আর্টিকেলটি পড়ে আমরা কি শিখতে পারবো :
☆ টেক্সটাইল টেস্টিং কি ?
☆ টেক্সটাইল টেস্টিং এর উদ্দেশ্য।
☆ টেক্সটাইল টেস্টিং এর প্রয়োজনীয়তা।
☆ টেক্সটাইল টেস্টিং ফলাফল প্রভাবিত করার নিয়ামক সমূহ সম্পর্কে।
☆ ফাইবার এর পরীক্ষার নাম সমূহ।
☆ সুতার পরীক্ষার নামসমূহ।
☆ কাপড়ের পরীক্ষার নাম সমূহ।
☆ বিভিন্ন টেস্টিং এর জন্য পরীক্ষণীয় যন্ত্রপাতি সমূহ সম্পর্কে।
☆ বিভিন্ন পরীক্ষার সহায়ক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে।
টেক্সটাইল টেস্টিং এর সংজ্ঞা :
টেস্টিং শব্দের অর্থ হলো পরীক্ষা, টেস্টিং এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোনো ম্যাটেরিয়ালস সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা কার্য সম্পাদন করে থাকে যে তাহা বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কিনা। তাই বলা যায় যে প্রক্রিয়ায় টেক্সটাইল দ্রব্য যেমন- ফাইবার, সুতা, কাপড় ইত্যাদির বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ তথা পরীক্ষা করা হয় সেই প্রক্রিয়াকে টেক্সটাইল টেস্টিং বলে।
যেকোন টেস্টিং এর পিছনে কোন কারণ রয়েছে। টেক্সটাইল টেস্টিং কেন করা হয় বা এর উদ্দেশ্য কি?
☆ কাঁচামালের গুণাগুণ পরীক্ষা করা
☆ উৎপাদনের প্রতিটি ধাপের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা
☆ গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য তৈরীর জন্য আদর্শ মান নির্ণয় করা
☆ প্রসেস কন্ট্রোল এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে যাতে
☆ উৎপাদন ব্যাহত না হয় তার ব্যবস্থা করা
☆ উৎপাদিত পণ্য পরীক্ষা করে ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জন করা
☆ উৎপাদিত দ্রব্যের সঠিক মান বজায় রাখতে সহায়তা করা
☆ প্রয়োজনবোধে ত্রুটি নির্ণয় করে সমাধান করা।
টেক্সটাইল টেস্টিং এর প্রয়োজনীয়তা :
☆ গবেষণার জন্য: টেক্সটাইলে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে গবেষণা করতে হয় আর এই গবেষণা কাজে সফলতা আনতে টেক্সটাইল টেস্টিং করতে হয়।
☆ কাঁচামাল নির্বাচনের জন্য: বাইরে চাহিদামতো কাঁচামাল নির্বাচন করতে অর্থাৎ তিনি কোন ধরনের কাঁচামাল চান সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য অবশ্যই টেক্সটাইল টেস্টিং প্রয়োজন রয়েছে । কেননা টেক্সটাইল টেস্টিং ছাড়া ভালো মানের কাঁচা মাল নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
☆ প্রসেস কন্ট্রোল এর জন্য: কোন একটা বিষয় সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য টেক্সটাইল টেস্টিং প্রয়োজন কেননা কোন কাজে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় তার জন্য তার গুণগতমান যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
☆ পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য: টেক্সটাইল শিল্পের প্রসারের জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি তৈরি করতে টেক্সটাইল টেস্টিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।
☆ উৎপাদন দ্রব্য পরীক্ষার জন্য: কোন একটি পোশাক বা দ্রব্য উৎপাদনের পর তার মান যথাযথ আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়।
☆ বিশেষত্ব পরীক্ষার জন্য: কোন একটি পোশাক কোন কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে তা সেই কাজের জন্য উপযুক্ত কিনা সেটি যাচাই-বাছাই করতে টেক্সটাইল টেস্টিং করা হয়।
টেক্সটাইল টেস্টিং করার সময় তার ফলাফল প্রভাবিত করতে পারে এমন কিছু নিয়ামক সমূহ:
☆ নমুনায়ন: নমুনা যথাযথ না হলে টেক্সটাইল টেস্টিং এর ফলাফল সঠিক পাওয়া যাবে না।
☆ পরীক্ষণের সময় আবহাওয়াগত অবস্থা: টেক্সটাইল টেস্টিং করার সময় যদি আবহাওয়া অনুকূল না থাকে তাহলে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয় অর্থাৎ কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় না।
☆ পরীক্ষণের পদ্ধতি: সঠিক ফলাফল প্রাপ্তির পূর্বশর্ত সঠিক পরীক্ষণ পদ্ধতি পরীক্ষণ পদ্ধতি উল্টাপাল্টা হলে ফলাফল যথাযথ আসবেনা।
☆ পরীক্ষণের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি: পরীক্ষণের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে ফলাফল সঠিক হবে না।
☆ পরীক্ষকের দক্ষতা: কোন কাজে সফল হতে গেলে বা কোন পরীক্ষায় সঠিক তথ্য পেতে পরীক্ষককে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে কেননা পরীক্ষকের যদি বিষয়টা সম্পর্কে ধারণা না থাকে বা তিনি যদি দক্ষ না হন তাহলে পরীক্ষা সফল হওয়া যাবে না, ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।
টেক্সটাইল দ্রব্য বা কাঁচামাল যেমন ফাইবার, সুতা, কাপড় ইত্যাদির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করার জন্য আলাদা আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন:
ফাইবার টেস্ট:
☆ আশঁ শনাক্তকরণ করতে হবে অর্থাৎ এটি কোন ধরনের ফাইবার বা আঁশ
☆ গ্রেডিং: ফাইবারের গ্রেডিং নির্ণয় করতে হবে অর্থাৎ ফাইবারটি কোন গ্রেডিং এর।
☆ আঁশের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে হবে ।
☆ শক্তি ও প্রসারণ: ফাইবার টি কেমন শক্তিশালী এবং এর প্রসারণশীলতা আছে কিনা তা দেখতে হবে
☆
সুক্ষতা বা লিনিয়ার ডেনসিটি
☆ পরিপক্কতা
☆ ট্রাস, নেপস
ইয়ার্ন বা সুতা টেস্ট:
☆ সুতার কাউন্ট বা লিনিয়ার ডেনসিটি কেমন তা জানতে হবে
☆ প্রতি একক দৈর্ঘ্যের পাক সংখ্যা হিসাব করতে হবে।
☆ শক্তি ও প্রসারণশীলতা কেমন জানতে হবে।
☆ সুতার আকৃতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে।
☆ সমতা ও নিয়মানুবর্তিতা অর্থাৎ সুতা এক জায়গায় চিকন এক জায়গায় মোটা হওয়া যাবে না সব জায়গায় সমান হতে হবে।
☆ হেয়ারিনেস বা সুতার লোমশভাব।
ফেব্রিক বা কাপড় টেস্ট:
☆ শক্তি ও প্রসারণ : কাপড় কিরকম শক্ত বা টান দিলে প্রসারিত হয় কিনা।
☆ কাপড়ে প্রস্থ নির্ণয় করতে হবে।
☆ পুরুত্ব ভেবে দেখতে হবে কাপড় মোটা না চিকন।
☆ কাপড়ের প্রতি একক দৈর্ঘ্যে টানা সুতা এবং পোড়েন সুতার সংখ্যা হিসাব করতে হবে।
☆ কাপড়ে কত কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়েছে।
☆ একক ক্ষেত্রফলের কাপড়ের ওজন অর্থাৎ জিএসএম হিসাব করতে হবে।
☆ কাপড়ের ডিজাইন ও গঠন।
☆ তাপীয় গুণাবলী ।
☆ ক্রিজ রেজিস্ট্যান্স ও রিকভারি।
☆ কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা কতটুকু।
এছাড়াও আরো কিছু টেস্ট করা হয়।
১. কালার ফাস্টনেস টু ওয়াশ
২. কালার ফাস্টনেস টু ওয়াটার
৩. কালার ফাস্টনেস টু পারস্পিরেশন
৪. কালার ফাস্টনেস টু স্যালিবা
৫. র্যাবিং টেস্ট।
৬. ক্রস স্টেইনিং টেস্ট
৭. পিলিং টেস্ট
৮. ফেনলিল ইয়োলিং টেস্ট
৯. পি এইচ টেস্ট
১০. ব্লাস্টিং টেস্ট
১১. ফাইভ টাইম ওয়াশ টেস্ট
১২. স্পাইলিটি টেস্ট
১৩. সাবলাইমেশন টেস্ট
১৪. লাইট বক্স টেস্ট
প্রত্যেকটি টেস্ট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে বর্ননা করা হল:
1) কালার ফাস্টনেস টু ওয়াশ: ফেব্রিক ওয়াশ করার পর তার কালার ঠিক থাকে কিনা তাটেস্ট করার জন্য এই টেস্ট করা হয়।
2) কালার ফাস্টনেস টু ওয়াটার: ডাইড , প্রিন্ট্রেড ফেব্রিকের কালার পানিতে ঠিক থাকে কিনা তাটেস্ট করার জন্য এই টেস্ট করা হয় ।
3) কালার ফাস্টনেস টু পারস্পিরেশন: ঘামে ফেব্রিকের কালার ঠিক থাকে কিনা তা জানার জন্য এইটেস্ট করা হয়। এই টেস্ট দুইটি মিডিয়ামে করা হয়, যেমন: এসিডিক ও আলকালি মিডিয়ামে। মেইলের ঘাম আলকালিমিডিয়ামে টেস্ট করা হয় এবং ফিমেইলের ঘাম এসিডিকমেডিয়ামে টেস্ট করা হয়।
4) কালার ফাস্টনেস টু স্যালিবা: এই টেস্ট সাধারণত কিডস গার্মেন্টসে করা হয়। কিডসগার্মেন্টসে এই টেস্ট করা বাধ্যতামূলক। বাচ্চাদের মুখের লালাফেব্রিকের কালার নস্ট করে কিনা তা জানার জন্য কিডসগার্মেন্টেসে এই টেস্ট করা বাধ্যতামূলক।
5) র্যাবিং টেস্ট: ফ্রিকশনের ফলে ফেব্রিকে কালার উঠে কিনা তা জানার জন্যএই টেস্ট করা হয়। এই টেস্ট দুই অবস্থায় করা হয়। যেমন: ওয়েট ও ড্রাই অবস্থায়। এর কারণ হচ্ছে ফেব্রিক ওয়েট ও ড্রাইঅবস্থায় ফেব্রিকের কালার উঠে কিনা তা জানার জন্য এইটেস্ট করা হয়। একে যথাক্রমে ওয়েট ড্রাই রাবিং টেস্ট বলা হয়।
6) ক্রস স্টেইনিং টেস্ট: মাল্টি ফেব্রিক বা গার্মেন্টসে ওয়াশের পর কালার ছড়িয়ে পড়েকিনা বা দাগ পড়ে কিনা তা জানার জন্য এই টেস্ট করা হয়।
