পলিয়েস্টার হল একটি সিন্থেটিক ফ্যাব্রিক যা সাধারণত পেট্রোলিয়াম থেকে উদ্ভূত হয়। রাসায়নিকভাবে, পলিয়েস্টার একটি পলিমার যা মূলত এস্টার ফাংশনাল গ্রুপের মধ্যে যৌগিক সমন্বয়ে গঠিত। বেশিরভাগ সিন্থেটিক এবং কিছু উদ্ভিদ-ভিত্তিক পলিয়েস্টার তন্তুগুলি ইথিলিন থেকে তৈরি, যা পেট্রোলিয়ামের উপাদান যা অন্যান্য উৎস থেকেও পাওয়া যায়। পলিয়েস্টার ফাইবারগুলি কখনও কখনও প্রাকৃতিক তন্তুগুলির সাথে একত্রে কাটা হয় মিশ্রিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফ্যাব্রিক তৈরি করার জন্য। কিছু ধরনের পলিয়েস্টার নবায়নযোগ্য, তবে বেশিরভাগই তা নয়।
সাধারণত পলিয়েস্টার ফাইবারের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা দেখা যায়।
প্রথমে আসি সুবিধা নিয়ে:
- এটি বেশ নমনীয়। স্থিতিস্থাপকতা পশমের কাছাকাছি এবং এটি যখন ৫%-৬% প্রসারিত হয়, তখন এটিকে প্রায় পুরোপুরিভাবে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
- সিন্থেটিক ফাইবার ফ্যাব্রিকে ভালো তাপ প্রতিরোধী এবং থার্মোপ্লাস্টিসিটি দেখা যায়।
- এসিড ও ক্ষারে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
এই ফ্যাব্রিকটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্যাব্রিক এবং এটি হাজার হাজার ভোক্তার প্রয়োজনে এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য, এটি এয়ার ফিল্টার, কার্পেট, দড়ি, ছায়াছবি, ফিশিং নেট, বোতল, পিয়ানোস, তার, ফোন কেস এবং আরও অনেক কিছুর তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।পলিয়েস্টার ফাইবারের তৈরি কাপড়গুলো ভাল স্থিতিস্থাপক, সহজে কুঁচকায় না, আকৃতি ধরে রাখে, চমৎকার ধোয়া-ও-পরিধান কর্মক্ষমতা এবং এর ভালো স্থায়িত্ব রয়েছে যার ফলে এটি সমস্ত ধরণের পোশাকের কাপড়গুলোর মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
এখন আসি পলিয়েস্টার এর কিছু অসুবিধা সম্পর্কে:
- এর কোনো নির্দিষ্ট স্ট্রেনিং জিন নেই এবং রঞ্জনযোগ্যতা কম।
- পলিস্টার এমন একটি সিন্থেটিক উপাদান; যেখানে অনেকগুলো বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিদ্যমান।
সিন্থেটিক উপকরণ যেমন: অ্যাক্রিলিক,নাইলন এবং পলিয়েস্টার এগুলো তৈরী হয় থার্মোপ্লাষ্টিক জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য থেকে; যা যখনই উত্তপ্ত করা হয় তখন তা প্লাস্টিকের অণুগুলিকে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়াও মানবদেহে যখন এসব সিন্থেটিক পোশাক পরিধান করা হয় তখন দেহের তাপের মাধ্যমেও এই রাসায়নিকগুলোকে বাতাসে ছেড়ে দেয় এবং এগুলো আবার মানবদেহের ত্বক দ্বারা শোষিত হয়।
যেহেতু পলিয়েস্টার ফাইবারটি আর্দ্রতা শোষণে দুর্বল, তাই পলিয়েস্টার ফাইবারে তৈরি পোশাক পরিধানকারীকে গরম এবং আঠালো ভাব অনুভব করতে হয়। এই ফাইবার সহজেই স্থির বিদ্যুত উৎপাদন করে যার ফলে পোশাক ধুলো শোষণ করে এবং শরীরে আঁকড়ে থাকে এবং এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা যায় না।
পলিয়েস্টার ফাইবারের খরচ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন যে, পলিয়েস্টার ফাইবার হলো দূষিত ফ্যাব্রিকদের মধ্যে একটি। পলিয়েস্টার মূলত প্লাস্টিক জাতীয় উপাদান; যা কয়লা, তেল এবং পানি দিয়ে তৈরি এবং এগুলোর বহুল উৎপাদনের ফলে খরচ ও কম হয়।
আমরা জানি,পলিয়েস্টার ফেব্রিক রিসাইকেলিং করা যায়। বর্তমানে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফাইবার। এই ফাইবার দিয়ে সুতা বানিয়ে রং-বেরঙের পলিয়েস্টার কাপড় তৈরি করা যায়।পলিয়েস্টার ফেব্রিকের অনেক ধরনের গুনাগুনরয়েছে।
তো যেভাবে পাওয়া যায় এই ফাইবার, প্রথমে ফেলে দেওয়া বোতল সংগ্রহ করে ছোট ছোট করে কেটে ফ্লেক্স তৈরি করা হয়। এরপর তাপ দিয়ে সেই ফ্লেক্স থেকে তৈরি করা হয় পেস্ট। সেই পেস্ট স্পিনারেট দিয়ে স্নাইবার করা হয়। এরপর তা সূক্ষ্ম সুতার আকারে বেরিয়ে আসে। সেই সুতা থেকে আবার সাদা তুলা তৈরি করা হয়।প্লাস্টিক বোতল থেকে এই তুলা তৈরির প্রক্রিয়াকে রিসাইকেলিং বলা হয়। মজার ব্যাপার হলো রিসাইকেলিং শেষে সুতার মতো যে বর্জ্য বের হয় সেটিও আবার রি-সাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
পলিয়েস্টার ফেব্রিক সাধারণত অন্যান্য ফেব্রিকের তুলনায় বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা যায়। কারণ এটি খুবই শক্তিশালী এবং টেকসই হয়ে থাকে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি তৈরিতে ফেলে দেওয়া বোতল ব্যবহার করা হয়, ফলে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পায় আমাদের দেশ। যদিও পলিয়েস্টার ফাইবার তৈরি করার যে প্রসেস তা আমাদের পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কারণ এ ফাইবার তৈরি হওয়ার সময় যে বিষাক্ত ধোঁয়াগুলো কারখানা থেকে বের হয় তা মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়।
তো যাই হোক আমাদের শিল্প-কারখানার কর্মীদের উচিত, এর দ্বারা পরিবেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় সেই দিকটার কথা বিবেচনায় রেখে এই ফাইবার তৈরির মাধ্যমে আমাদের শিল্পখাতের বিকাশ ঘটানো। কারণ এর দ্বারা অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন ডটকম, গুগল, সিজু.কম, দ্যা হাউস অফ পিলো.ইউ, সুংজু ওয়েব।
Writer’s information:
Tawfiq Khan Arko (Batch -211)
Mohamad Mohiminul Pritom (Batch-211)
Ashraful Islam(Batch-211)
Department Of Textile Engineering Green University of Bangladesh
Very informative