Thursday, November 21, 2024
Magazine
More
    HomePrintingটেক্সটাইল প্রিন্টিং

    টেক্সটাইল প্রিন্টিং

    সূচনাঃ প্রিন্টিং শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। যার অর্থ হলো “Pressing” বা চাপ দেওয়া।কোন একটি নির্দিষ্ট ডিজাইনকে বিভিন্ন রঙের প্যাটার্ন অনুযায়ী একটি ফেব্রিকের উপর ফুটিয়ে তোলাকে প্রিন্টিং বলে।বর্তমানে পোশাক শিল্পে প্রিন্টিং এর গুরুত্ব অনেক বেশি।কোন ফেব্রিকের উপর বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন প্রিন্ট করা হয় যা মানুষের রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।বর্তমানে অনেক উন্নত পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা হয় কিন্তু প্রিন্টিং এর শুরুটা এতো উন্নত ছিল না।সর্বপ্রথম চীনারা কাঠের ব্লক খোদায় করে কাপড় ছাপার কাজ শুরু করেছিল।প্রিন্টিং এর জন্য তখন শুধু লাল ও নীল রং ব্যবহার করা হতো।কিন্তু বর্তমানে প্রিন্টিং এর কাজে প্রায় ১২-১৫ টি রং ব্যবহার করা হয়।সতেরো শতকের শেষের দিকে রোলার প্রিন্টিং এর যাত্রা শুরু হয়।এই পদ্ধতিতে কোন ফেব্রিকের উপর একই সাথে বিভিন্ন রঙের ডিজাইন প্রিন্ট করা যায়।রোলার প্রিন্টিং এর কয়েক বছর পর আঠারো শতকের শেষের দিকে স্ক্রিন প্রিন্টিং পদ্ধতি চালু হয়।সর্বশেষ আবিষ্কৃত প্রিন্টিং মেশিন হচ্ছে Digital Printing Machine (ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিন)।

    প্রিন্টিং এর প্রকারভেদঃ

    ১। All Over Printing: নিট কিংবা ওভেন ফেব্রিকের উপর স্ক্রিন বা রোলারের মাধ্যমে কোন একটি নির্দিষ্ট ডিজাইনকে ফুটিয়ে তোলাকে অল ওভার প্রিন্টিং বলে।

    ২। Sublimation Printing:ট্রান্সফার পেপারে সাবলিমেশন প্রিন্ট করা হয়।পরে এই প্রিন্ট করা কাগজ ফেব্রিকের উপর রেখে চাপ ও তাপ দেওয়া হয়।ফলে কাগজে যে প্রিন্ট থাকে তা ফেব্রিকের উপর চলে আসে।বর্তমানে টি-শার্ট,টাইলস ডিজাইন,ক্রেস্ট তৈরী ইত্যাদিতে এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

    ৩। Foil Printing: ফয়েল প্রিন্টিং এর জন্য দরকার ফয়েল পেপার,আঠা,তাপ ও চাপ।ডিজাইন অনুযায়ী ফেব্রিকের উপর আঠা লাগানো হয়।এরপর ফয়েল পেপার বসিয়ে একটি স্কুইজি দ্বারা ম্যানুয়ালি চাপ প্রয়োগ করা হয় ফলে ডিজাইনটি ফেব্রিকে ট্রান্সফার হয়।

    ৪। Flock Printing: কটন,উল,নাইলন সহ বিভিন্ন ফাইবারকে ছোট ছোট টুকরা করে কেঁটে নেওয়া হয়,একেই ফ্লক বলে।ফ্লকগুলোর দৈর্ঘ্য সাধারনত ০.৩ mm হয়ে থাকে।ফ্লকগুলো রঙিন বা বর্ণহীনও হতে পারে।এরপর ফেব্রিকের উপর আঠা লাগিয়ে ফ্লক ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

    ৫। Glitter Printing: এটা অনেকটা ফ্লক প্রিন্টিং পদ্ধতির মতো।তবে এখানে ডিজাইনের উজ্জ্বলতা বা চাকচিক্য বৃদ্ধির জন্য গ্লিটার পাউডার ব্যবহার করা হয়।

    ৬। Block Printing: কাঠের টুকরোর উপর ডিজাইনাররা পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন চিত্র ও নকশার প্রতিচ্ছবি খোদাই করে।খোদাইকৃত পৃষ্ঠে প্রিন্টিং পেষ্ট আবৃত করে কাপড়ের উপর ছাপ মেরে কাপড়ে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয়।এই পদ্ধতিকে ব্লক প্রিন্টিং বলা হয়।ব্লক প্রিন্টিং কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং ও মেশিন ব্লক প্রিন্টিং।তবে ব্লক প্রিন্টিং পদ্ধতি তুলনামূলক ধীরগতিসম্পূর্ন ও শ্রমসাধ্য।

