আমরা ছোট-বড়-মাঝারি প্রায় সকল বয়সের মানুষই টি-শার্ট পরিধান করি। সহযে পরিধানযোগ্য এই পোষাক যেকোন সময়ে যেকারও কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু আমরা কি জানি, কোথায় থেকে আসলো এই টি-শার্ট বা কেন রাখা হয়েছে এদের নাম টি-শার্ট বা এর উৎপত্তি কোথায় থেকে? তাহলে আসুন এসব নিয়ে একটু জানা যাক..
🔷 প্রথমত আসি কেন রাখা হলো এর নাম টি-শার্ট; ইংরেজি অক্ষর T এর আকৃতি যদি আমরা দেখি, সোজা একটা দাগ আর তার মাথা বরাবর দুই পাশে দুইটা দাগ। ব্যাপার টা কেমন না? হ্যা! এবার যদি চিন্তা করি আমাদের বডি,ঘাড় থেকে নিচের অংশ সোজা এবং বুকের উপরে দুই পাশে দুই হাত। সেই জন্যই এটিকে টি-শার্ট বলা হয়েছে। টি-শার্ট টি এক প্রকারের শার্ট ই বলা চলে।
🔶 টি-শার্ট এর প্রচলন:
১৮৮০-এর দশকে ডিজাইনার ক্যাথরিন হ্যামনেট বড় করে স্লোগান ছাপানো টি-শার্টের ডিজাইন করেন। ১৯৮০-এর দশক থেকে ব্যক্তিগত ভাবাবেগ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে টি-শার্টের ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ২০০০-এর দশকে স্লোগান সমৃদ্ধ টি-শার্টের প্রচলন শুরু হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে টি-শার্ট ব্যবহার করা শুরু হয়, বিভিন্ন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করে ব্যবহার করার প্রচলন শুরু হয়ে থাকে যা এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
🔷 টি-শার্ট এর গড়ন:
টি-শার্টে সাধারণত কোনো বোতাম বা কলার থাকে না। সচারচর এটি হয় গোলাকার ও খাটো হাতাযুক্ত(যেটাকে আমরা বলে থাকি গোলগলা গেঞ্জি) এ ধরনের শার্টের হাতা কাঁধের পাশ দিয়ে সামান্য একটু বাড়তি থাকে, এবং খাটো হাতার ক্ষেত্রে তা কনুই পর্যন্ত হতে পারে। টি-শার্ট ডিজাইনে সামনে কিংবা পেছনে কিংবা উভয় পার্শ্বেই অনেক ছবি, বাণী, কার্টুন চিত্র প্রভৃতি ব্যবহৃত হয় যা টি-শার্টকে আরো অনেক সুন্দর ফুটিয়ে তুলে।
🔶 টি-শার্টের বিভিন্ন অংশের নামঃ
বুকের অংশটুকু থেকে পাঁজর পর্যন্ত একে বলে চেষ্ট। তার নিচের অংশকে বলে ল্যান্থ – HSP। বুকের অংশটুকুকে বলে ফুল সোল্ডার. দুইপাশের হাতার শুরুকে বলে আরম হোল। হাতার দৈর্ঘ্যকে বলা হয় স্লিভ। গলার মোটে অংশটুকুকে বলে রিভ।একটা লোগো থাকে যেটাকে বলা হয় মোটিফ।
🔷 ব্যবহারের বিস্তৃতি :
টি-শার্ট সকল বয়সের নারী-পুরুষের মধ্যেই প্রচলিত ও বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বে তরুণরা প্রায়শই এটি পরিধান করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের ন্যায় পশ্চিমা বিশ্বের দেশসমূহে নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। প্রচন্ড গরমের সময় আরামদায়ক পোশাক হিসেবে এটা ব্যবহৃত হয় প্রচুর।
🔶 টি-শার্টের সাইজসমূহঃ
টি-শার্ট একদম ছোট থেকে একদম বড় সাইজের ও হয়ে থাকে,সাইজের সাংকেতিক চিহ্ন হিসেবে কয়েকটি ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার করা হয়;যেমন S, M,L,XL XXL সহ আরো কিছু বড় সাইজ থাকে।
🔷 টি-শার্ট পরিধানের সুবিধাঃ
টি-শার্ট পরিধান করলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হচ্ছে খুলতে এবং পরিধান করতে সময় খুব কম লাগে যেটি মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এমন একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা জুকারবার্গ নাকি সবসময় টি-শার্ট পড়তো, একদিন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছি তুমি সবসময় টি-শার্ট পড় কেন, জুকারবার্গ এর উত্তর ছিল “আসলে শার্ট পড়লে অনেক বোতাম খুলতে বা লাগাতে হয়,যেটাতে প্রচুর সময় যায়,তাই আমি টি-শার্ট পড়ি যাতে করে খুব কম সময়ে খুলতে বা পরিধান করতে পারি”
এতেই বুঝা যায় টি-শার্ট এর সুবিধা কতটুকু।এটি পড়তে খুব আরামদায়ক বিশেষ করে গরমের দিনে।
🔶 টি-শার্ট নিয়ে বিশ্বরেকর্ডঃ বিশ্বরেকর্ড কথা টা শুনে কেমন হাস্যকর মনে হচ্ছে তাই না!
হ্যা এক্ষেত্রে হয়েছিল একটি মজার বিশ্বরেকর্ড! সনাথ বন্দরা নামের একজন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার একের পর এক ২৫৭টি টি-শার্ট পরিধান করে গিনেস বুকে নিজের নাম লিখান।২২ ডিসেম্বর, ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার কলোম্বের একটি উদ্যানে হাজারো জনতার সামনে তিনি এই কৃতিত্ব দেখান।
🔷 টি-শার্ট এর জনপ্রিয় কিছু ব্র্যান্ড সমূহঃ
Calvin Klein
Everlane
Ecstasy
Pima
Moff & Bow
Janes Perse
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
লেখক পরিচিতি:
আকাশ চন্দ্র দাশ
এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং (১ম ব্যাচ)
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
পীরগঞ্জ,রংপুর।