জার্সি যা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পোশাক বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে। বিশ্বে বিভিন্ন স্পোর্টসের পাশাপাশি স্পোর্টস জার্সিও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে স্থান করে নিচ্ছে। তবে ফুটবল খেলা ও ফুটবল জার্সি সবার কাছে একটু বেশিই প্রিয়। ফুটবল বিশ্বকাপ, ফুটবল ক্লাব ম্যাচ এসবের পাশাপাশি আরও অনেক লীগ ও টুর্নামেন্ট সারাবছরই চলতে থাকে তাই আমাদের নজর যেন জার্সি থেকে সরেই না। সবাই পছন্দের ক্লাবের বা দলের অথবা খেলোয়াড়ের নামযুক্ত জার্সি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পরি। রাত জেগে হলেও ফুটবলপ্রেমীরা বার্সেলোনা – রিয়েল মাদ্রিদের খেলা এল ক্লাসিকো কিংবা প্রিমিয়ার লীগের ম্যানচেস্টার সিটি – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলা দেখতে মিস করে না। আর সাথে যদি পছন্দের দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর সৌভাগ্য হয় তাহলে খেলায় যেন দ্বিগুণ আমেজ কাজ করে।
ফুটবল ও ফুটবল জার্সির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জার্সির চাহিদা মিটাতে অনেক দেশ এগিয়ে আসছে। সেই দৌড়ে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই যার উদাহরণ আমরা ২০১৮ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে দেখেছি। সে বছর বাংলাদেশের সরাসরি ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু জার্সি কিটে ঠিকই ‘Made in Bangladesh’ ট্যাগটা ছিলো। আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, জার্মানি, কলম্বিয়া সহ মোট ১১ টি দলের স্পন্সরশীপ Adidas এর ছিলো যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে উৎপাদিত হয়। এছাড়াও Nike এর স্পন্সরশীপে ১০টি দল (ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, নাইজেরিয়া, পর্তুগাল ইত্যাদি) রয়েছে এবং Puma এর স্পন্সরশীপে ৪টি দল (সেনেগাল, সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড, উরুগুয়ে) অংশগ্রহণ করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে Adidas, Puma, Nike, G-star, H&M এবং M&S বাংলাদেশ থেকে স্পোর্টওয়্যার উৎপাদন করে থাকে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ২০১৮ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে ৩২টি দেশের জন্যে ১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের জার্সি রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সহ-সভাপতি হাতেমের মতে, ২০১৮ সালের ১৪ জুনে অনুষ্ঠিত রাশিয়া ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে জার্সি তৈরিতে প্রায় শতাধিক পোশাক কারখানা জড়িত ছিল। তিনি আরো বলেন, ২০১৮ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে জার্সির বেশি চালানের কারণে ওভেন পোশাকের তুলনায় নিটওয়্যার বেশি রপ্তানি হয়েছে। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো তথ্য অনুসারে, ২০১৮ অর্থবছরের জুলাই মাসে নীটওয়্যার রপ্তানি ১১.৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩.৯৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
তাছাড়া বিশ্বকাপ মৌসুম ছাড়াও, ফকির অ্যাপারেলস সারা বছর ধরে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনার মতো ইউরোপের বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবের জন্য জার্সি রপ্তানি করে থাকে। আর যেহেতু জার্সি তৈরির ফেব্রিক বন্ডেড ওয়েরহাউস প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আমদানি করা হয়ে থাকে,তাই এই জার্সিগুলো আমাদের দেশীয় মার্কেট গুলো বিক্রি করা সম্ভব হয় না। নারায়নগঞ্জ কেন্দ্রিক আরো কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি জার্সি রপ্তানিতে সাফল্য অর্জন করেছে।তবে দেশের বাজারেও দেশীয় গার্মেন্টস দ্বারা উৎপাদিত ফ্যান এডিশনের জার্সি পাওয়া যায়, যার চাহিদাও আকাশচুম্বী।
বাংলাদেশ জার্সি তৈরির মাধ্যমে বহির্বিশ্বে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। সফলতা ও গৌরবের সাথে জার্সি তৈরি ও রপ্তানি করে যাচ্ছে যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই আশা করাই যায় সামনে আরো অনেক বিশ্বমানের দলের সাথে, স্পন্সর কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে সক্ষম হবে। দিন দিন এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে আসবে।মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে তাই আমরাও স্বপ্ন দেখি যে, একদিন ‘Made in Bangladesh’ জার্সি গায়ে জড়িয়ে স্বপ্নের ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে বাংলাদেশ হয়তো অংশগ্রহণ করবে।
Writer’s Information:
Md. Tanvir Hasan Molla
Campus Ambassador (TES)
Batch: 201
Department Of Textile Engineering
Green University of Bangladesh
Email: [email protected]
Phone: 01940982904
খুবই চমৎকার লেগেছে, তথ্যপূর্ণ এবং বাংলাদেশের এগিয়ে চলার প্রয়াসকে এতো সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।