    ৭। Batik Printing: এর প্রধান উপাদান গলিত মোম।এই মোমকে ফেব্রিকের উপর ডিজাইন অনুযায়ী ঢালা হয় এবং ঠান্ডা করে ঐ ফেব্রিককে রং এর দ্রবনে ডোবানো হয়।মোম দ্বারা আবৃত অংশে রং ঢুকতে পারে না।পরে মোম তুলে ফেলা হয় এবং ডিজাইন ফেব্রিকের উপর ফুটে উঠে।

    প্রিন্টিং প্রসেসঃ

    ১। গ্রে ফেব্রিক ২। গ্রে ফেব্রিক প্রস্তুতকরণ ৩। প্রিন্টিং পেস্ট প্রস্তুতকরণ ৪। প্রিন্টিং ৫। ড্রাইং ৬। স্টিমিং ৭। আফটার ট্রিটমেন্ট

    গ্রে ফেব্রিকঃ টেক্সটাইলের ভাষায় যে কাপড় বোনা হয়েছে কিন্তু এখনো রং করা হয়নি তাকে গ্রে ফেব্রিক বলে।অর্থাৎ without process ফেব্রিক ই গ্রে ফেব্রিক নামে প্রচলিত।

    গ্রে ফেব্রিক প্রস্তুতকরণঃ যে ফেব্রিক প্রিন্ট করা হবে সেই ফেব্রিক কোন ফাইবারের তৈরী তা প্রিন্ট করার পূর্বে জেনে নিতে হবে।কারন প্রত্যেকটি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ফাইবারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।সেজন্য প্রতিটি ফাইবারের রং করার পদ্ধতি যেমন আলাদা তেমনি প্রিন্টিং পদ্ধতিও আলাদা।সরাসরি লোম হতে প্রাপ্ত গ্রে ফেব্রিকের উপর প্রিন্ট ভালো হয় না।স্কাওয়ারিং ও ব্লিচিং করা ফেব্রিকে সাধারনত প্রিন্ট করা হয়ে থাকে।গ্রে ফেব্রিক প্রিন্ট করতে হলে সাবান ও সোডার সাহায্যে উত্তমরূপে ব্লিচ করে নিতে হয়।তা না হলে প্রিন্ট সর্বত্র সমান হয় না।অন্যকথায় প্রিন্টের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় না এবং প্রিন্টের রং আশানুরূপ স্থায়ী হয় না।

    প্রিন্টিং পেষ্ট প্রস্তুতকরণঃ কাপড় রং করতে যেমন রঙের দ্রবন প্রস্তুত করতে হয় তেমনি ফেব্রিক প্রিন্টিং করার জন্য প্রিন্টিং পেষ্ট তৈরী করা হয়।প্রিন্টের স্টাইল ও ফেব্রিকের ধরনের উপর নির্ভর করে প্রিন্টিং পেষ্ট তৈরী করা হয়।

    প্রিন্টিং পেষ্টের উপাদানগুলো হলোঃ
    ১. পিগমেন্টস (pigments)
    ২। থিকেনার (Thickener)
    ৩। ক্যাটালিস্ট (catalyst)
    ৪। এসিড ও অ্যালকালি (acid and alkali)
    ৫। ওয়েটিং এজেন্ট (wetting agent)
    ৬। ক্যারিয়ার এজেন্ট (carrier agent)
    ৭। অক্সিডাইজিং এন্ড রিডিউসিং এজেন্ট (oxidizing and reducing agent)
    ৮। ডিফোমিং এজেন্ট (defoaming agent)
    ৯। ডিসপার্সিং এজেন্ট (dispersing agent)

    প্রিন্টিংঃ উপরে প্রিন্টিং এর সাতটি প্রকারভেদ সম্পর্কে বলা হয়েছে।প্রিন্ট এর ধরন অনুযায়ী এদের মধ্যে থেকে যেকোন একটি পদ্ধতিতে ফেব্রিক প্রিন্ট করা যেতে পারে।

