সৃষ্টির প্রাচীনকাল হতে শুরু করে আজ অবধি মানুষের বেঁচে থাকা,দৈনন্দিন কাজেকর্মে টেক্সটাইল বা পোশাক একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে যা একজন মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। সেই ধারাবাহিকতায় টেক্সটাইলের বিচরণ শুধু এক দুইটি বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।দিন দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ বাড়ছে।সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে আজ আমি আলোচনা করব মেডিক্যাল টেক্সটাইল নিয়ে।
মেডিক্যাল টেক্সটাইলের আদ্যপ্রান্ত:
মেডিক্যাল টেক্সটাইল মূলত বায়োমেডিক্যাল টেক্সটাইল নামে পরিচিত।মেডিক্যাল টেক্সটাইল হলো টেকনিক্যাল টেক্সটাইল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন বিজ্ঞানের দ্বারপ্রান্ত, যা মানব জাতিকে করছে আরো উন্নত এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানকে দিচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কারের সংবাদ। মেডিক্যাল টেক্সটাইলের উদ্দেশ্য হলো মানুষের স্বাস্থ্য ও সুখের উন্নতি নিশ্চিত করা। মেডিক্যাল টেক্সটাইলের বিস্তার স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যবিধি, নতুন ফাইবারের টেকনোলোজি এবং কৃত্রিম মেডিক্যাল টেক্সটাইল পণ্যে।মূলত, মেডিক্যাল টেক্সটাইল এর চাহিদার জন্যই টেক্সটাইল সেক্টরে এর উন্নতি দ্রুতগতিতে বাড়ছে এবং এর ভবিষ্যৎ চাহিদা ও মূল্য ক্রমশ অগ্রসরমান।
মেডিক্যাল সেক্টরে টেক্সটাইলের ব্যবহারের সূচনা:চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাপড়ের ব্যবহার হাজার হাজার বছর পূর্বে শুরু হয় যখন ক্ষত বন্ধের কাজে এর বিকাশ ঘটেছিলো। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০-৩০০০ তে অস্ত্রোপচারের অগ্রগতির সাথে আরো বিকাশ ঘটেছিলো। আর, এই ক্ষত ক্লোজগুলো প্রাকৃতিক উপকরণ যেমন, শণ, সিল্ক,লিনেন স্ট্রিপ এবং তুলা থেকে তৈরি। এছাড়া, বিভিন্ন কেমিকেল ও প্রাকৃতিক উপাদান একত্রিত করেই এই ক্ষত বন্ধ করার চেষ্টা করা হতো। এছাড়াও খ্রিষ্টপূর্ব ২১০০অব্দে সুমেরীয়ান সভ্যতা তাদের চিকিৎসা শাস্ত্রে উল্লেখ করেছে সেইসময়কার চিকিৎসা শাস্ত্রে টেক্সটাইলের কথা।
এখন আসাযাক কি ধরণের কাপড় ব্যবহৃত হয় এই মেডিক্যাল টেক্সটাইল বিভাগে:বিভিন্ন রকমের কাপড় ই ব্যবহৃত হয় টেক্সটাইলে। কিন্তু প্রধানত ৪ধরণের কাপড়ের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য:
Woven Non-woven Braided Knitted
মেডিক্যাল সেক্টরে টেক্সটাইল পণ্যের ব্যবহার:
Wound Care: Wound care শরীরের ইনফেকশনে বাধা দেয় ক্ষত স্থান থেকে রক্ত শোষণের মাধ্যমে।
Bondge: Bondage গুলো শরীরের ক্ষত স্থানকে বাইরের ধুলাবালি ও জীবাণু থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং wound care এর সঠিকস্থানে বসানোর কাজেও ব্যবহৃত হয়।ব্যান্ডেজ তৈরিতে woven,non-woven ও knitted fabric ব্যবহৃত হয়।
Extra coporeal Device: Extra coporeal device হলো মেক্যানিকাল অর্গান, কৃত্রিম পরিশুদ্ধকরণ, কৃত্রিম কিডনি,কৃত্রিম লিভার ইত্যাদি। আর আধুনিক টেক্সটাইল টেকনোলোজি এসব তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
মানব টেক্সটাইল: এটি মূলত মানবদেহের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ প্রতিস্থাপনের জন্য কৃত্রিম সুতোর সাহায্যে শরীর সেলাই করে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সৃষ্টি লাগবের উদ্দেশ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি মানুষের কোষ থেকে তৈরি সুতা দিয়ে পূরণ করা হয়,তখন এটি সহজেই শরীরে মিশে যায়।
Implacable Material: এটি শরীরের মেরামতের কাজে ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ অপসারণ করার কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। যেমন: Artificial Ligament. Manmade fibre যেমন polyester ব্যবহার করে Artificial ligament তৈরি সম্ভব।
Contact lenses: মেডিক্যাল টেক্সটাইল এ এটি অন্যতম একটি বিপ্লব। contact lenses চোখের কালার পরিবর্তন করে অধিক মাধুর্য করে তোলে। এটির পানি শোষণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়।
Artificial Cornea: এটি অন্ধত্ব দূরীকরণ এ ব্যবহৃত হয়।এক্ষেত্রে ব্যবহৃত টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালগুলো flexible ও sufficient Mechanical strength হতে হবে।
Artificial kidney: এটিতে Hollow viscose, polyester ব্যবহৃত হয়। এটি রক্ত থেকে অপদ্রব্য দূর করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
Mechanical lung: এটিতে hollow viscose ব্যবহৃত হয়।এটা রক্ত থেকে কার্বনডাই অক্সাইড দূর করে এবং পরিষ্কার অক্সিজেন পরিবহণে সাহায্য করে। এছাড়াও, কৃত্রিম টেন্ডার,ব্রেকড, লিগামেন্ট, কারটিলেজ, ত্বক, ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ, অর্থোপেডিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমান বাংলাদেশ ও বিশ্বে মেডিক্যাল টেক্সটাইল এর ব্যবহার: প্রায় ১০০বছর পরে ২০২০ সালে পৃথিবীর ১৯৯টি দেশে যে মহামারি করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে, তার সেবা শুশ্রূষাতে মেডিক্যাল টেক্সটাইল এর ব্যবহার লক্ষণীয়। ডাক্তাদের PPE(Personal protection Equipment), Disposal gloves, mask থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই এখন টেক্সটাইল এর চাহিদা বড়ই ঈর্ষান্বীত। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ই এই টেক্সটাইল কে তাদের মেডিক্যাল সেক্টরে অন্তঃর্ভূক্ত করে মহামারি করোনাভাইরাস কে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে বছরের প্রথম দিকে টেক্সটাইল শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো করোনাভাইরাস এর কারণে, কিন্তু সেই লাঘব গুছিয়ে আবার মেডিক্যাল টেক্সটাইল এগিয়ে যাচ্ছে সম্মুখ গতিতে পুরো দেশজুড়ে। আশা করা যায়, একদিন মেডিক্যাল টেক্সটাইল এ ও সম্ভব হবে অনেক অজানা রহস্য কিংবা নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন।।।।
ফজিলাতুন্নেসা ইমি
সিটেক (১ম বর্ষ)