পানি অপর নাম জীবন। পৃথিবী তে যত চিরন্তন সত্য বিদ্যমান রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা জানি যে এই সম্পূর্ণ পৃথিবীর বিশাল অংশ পানি দিয়ে আবৃত। কিন্তু এত বিপুল পরিমান পানির মধ্যে মাত্র ২.৫% পানি পানযোগ্য। পৃথিবীর সব শিল্পকারখানাতেই পানির প্রয়োজন। প্রতিটি শিল্পকারখানাতেই বিপুল পরিমান পানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হল এই শিল্প কারখানাতে যে পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা হল আমাদের সুপেয় পানি। কারন কারখানার বড় বড় যন্ত্রপাতি তে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি ব্যবহার করে তা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে শিল্পপতিরা তাদের কারখানায় খাবার পানি ব্যবহার করে থাকে।যার ফলে ধারণা করা যায় অল্প কিছু দিনের মধ্যে পুরো পৃথিবী খাবার পানির সংকটে পরতে যাচ্ছে।
আমাদের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতেও প্রচুর পরিমান পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিচের তথ্য গুলো দেখলে তা সহজে বুঝা যাবে। তথ্যগুলোতে কোন কাপড় তৈরিতে কি পরিমান পানির প্রয়োজন(কেজি/প্রতি কেজি কাপড়) তা দেয়া হল।
কটনঃ ২৫০-৩৫০ কেজি
উলঃ ২০০-৩০০ কেজি
নাইলনঃ ১২৫-১৫০ কেজি
রেয়নঃ ১২৫-১৫০ কেজি
পলিয়েস্টারঃ ১০০-২০০ কেজি
এক্রেলিকঃ ১০০-২০০ কেজি
এত বিপুল পরিমান পানির পুরোটাই শিল্প বর্জ্যে পরিণত হবে যদি না পানি গুলোকে পরিশোধন না করা যায়। পানি শোধন এর জন্য বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় যে প্রযুক্তি টি ব্যবহৃত হচ্ছে তা হল ETP।
ETP কি ?
ETP পূর্ণরূপ হচ্ছে Effluent Treatment Plant যার অর্থ দাঁড়ায় বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনা। শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য পদার্থকে যে Plant এর মাধ্যমে পরিশোধন করে সাধারন পানির মত করে পুনঃব্যবহার করার উপযোগী করে বা শিল্প কারখানা থেকে নির্গত পানি যেন পরিবেশকে দূষিত করতে না পারে সে জন্য যে প্লান্ট ব্যবহার করা হয় তাকেই ETP plant বলে। দূষিত পানি উৎপাদনকারী সকল কারখানতেই ETP ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। বড় বড় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানেই ETP plant আছে।
টেক্সটাইল শিল্পে ৩ টি উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করা হয়ে থাকে। এই ৩ টি প্রসেস হলোঃ
১) Filtration Using Membrane: মেমব্রেন ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধকরন আবার ৩টি উপায়ে করা সম্ভব। তা হলো Reverse Osmosis, Nanofiltration, Microfiltration।
২) Chemical Treatment
৩) Biological Treatment
তাছাড়া ETP তে পানি বিশুদ্ধকরনের ৪ টি স্তর রয়েছে। স্তর গুলো হলোঃ
১) Pre-treatment বা Priliminary Treatment
২) Primary treatment
৩) Secondary treatment
৪) Tertiary treatment
একটি ETP তে নিন্মোক্ত উপায়ে পানি পরিশোধন হয়ে থাকেঃ
১। প্রাথমিক ভাবে পানিকে ফিল্টার করে নেয়া হয়।
২। ঠাণ্ডা করে মিক্সিং করা হয়।
৩। এসিড বা অ্যালকালির সাথে নিউট্রালাইজিং করা হয়।
৪। পানিতে ক্যামিকাল ঘনীভূত করা হয়।
৫। তৈলাক্ত অংশ আলাদা করা হয়।
৬। পুনরায় ফিল্টার করে ড্রেইনে পরিবিহন করা হয়।
ETP এর গুরুত্বঃ
১) পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।
২) এটি পানিকে পরিষ্কার এবং নিরাপদ পুনঃব্যবহারযোগ্য পানিতে পরিণত করে।
৩) এটি শিল্পকারখানা থেকে বর্জ্য উপাদান হ্রাস করার সর্বোত্তম উপায়।
৪) ইটিপি এর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ দ্বারা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব।
নিচে ডাইং শিল্পে পানি ব্যবহার এর পর দূষিত পানির বিভিন্ন গুণাগুণ এবং ETP ব্যবহারের পর বিশুদ্ধ পানির গুণাগুণ উল্লেখ করা হলো। এই তথ্য গুলো দ্বারা খুব সহজে ETP এর গুরুত্ব বুঝা সম্ভব। ডাইং শিল্পে পানি ব্যবহারের পর পানির গুনাগুনঃ
pH: ৯-১১
BOD: ৩০০মিলিগ্রাম/লি
COD: ২০০ মিলিগ্রাম/লি
SS: ২০০ মিলিগ্রাম/লি
Colour: গাঢ় বাদামি ETP দ্বারা পানিশোধনের পর পানির গুণাগুণঃ
pH: ৭-৮
BOD: ৩০ মিলিগ্রাম/লি
COD: ১৬০ মিলিগ্রাম/লি
SS: ৩০ মিলিগ্রাম/লি
Colour: হালকা বাদামি অর্থাৎ ইটিপি ব্যবহারের পর পানির গুণাগুণ আবার আগের মত করা সম্ভব। ফলে বিশুদ্ধ পানি পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
সকল কলকারখানায় ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত পানি নদী, খাল, বিল ও কৃষিজমিতে অবাধে ছাড়া হয়ে থাকে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে বলা হয়েছে, কলকারখানার কেমিক্যালযুক্ত ময়লা পানি তরল বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি প্ল্যান্ট ব্যবহার করে আবার সেই পানি কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহারে প্রচুর টাকা প্রয়োজন হওয়ায় অধিকাংশ কারখানার ইটিপি প্ল্যান্ট বন্ধ থাকে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক কারখানাতে লোক দেখানো ইটিপি প্ল্যান্ট তৈরি করে রাখা হয়। বছরে একবারও ইটিপি ব্যবহার করে না এমন কারখানার সংখ্যাই বেশি। আর এই দূষিত পানির কারণে নদীর পানি এতটাই দূষিত হচ্ছে যে, সেখানে জলজ প্রাণের অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে পড়ছে। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরই নদীকে মৃত বলে ঘোষণা করছে । কৃষিজমিতে ফসল আবাদ করা যাচ্ছে না। এতে মানবশরীরে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ বাসা বাঁধছে। প্রতিটি কলকারখানায় লোক দেখানো ইটিপি প্ল্যান্ট না রেখে তার সঠিক ব্যবহার করুন। তা না হলে আমাদের নদী ও পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাবে। প্রতিটি কলকারখানায় বাধ্যতামূলক ইটিপি প্ল্যান্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি থাকতে হবে, তার জন্য আরও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। এতে নদী ও পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবনও রক্ষা পাবে।
Source:
1. www.neoakrithi.com
2. www.textilefashionstudy.com
3. www.textiletoday.com.bd
Writer information:
Omar Saif
Department of Textile Engineering (3rd Batch)
Jashore University of Science and Technology