    ড্রাইংঃ প্রিন্টের পর প্রিন্টিং পেষ্ট ফেব্রিকের উপর যেন ভালোভাবে ফিক্সেশন হয় সেজন্যই ড্রাইং বা শুষ্ককরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।অন্যকথায়,প্রিন্টিং এর পর ফেব্রিকে যদি কোন সিক্ত বা ভেজাভাব থাকে তবে ড্রাইং এর মাধ্যমে তাকে শুষ্ককরণ করা হয়।ড্রাইং না করলে প্রিন্ট পেষ্ট নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

    স্টিমিংঃ স্টিমিং এর মাধ্যমে ফেব্রিকের উপর রং বা প্রিন্টিং পেষ্ট স্থায়ী হয়।প্রিন্টিং পেষ্ট ঠিক রাখতে স্টিমিং বা বাষ্প প্রক্রিয়া খুবই কার্যকরী।

    আফটার ট্রিটমেন্টঃ প্রিন্টের পর ফেব্রিকটি ভালোভাবে ধৌত করতে হয় যাতে ফেব্রিকে অপ্রয়োজনীয় কিছু লেগে না থাকে।এরপর ফেব্রিকটিকে ৫-১০ মিনিট ধরে ১০৫-১১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্টিমিং করা হয়।অর্থাৎ ডাইং এর পর যে যে কাজ করতে হয় তাই আফটার ট্রিটমেন্ট বলে পরিচিত।

    প্রিন্টিং ও ডাইংঃ অনেকের কাছেই ডাইং ও প্রিন্টিং কিছুটা একই রকম মনে হতে পারে কিন্তু এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।কোন ফেব্রিকের উপর সর্বত্র সমভাবে রঙ ফুটিয়ে তোলার প্রক্রিয়াকে ডাইং বলে।অন্যদিকে কোন ফেব্রিকের উপর একটি নির্দিষ্ট এরিয়াতে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুসরন করে রঙ করা হয়।ডাইং করার পর ফেব্রিকের সামনের ও পেছনের অংশ একই রকম থাকে কিন্তু প্রিন্টিং এর পর সামনে এবং পিছনে একই রকম থাকে না,নকশা অনুযায়ী পরিবর্তন হয়।ডাইং প্রক্রিয়ায় ফেব্রিকের পাশাপাশি ফাইবার ও ইয়ার্নও ডাইং করা যায় কিন্তু প্রিন্টিং প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র ফেব্রিকের উপরই প্রিন্ট করা যায়। ডাইং এ সুনির্দিষ্ট ডিজাইনের প্রয়োজন হয় না কিন্তু প্রিন্টিং এ প্রয়োজন হয়।ডাইং এ থিকেনার ব্যবহার করা হয় না কিন্তু প্রিন্টিং এ থিকেনার ব্যবহৃত হয়।

    প্রিন্টিং এর ভবিষ্যৎঃ
    মানুষের রুচির সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্বের টেক্সটাইল প্রিন্টিংও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের রঙ এবং নকশার ভ্যারিয়েশন দাবী করছেন।তাই তাদের এই দাবীর প্রতি সারা দিয়ে প্রতিনিয়ত টেক্সটাইল প্রিন্টিং এর পরিবর্তন হচ্ছে।তাই টেক্সটাইল প্রকৌশলীরাও গ্রাহকের চাহিদা মাথায় রেখে অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করছেন যেন খরচ ঠিক রেখে গ্রাহক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।সেই কাঠে খোদায় করা ব্লক প্রিন্টিং থেকে যাত্রা শুরু করে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে আজকের ডিজিটাল প্রিন্টিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।তাই ভবিষ্যৎ এ টেক্সটাইল প্রিন্টিং প্রক্রিয়া ডিজিটাল হয়ে যাবে।আমাদের প্রিন্টিং যন্ত্রগুলোও প্রতিনিয়ত উন্নত করা হচ্ছে যাতে গ্রাহক এবং উদ্যক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে।অন্যান্য প্রিন্টিং এর তুলনায় ডিজিটাল প্রিন্টিং সময় ও অর্থ সাশ্রয় করে এবং প্রিন্টিং এর বিশ্বে একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে।একজন উদ্যক্তার জন্য ডিজিটাল প্রিন্টিং সব ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সৃজনশীল আইডিয়া কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের ডিজাইন গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরা।তবেই আশা করা যায় ভবিষ্যৎে টেক্সটাইল প্রিন্টিং এর শাখা আরও প্রশস্ত হবে।

    MD Zahurul Islam
    Sheikh Kamal Textile Engineering College
    Depertment of Wet Procces Engineering
    Level-1 Term-1

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed