Monday, November 25, 2024
Magazine
More
    HomeTechnical Textileটেকনিক্যাল টেক্সটাইল

    টেকনিক্যাল টেক্সটাইল

    টেকনিক্যাল টেক্সটাইল বর্তমান সময়ে টেক্সটাইলের একটি যুগান্তকারী শাখা। টেক্সটাইল এখন আর শুধুমাত্র তৈরি পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো টেক্সটাইল ও সমান ভাবে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪% হারে টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেকনিক্যাল টেক্সটাইল খাত 1900 এর দশকের গোড়ার দিকে সিন্থেটিক সুতার উৎপাদন দিয়ে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো- এগ্রোটেক বিল্ডটেক, হোমটেক, ইন্ডুটেক, জিওটেক, মেডিটেক, প্রোটেক, স্পোর্টেক, মোবাইলটেক। নিচে উক্ত শাখাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

    এগ্রোটেক:এগ্রোটেক মূলত কৃষিক্ষেত্রে ফসল সুরক্ষা, ফসলের বিকাশের স্বার্থে, এবং কৃষিকাজে ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগ্রোটেক ফসলের জন্য নানারকম প্রতিকূল আবহাওয়া প্রতিরোধ এবং অনুজীব গুলি থেকে শস্য কে সুরক্ষা প্রদান করে। এগ্রো টেক্সটাইলে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের টেক্সটাইল পণ্য যেমন: কাপড়ের ফ্রম, তন্তু, ফসলের বিকাশের জন্য ছায়ার জাল, তাপ নিরোধক, উইন্ডশীল্ড, সানস্ক্রিন উপকরণ এবং নেট যা মূলত সরবরাহ করে ছায়া এবং সঠিক তাপমাত্রা। এমনকি সরাসরি সূর্যালোক এবং পাখি থেকে গাছপালা কে রক্ষা করে।

    বিল্ডটেক: কনস্ট্রাকশন কংক্রিট এর মধ্যে শক্তি বৃদ্ধির জন্য, ফাউন্ডেশন সিস্টেম, ইন্টেরিয়র কনস্ট্রাকশন উপকরণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, শব্দ প্রতিরক্ষা, সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা ইত্যাদির কাজে এখন টেক্সটাইল ব্যবহৃত হচ্ছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও নান্দনিক বিষয় হল নির্মাণের জন্য বর্তমানে টেক্সটাইলের এক ধরনের বিশেষ ঝিল্লি ব্যবহৃত হচ্ছে একে টেক্সটাইল আর্কিটেকচার বলে। পিভিসি, উচ্চ ধনাত্মক পিইএস, গ্লাস ফাইবার সবই বর্তমানে বিল্ডটেক এ ব্যবহৃত হচ্ছে। যা বর্তমানে বাড়ি তৈরির অন্যতম উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    হোমটেক: গৃহের অভ্যন্তরের নানা রকম প্রসাধনী, আসবাবপত্র, কার্পেটিং, কুশন, বালিশ মেঝে এবং প্রাচীরের আচ্ছাদন, পর্দা ইত্যাদি হোমটেক এর অংশ।
    এমনকি ঘরকে আরো সুন্দর ও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে বর্তমানে হোমটেক ব্যবহৃত হচ্ছে। বড় বড় পাঁচতারা হোটেল গুলোতে গেলে হোমটেক এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ মেলে।

    ইন্ডুটেক: বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিতে নানারকম টেক্সটাইল সামগ্রী যেমন: বলটিং ক্লোথ, কনভেয়র বেল্ট, ড্রাইভ বেল্ট, কম্পিউটার প্রিন্টেড রিবন, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্রাশ ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। যেগুলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেক্সটাইলের অংশ।

    জিওটেক: বর্তমানে রাস্তা, রেলপথ, নদীর বাঁধ, ড্রেন, ক্যানাল, স্পোর্টস ফিল্ড, কনস্ট্রাকশনে জিওটেক ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছু সিনথেটিক ফাইবার ব্যবহারের ফলে এই সকল স্থাপনার স্থায়িত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই জিওটেক প্রযুক্তিকে বর্তমানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ যুক্ত করা হয়েছে।

    মেডিটেক: মেডিকেল টেক্সটাইল হলো নানারকম টেকনিক্যাল ফাইবার এবং বিশেষ ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি সুরক্ষা সামগ্রী। যা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, পলিমারিক ইমপ্ল্যান্ট, মেডিকেল ডিভাইসের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও মেডিকেল টেক্সটাইলে মানুষের জৈব টিস্যু বৃদ্ধির জন্য তন্তু রয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের গবেষকেরা মানব শরীরের কোষ থেকে এক প্রকার টিস্যু আবিষ্কার করেছে যা মানব শরীরে কাঁটা স্থান জোড়া লাগাতে সুতা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এইগুলো আর শরীর থেকে বের করতে হয় না। এমনকি ফেসমাস্ক, ffp2, ফেসিয়াল মাস্ক, সার্জিক্যাল পোশাক, ড্রিপস, গ্লাভস, ভিসার ইত্যাদি মেডিটেক এর অংশ। করোনা সময়ে যা মানুষের সবচেয়ে বেশি কাজে দিচ্ছে।

    প্রোটেক: টেকনিক্যাল প্রোটেক্টিভ ফেব্রিক এর মূল লক্ষ্য হলো মানুষের কর্মস্থলে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। প্রোটেক্টিভ ফেব্রিক গুলো বিভিন্ন প্রকার ফাইবার থেকে তৈরি হয়। বিভিন্ন ফাইবারের মিশ্রণের কারণে ফেব্রিক গুলো নতুন নতুন চরিত্রের সূচনা করে। এমন কিছু ফেব্রিক হলো: মেটা-প্যারা এরামাইডস, উল ভিস্কোজ পলিমাইড, মোডাক্সাইলিক কটন ইত্যাদি। এছাড়াও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, অগ্নি প্রতিরোধী জ্যাকেট, সেফটি বেল্ট, তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধী এপ্রোন সব কিছুই প্রটেক এর অংশ।

    স্পোর্টেক: খেলাধুলার জুতা, নানারকম সুরক্ষা সামগ্রী, ক্লাইম্বিং রোপ, জার্সি, স্পোর্টস ব্যাগ, স্পোর্টস প্যান্ট ইত্যাদি স্পোর্টেক এর অংশ।

    মোবাইলটেক: টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের এই শাখাটি অটোমোবাইল, রেলপথ, জাহাজ, বিমান এবং মহাকাশযান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। প্লেনের উইংস থেকে শুরু করে নানারকম ইঞ্জিনের উপকরণ যেমন এয়ার ডিউক্টস, টাইমিং বেল্ট, এয়ার ফিল্টারস ইত্যাদি টেক্সটাইলের উপকরণ দিয়ে বর্তমানে তৈরি হচ্ছে। নাইলন শক্তি দেয় এবং বিস্ফোরিত শক্তি বেশি হওয়ায় গাড়িতে নাইলনের তৈরি এয়ার ব্যাগ ব্যবহৃত হয়।

    এভাবেই আজ টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের শাখাগুলো বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সমানভাবে অবদান রেখে চলেছে। ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে টেকনিক্যাল টেক্সটাইল নিয়ে কম গবেষণা হলেও বিশ্বে ব্যাপকভাবে বর্তমানে এটি চর্চিত হচ্ছে।

    তথ্যসূত্র- গুগল, উইকিপিডিয়া

    Shourov Kumar karmoker
    Department :Textile Engineering
    Year: 1st
    Semester : 2nd
    Batch : 40th

    Ahsanullah University of Science and Technology

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed