Tuesday, December 3, 2024
Magazine
More
    HomeMotivationalটেক্সটাইল ও টেক্সটাইল শিক্ষা নিয়ে যত কথা!

    টেক্সটাইল ও টেক্সটাইল শিক্ষা নিয়ে যত কথা!

    কে.এম.ওলিউল্লাহ মনির।
    Textile Engineering বা বস্ত্রপ্রকৌশল বর্তমান বিশ্ব ও বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সেক্টর হলেও আমাদের দেশের ছাত্র সমাজের কাছে বা সাধারণ মানুষের কাছে টেক্সটাইল সেক্টরের ব্যাপারে সঠিক ধারণা নাই । বিশেষ করে যারা নতুন এই বিষয়ে তারা নিজেরাও সঠিক ধারণা না পেয়ে বা কিছু লোকের শোনা কথায় নবীন ছাত্রদের মাঝে কনফিউশন জাগ্রত হয়ে থাকে। যাইহোক বর্তমান বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে এই সেক্টরের সম্ভাবনাময় দিকগুলো নিয়েই আজকের এই আলোচনা। 
    একটা সাধারণ প্রশ্ন যে কেউই যখন তখন করতে পারে সেটি হলো অনেক বিষয় থাকতে কেন, কিসের, প্রয়োজনে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট খোলা হল। এটার উত্তর অবশ্যই হওয়া উচিত বাংলাদেশে এই সাবজেক্টটি আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এটাকে যুগান্তকারী ঘটনা বললে সাধারণ মানুষ হয়তো ভুল বলে গালিগালাজ করবে না। কারণ বাইরের দেশের সাথে যেই খাত দিয়ে  বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা করতে পেরেছে এবং বিদেশের মাটিতে যে খাতকে গর্বের সাথে উপস্থাপন করে নিজের দেশকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে সেই খাতকে আরও উন্নত ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চালাতেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং  সাবজেক্টের উপর সরকার গুরুত্ব আরোপ করেছে। একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কে অবশ্যই চারটি বেসিক পার্ট সম্পর্কে ন্যূনতম জানতে হবে। বেসিক পার্ট গুলোতে যথাক্রমে 1.Yarn manufacturing2.Fabric manufacturing 3.Wet processing 4.Garments  manufacturing টেক্সটাইলের এই জিনিসগুলো ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত সম্পূর্ণ টেক্সটাইল ইঞ্জিনারিং প্রসেস। তা হলো।1.Textile Engineering  System  2.Textile  Engineering Management 3.Fashion  Designing 4.Machine Designing 5.Polymer Engineering  6.Polymer of bio-materials 7.Geo-textile 8.Medical  textile 9.Textile  composite :এটি ডিফেন্স একাডেমী এর গবেষণায় একটি বড় অংশ। 10.Nano Textile technology :বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও গবেষনার সবচেয়ে বড় এটিই।বর্তমান সময়ের নাসার রিসার্সের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় এই ন্যানো টেক্সটাইল এর জন্য। কারণ এটাকে ভিত্তি করে নাসা ইতিমধ্যে অনেক বড় বড় প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছে এবং আরো নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।
    এখন যদি আমরা বর্তমান বাংলাদেশে চাকরির ক্ষেত্রে বিবেচনা করি তাহলে এই সেক্টরটি অন্য সেক্টর থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের যতগুলো টেক্সটাইল কারখানা রয়েছে তার বেশির ভাগেরই অবস্থান ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর। এছাড়াও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কারখানা রয়েছে। সে বিষয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। 
    আমরা সকলেই হয়তো জানি সমগ্র বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় অর্থাৎ চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরের পরবর্তী চীন হিসেবে আখ্যা দেয়। এর প্রধান কারণ হলো ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ মোট ৩৩০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে 9.7%  বেশি। তাহলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল সেক্টরের প্রয়োজনীয়তা কেমন তা হয়তো আপনার বুঝতে আর বাকি নেই। আর এই সেক্টর কে বাঁচিয়ে রাখতে হলে টেক্সটাইল শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
    পূর্বেই বলেছি বাইরের দেশের সাথে বাংলাদেশে যে খাত নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পেরেছে সেটি হলো আমাদের সকলের গর্ব ও অহংকার এর  টেক্সটাইল সেক্টর। 
    তৈরি পোশাক খাতে হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আমরা আগে বাণিজ্যিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও কানাডায় পণ্য রপ্তানি করতাম কিন্তু এখন আমরা পূর্ববর্তী রাষ্ট্রসহ চীন রাশিয়া জাপান অস্ট্রেলিয়া তুরস্ক এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পোশাক পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছি।এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করা হয়ে থাকে। 
    একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং তাদের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আজ টেক্সটাইল পণ্যসামগ্রীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগিং শুরু করতে পেরেছে। এরা জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের বিষয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জিন্স ব্যান্ড  H & M বছরে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ থেকে নিয়ে থাকে । ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রেড ওয়ান জার্সি, রিবক, নাইকি এবং ন্যাটোর ক্যামোর্ক ড্রেস সহ বিশ্বের  বিখ্যাত কোম্পানি এই দেশের টেক্সটাইল প্রোডাক্টের উপর নির্ভরশীল।
    বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠনের  (বিজিএমইএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত সাড়ে পাঁচ বছরে ১২৫০ কারখানা বন্ধ হয়েছে কিন্তু চালু হয়েছে নতুন ৩০০ থেকে ৩৫০ টি কারখানা।এর মধ্যে ৮০ টি পরিবেশবান্ধব কারখানা বর্তমান বাংলাদেশের পোশাক কারখানার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ টি।
    এবার আসি এই সেক্টরের চাকরির ক্ষেত্রে  পোশাক কারখানার ছাড়াও এই খাতে আরো নানা সুযোগ রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ১.বস্ত্র পরিদপ্তর২. বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট৩. বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন৪.বাংলাদেশ  টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন ৫.জুট ডাইভারসিফিকেশন এন্ড প্রমোশন সেন্টার ৫.অভ্যান্তরীন সম্পদ বিভাগ( অর্থ মন্ত্রণালয়) ৬.বাংলাদেশের সকল ব্যাংক (Assistant engineer Textile) ৭.বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস৮. বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন৯. তুলা উন্নয়ন বোর্ড১০ বাংলাদেশে রেলস উন্নয়ন বোর্ড ১১.বাংলাদেশের সরকারি টেক্সটাইল কলেজসমূহ।বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের ধরনের বৈচিত্র্য আরো বেশি। ১.অটোমোবাইল কোম্পানি ২.অ্যারোনেটিকাল মেডিকেল টেক্সটাইল কোম্পানি৩.বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ৪.বিভিন্ন দেশের  কান্ট্রি ম্যানেজার হওয়া সহ আরো যে সকল সুযোগ রয়েছে তা হলো –ফ্যাশন ডিজাইনার -মার্চেন্ডাইজার – কাটিং -প্রিন্টিং -ডায়িং-নিটিং-উইভিং-স্পিনিং -ল্যাব টেস্টিং-ওয়াশিংএছারাও বায়িং হাউসগুলো প্রোডাকশন লিডার, কোয়ালিটির লিডার, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টেয়ো রয়েছে কাজের সুযোগ। 

    এবার আসি বাংলাদেশের কোথায় কোথায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। -পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় 
    ১. বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা।( আসন সংখ্যা ৬০০)২. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।(আসন সংখ্যা ৬০)৩. মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।( আসন সংখ্যা ৬০)৪.যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত পাবলিক ইন্জিনিয়ারিং কলেজ সমূহ 
    ১.টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম। (আসন সংখ্যা ১২০টি)২. পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।( আসন সংখ্যা ১২০ টি)৩. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নোয়াখালী। ( আসন সংখ্যা১২০টি)৪.শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঝিনাইদহ। (আসন সংখ্যা ১২০ টি)৫.শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল।( আসন সংখ্যা ১২০ টি)৬.ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল কলেজ, রংপুর। (আসন সংখ্যা ১২০টি)
    বিশেষায়িত :→জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা নিটার। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিটের  অধিভুক্ত)  
    →বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টাঙ্গাইল (ডিপ্লোমাধারীদের বিএসসি করার জন্য) 
    এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। 
    তবে বাংলাদেশ পাবলিক প্রতিষ্ঠানে এমএসসি ও উচ্চ গবেষণার সুযোগ রয়েছে কেবল বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।এছাড়া বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান  জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা নিটার (NITER= National Institute of Textile Engineering and Research) ।এ ব্যতীত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার সুযোগ নেই। তবে উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনকারীর সংখ্যার বিপরীতে সিট সংখ্যা খুবই নগণ্য। এছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স( এমএসসি) করার সুযোগ রয়েছে। 
    বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী বিএসসি অনার্স শেষ করে স্কলারশিপ নিয়ে কানাডা ইতালি অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য চীন জাপান জার্মানির মতো দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমায়। দেশের বাইরে এমএসসি, পিএইচডি ডিগ্রী নেওয়ার জন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়: 1.University of Manchester(UK) 2.University of Bolton (UK) 3.North Carolina State University (USA)4.Kaunas University of Technology (USA)5.Wuhan Textile University ( China) 6.Dresden University (Germany) 7.Deakin University (Australia) 8.Boros University (Sweden) 9.Politecnico di Torino ( Italy) 10.IIT, Indiaএছাড়া  দেশের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
    বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় সেক্টরকে আরো সমৃদ্ধ করতে হলে প্রয়োজন দক্ষ জনবল। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এবং বাংলাদেশের টেক্সটাইল  শিক্ষা ব্যবস্থা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছিয়েছে। সরকারের নানামুখী উন্নয়নের অংশহিসেবে এই সরকারের আমলেই বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বরিশালডিপ্লোমা ইনস্টিটিউশন থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রূপান্তর করা হয়েছে এবং সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ কামাল টেক্সটাইল  ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঝিনাইদহ এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রংপুর সহ ছোট-বড় অনেক   টেক্সটাইল ইনস্টিটিউশন।
    আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের গার্মেন্স তথা টেক্সটাইল শিল্প ও টেক্সটাইল পড়াশোনা বিশ্বের সকলের মননিবেশ আকৃষ্ট করবে।

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed