
এবার আসি একটি চমৎকার প্রসঙ্গে যেটি আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যপক সাড়া ফেলে দিয়েছে।
সেটি হলো পাট থেকে প্লাস্টিক উৎপন্ন।
এটি আসলেই চমৎকার এবং ব্যপক সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো একটি আবিষ্কার।
একটু ভেবে দেখুন তো পাট থেকে তৈরি প্লাস্টিক যদি সকল জায়গায়, সকল ক্ষেত্রে অথ্যাৎ যেখানে যেখানে ব্যবহার উপযোগী, সেখানে সেখানে ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাহলে একটি নতুন যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে যাবে।
এবার দেখা যাক আমাদের পোশাক এবং টেক্সটাইল শিল্পে পাটের তৈরি প্লাস্টিক কিভাবে কাজে লাগাতে পারিঃ
পোশাক কারখানায় পোশাকে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ বোতাম, হুক, শপিং ব্যাগ,ব্রান্ডের লোগো,পোশাক প্যাকেজিং ইত্যাদিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার সচারাচর দেখা যায়।
এইখানে যদি পরিবেশ বান্ধব পাটের প্লাস্টিক কে কাজে লাগানো যায় তাহলে আমরা পরিবেশের হওয়া ক্ষতি রোধ করতে পারি।
আর বর্তমান সময়ে কারখানার মালিক সহ অনেক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ও এক্সপার্টগণ সহজলভ্য হিসেবে ব্যবহার করার জন্য প্লাস্টিককে বেছে নিচ্ছেন।এখন সেই প্লাস্টিক টি যদি পাটের তৈরি হয়, তাহলে বিষয় টা আরও চমৎকার দেখাবে।
উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি,যখন পাটের তৈরি ব্যাগ বা পাটের প্লাস্টিকের বোতাম কোন কারণে পরিবেশের মাঝে চলে যাবে, তখন ধীরে ধীরে সেটি মাটিতে পঁচে যাবে এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না।
পাটের তৈরি প্লাস্টিকের থেকে আমরা যেসকল দিক দিয়ে উপকৃত হতে পারি সেগুলো হলোঃ
★ এটি মাটিতে পচনশীল
★ আগুনে পোড়ালে কোন ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হবে না
★ সহজ ভাবে বহন যোগ্য
★ টেকসই
পোশাক শিল্পে যথেষ্ট প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো রেয়ন বা ভিসকস সুতা। এটি কৃত্রিম ভাবে পাট থেকে তৈরি করেছেন ড. মোবারক আহমেদ খান।
বিদেশে থেকে যেই পলিমার ৩ গুন বেশি দামে কিনে আনতে হয়, সেই একই রকম জিনিস রেয়ন পাট থেকে উৎপন্ন করতে অনেক কম খরচ হবে।
এই ক্ষেত্রে যদি পাটের রেয়ন টি ব্যপক ভাবে সমাদৃত করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে এটি জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবে।
পাশাপাশি পাটের বহুমুখী ব্যবহার গুলো বাড়তে থাকবে,সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধ হবে।
যদি পাটের তৈরি কাপড়, পাটের প্লাস্টিকের বোতাম, পাটের তৈরি জুতা, ব্রান্ডের লোগো টাও পাটের, তার সাথে সাথে পণ্য টা যেই ব্যাগে নিয়ে যাচ্ছেন সেটিও পাটের তাহলে আমরা এটিকে একটি ব্রান্ড বলতেই পারি। সেটি হলো আমাদের সোঁনালী আশের ব্রান্ড।
আসুন নিজের দেশের পণ্য নিজেদের কাজে ব্যবহার করি এবং পাটকে ব্রান্ডের মতো করে বিশ্বের দরবারে, নিজের দেশকে নতুন করে উপস্থাপন করি।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো পত্রিকা, যুগান্তর, উইকিপিডিয়া।
লেখক পরিচিতিঃ
মোঃ সালমান ফারসি
ক্যাম্পাস টীম মেম্বার, TES
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ, রংপুর।