টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকেই মনে করেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কাপড় বানানো শেখানো হয়। কিন্তু এই বিষয়ের সঙ্গে কাপড় বানানোর সম্পর্ক তেমন নেই। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মূলত টেক্সটাইলের মৌলিক বিষয়গুলো পড়ানো হয়। তন্তু থেকে কাপড় বানানোর উপযোগী সুতা তৈরি, কিংবা একটি ফেব্রিককে আরামদায়ক করার যেসব পদ্ধতি রয়েছে, সেসবও এই পড়ালেখার বিষয়। অদাহ্য, তাপরোধী, রাসায়নিকরোধী কিংবা পানিরোধী ফেব্রিকের সম্ভাবনা ও ব্যবহার—এই সবকিছুই পড়ানো হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এটি শুধু প্রকৌশল নয়, দৈনন্দিন জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাক থেকে শুরু করে বিশেষায়িত (যেমন অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের জন্য জ্যাকেট কিংবা মহাকাশচারীদের স্যুট) সবকিছুই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের জন্য এই বিশাল টেক্সটাইল সেক্টরের জোগান দিতে গিয়ে পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সেটা
প্রতিরোধ করাও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ। নিত্যনতুন ডিজাইনের ফ্যাশন উদ্ভাবন থেকে শুরু করে যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা তৈরি পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা—এসব কিছুই পড়ানো হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।
ভবিষ্যৎ কী?
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করে বের হওয়া একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সুবিস্তৃত। টেক্সটাইল সেক্টর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মেডিকেলের উপকরণ, অটোমোবাইল, মহাকাশ, জিও টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন সেক্টরে টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়ছে। আজকাল উন্নত দেশগুলোতে মাইক্রোচিপ থেকে শুরু করে বিশাল ভবন, সেতু, অস্ত্রের কাঠামো, বুলেটরোধী পোশাক—এসব মিশ্র বস্তু উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার দিয়ে করা হচ্ছে। দিন যত যাবে, টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়তেই থাকবে।
যদি চাকরির কথা বলি, তাহলে বলব আমাদের দেশে যে পরিমাণ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন, তার অর্ধেকও আমরা জোগান দিতে পারছি না। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করে যে কেউ খুব সহজেই পোশাকশিল্পের কাজে নিজেকে জড়াতে পারেন। এখন পর্যন্ত আমাদের শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুই ধরনের চাকরিতে অভ্যস্ত। কারখানায় উৎপাদন এবং বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজার। শুরুতে মার্চেন্ডাইজারদের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা যখন অভিজ্ঞ হওয়া শুরু করেন, তখন তাঁদের চাহিদা বাড়তে থাকে, বেতনও।
ক্যারিয়ার কোথায়?
টেক্সটাইল মিল, কারখানা, বায়িং হাউস, মানবসম্পদ, ফ্যাশন ডিজাইনিং, বিপণন সবখানেই টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে শুধু যে টেক্সটাইল মিল, কারখানায় কাজ করতে হবে বিষয়টা তেমন না। আমাদের এখানে যাঁরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন কিংবা মেশিন ডিজাইন, মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে পড়ছেন, তাঁরা টেক্সটাইলের বাইরে অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারেন। কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁর জন্য রয়েছে অপার সুযোগ। আমাদের দেশে এখনো টেক্সটাইল যন্ত্রের নকশা কেউ করছে না। যন্ত্রের জন্য আমাদের বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাদের বানানো যন্ত্রে চলছে আমাদের উৎপাদন। এ ছাড়া কোনো যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেলে আবার বিদেশি কোম্পানি থেকে লোক আসছেন, এসে ঠিক করছেন। সব মিলিয়ে কারখানার তাতে ২০-২৫ দিনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর বিদেশিদের উচ্চ পারিশ্রমিক তো আছেই। কিংবা ধরুন, আমাদের দেশে এখনো তৈরি পণ্যের মান রক্ষণাবেক্ষণের মতো নিজস্ব যন্ত্র বা প্রতিষ্ঠান নেই। যে কয়েকটা কোম্পানি আছে, সবই বিদেশিদের। সেখানে হয়তো আমাদের দেশি প্রকৌশলীরাই কাজ করছেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক বিদেশিরা। এ ছাড়া এখনো আমাদের নিজেদের তৈরি কোনো ভালো মানের ‘ডাইস কেমিক্যাল’ নেই। বিদেশ থেকে আমদানি করেই কাজ চলছে। এখনকার তরুণ উদ্যোক্তারা চাইলে এই খাতগুলো নিয়েও ভাবতে পারেন।
ইদানীং অনেকেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছেন। কেউ স্নাতকোত্তর, পিএইচডি করে দেশে ফিরে এসে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন, কেউবা সেই দেশেই চাকরি খুঁজে নিচ্ছেন। বিসিএসও দিচ্ছেন অনেকে।
কারা পড়বে?
টেক্সটাইল খাতে সফলতার সুযোগ যেমন বেশি, তেমনি সফল হতে চাইলে চ্যালেঞ্জটাও অনেক বেশি নিতে হয়। সেই হিসেবে যাঁরা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন, তাঁদের টেক্সটাইল খাতে স্বাগত। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি বড় অংশজুড়ে আছে রসায়ন। যন্ত্রপাতির জন্য প্রয়োজন পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান। সেই হিসেবে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান পড়তে কিংবা এ নিয়ে ভাবতে যাঁদের ভালো লাগে তাঁরাও পড়তে পারেন। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে যাদের ভীতি নেই, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের জন্য পড়াশোনার বিষয় হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং খুব ভালো একটি বিষয় হতে পারে।
তথ্যসুত্র: গুগল, উইকিপিডিয়া।
Writer Information:
A. Rouf Ahmmad
1st year
World University of Bangladesh
Thank you.