7) পিলিং টেস্ট: ফেব্রিকের সাথে ফেব্রিকে ফ্রিকশনের ফলে ফেব্রিকের ছোটফাইবার গুলো জোট বেঁধে ছোট ছোট গুটির সৃষ্টি করে, একে পিলিং বলে। এই পিলিং এর ফলে ফেব্রিকের কোয়ালিটি খারাপ হয়, কোয়ালিটি খারাপ হওয়ার কারনে বায়ার তা নিতে চায় না। তাই বায়ারের চাহিদা অনুসারে এই টেস্ট করা হয়।
8) ফেনোলিক ইয়োলিং টেস্ট: কোন ফেব্রিকের লট দীর্ঘদিন ফেলে রাখলে ফেব্রিক লটেইয়োলিশ ভাব চলে আসে, সাধারণত হোয়াট লটের ফেব্রিকদীর্ঘদিন ফেলে রাখলে এই সমস্যাটি দেখা যায়। তাই এই টেস্টফেব্রিক লটে করা হয় এবং এই টেস্ট পাশ করলে অনেক দিনপর্যন্ত ফেব্রিক লট ভাল থাকে।
9) পি এইচ টেস্ট: ডায়িং এর প্রিট্রেটমেন্টে স্কাওরিং প্রসেসে আমরা ক্ষার ব্যবহারকরি।এই ক্ষার আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।তাই ফেব্রিকনিউট্রাল আছে কিনা তা চেক করার জন্য পি এইচ টেস্ট করা হয়।
10) ব্লাস্টিং টেস্ট: ফেব্রিক বা গার্মেন্টস কত টুকু প্রেসারে ছিড়েঁ যাবে তা জানার জন্য ব্লাস্টিং টেস্ট করা হয়।
11) ফাইভ টাইম ওয়াশ টেস্ট: পাঁচবার নরমাল ওয়াশ করার পর গার্মেন্টসে কালার ঠিকথাকে কিনা তা জানার জন্য এই টেস্ট করা হয়।
12) স্পাইরিলিটি টেস্ট: গার্মেন্টসের ওয়াশের পূর্বে গার্মেন্টসের ডাইমেনশন পরিমাপ করা হয় এবং ওয়াশের পর গার্মেন্টসের ডাইমেনশন পরিমাপ করাহয়। গার্মেন্টসের ওয়াশের পর ইহার সেলাই বরাবর কিছুটাবেকেঁ যায়, গার্মেন্টসের এই ধর্মকে স্পাইরিলিটি বলা হয়। আরএই ধর্ম পরিমাপ করার টেস্টকে স্পাইরিলিটি টেস্ট বলা হয়।
13) সাবলাইমেশন টেস্ট: গার্মেন্টসের কেয়ার লেভেলের কালার ঠিক আছে কিনা তাজানার জন্য এই টেষ্ট করা হয়।
14) লাইট বক্স টেস্ট: ফেব্রিকে অফটিক্যাল ব্রাইটেনিং আছে কিনা তা লাইট বক্সেরমাধ্যমে জানা যায়। বায়ারের চাহিদা অনুসারে এই লাইট বক্স কেনা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বায়ারের রিকোয়ারমেন্ট থাকে ডি ৬৫ লাইট বক্স। এই লাইট বক্সের সাহায্যে বায়ারের চাহিদা অনুসারে ফেব্রিকের সেড ওকে আছে কিনা তাও জানা যায়।
বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য পরীক্ষণীয় যন্ত্রপাতি সমূহ:
☆ সাইক্রোমিটার বা হাইগ্রোমিটার।
☆ অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
☆ আঁশের দৈর্ঘ্য পরিমাপক যন্ত্র।
☆ আঁশের শক্তি নির্ণয়ের যন্ত্র।
☆ আঁশের সূক্ষ্মতা এবং পরিপক্কতা নির্ণয়ক যন্ত্র।
☆ ল্যাপ মিটার।
☆ বিভিন্ন ধরনের ওজন পরিমাপের যন্ত্র।
☆ ইভেননেস টেস্টার।
☆ পুরুত্ব পরিমাপক যন্ত্র।
☆ পাক পরিমাপক যন্ত্র।
বিভিন্ন পরীক্ষায় কিছু সহায়ক যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো হলো:
☆ কাঁচি
☆ সুই ও চিরুনি
☆ বিভিন্ন মাপের স্টিল রুলার
☆ চিমটা
☆ ম্যাগনিফাইং গ্লাস
☆ স্টপ ওয়াচ
☆ বিভিন্ন মাপের টেমপ্লেট
☆নেপ কাউন্টিং বোর্ড
Writer:
Md. Robiul Alom
Sheikh Kamal Textile Engineering College, Jhenaidah
WPE dept., 3rd Batch