বর্তমান সময়ে টেক্সটাইল শিল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। বৃহৎ এ শিল্পে উৎপাদিত বর্জ্যের পরিমানও অকল্পনীয়। টেক্সটাইল শিল্পের বর্জ্য সমস্যা দূরীকরণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী নীতিটি হচ্ছেঃ জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট।
জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কী?
এটি মূলত একটি বদ্ধ-লুপ-সিস্টেম যা তৈরি করা হয়েছে বর্জ্য তৈরির পরিবর্তে তা নতুন করে পুনর্বিন্যস্ত করার লক্ষ্যে, এ নীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বদলে বর্জ্যকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা। ২০০২ সালে সমন্বিত ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যালায়েন্স অনুযায়ী জিরো ওয়েস্ট অন্তর্ভূক্তঃ
- জিরো সলিড ওয়েস্ট
- জিরো বিপজ্জনক বর্জ্য
- জিরো টক্সিক বর্জ্য
- জিরো নির্গমন
জিরো ওয়েস্ট অ্যালায়েন্সের মতানুযায়ী “বর্জ্য ধারনাটি সম্পূর্ণ রূপে দূর করা উচিত। এর পরিবর্তে বর্জ্যকে একটি ‘অবশিষ্ট পণ্য’ বা একটি ‘সম্ভাব্য রিসোর্স’ হিসাবে বিবেচনা করে এর সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিত”।
টেক্সটাইল শিল্প বিশ্ব বর্জ্যে দ্বিতীয় প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। তাই টেক্সটাইল দূর্ষন শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিটি নতুন ত্রানক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। কারখানা গুলোতে পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়া চলাকালীন- কাটা, সেলাই ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর পরিমানে টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। নকশা প্রক্রিয়াকরণ থেকে উৎপাদন এবং ব্যবহার অযোগ্য হওয়া পর্যন্ত যে বর্জ্য উৎপাদিত হয় তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পরিবেশ দূষনের জন্য দায়ী। একমাত্র জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিটি পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।
জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিটি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োগ ব্যতীত পুরোপুরি ভাবে বাস্তবায়ন অসম্ভব। শতভাগ পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়া গ্রহণ করার পরেও এটি বাস্তাবায়ন সম্ভব হবে না কারন এই নীতিটি মূল হচ্ছে-
• প্রথমত, বর্জ্য উৎপাদন যাতে সর্বনিন্ম হয় এটি শুরুতেই লক্ষ্য রাখতে হবে।
• দ্বিতীয়ত, উৎপাদিত বর্জ্য পুনরায় ব্যবহারের লক্ষ্যে সর্বোত্তম প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
• বর্জ্য থেকে যথা সম্ভব উপায়ে সকল উপাদান পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে হবে।
এই মূল নীতি গুলো সঠিক ভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমেই জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রয়োগ সম্ভব। এটি প্রয়োগের জন্য ডিজাইনারদের গার্মেন্টস সামগ্রীর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়াও, পোশাকের দীর্ঘায়ু বৃদ্ধি করা প্রয়োজন যার ফলে ব্যবহারকারীরা এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় টেকসই সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে যাতে সহজে নষ্ট না হয়ে যায়। পোশাকে অতিরঙিন ও চটকদার সামগ্রীর ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও, কাপড় সেলাইকরণে ‘অরিগামি’ কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে কেননা এই কৌশলে কাপড় না কেটে ভাঁজ করে সেলাই করণে উদ্বুদ্ধ করা হয়। পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত সমস্ত উপাদান সমূহের পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা সম্পর্কে ডিজাইনারদের যথাযথ ধারনা রাখতে হবে।
টেক্সটাইল দূর্ষন রোধে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকল ডিজাইনার এবং নির্মাতাদের জিরো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিটি গ্রহণ, পর্যালোচনা ও প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। এই নীতিটিকে টেক্সটাইল শিল্পে একটি মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যদিও শতভাগ সফলতা অর্জন এখনো অনেক দূরে তারপরও ছোট ছোট উদ্যোগ ভবিষ্যতের টেক্সটাইল দূর্ষন রোধে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
Source:
Wikipedia
Fiber2fashion
zwia
omicsonline
Writer Information:
Razin Saleh Shanto
Batch-201
Department of Textile Engineering
BGMEA University of Fashion and Technology (BUFT)