প্রত্যেকবার ঈদে আমার আর আমার ভাইয়ের একটা কমন প্রতিযোগিতা হল কে কত টাকা সালামি পেলাম ।কিন্তু এবার লকডাউনে পুরনো কিছু টাকা যত্ন করে গোছানোর সময় আমার ভাই দেখলো টাকার গায়ে কিছু আঁশ বের হয়ে আছে।তক্ষুণি আমায় জিজ্ঞেস করল “আচ্ছা আপু, তুই তো টেক্সটাইলে পড়িস! তোর জানা মতে টাকাতে কী কোনো টেক্সটাইল ফাইবার আছে?”
প্রশ্নটি শুনে আমিও চিন্তায় পড়লাম। ভাবতে থাকলাম এও কি সম্ভব!! তারপর এটা নিয়ে ইন্টারনেটে একটু ঘাটাঘাটি করে দেখলাম…
হ্যাঁ,আজ এই মজার ব্যাপার টা নিয়েই থাকছে বিস্তারিত..
প্রাচীনকালে অর্থ বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল ধাতব মুদ্রা।সোনা,তামা,রুপার তৈরি মুদ্রা গুলোর মূল্য যেমন ছিল তেমনি ওজনটাও ছিল বেশি।তবে সেটার ফলাফল- পরিবহনে ঝামেলা!
এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে লেগে পরে চীনারা। ৭ম শতাব্দীতে তারা তৈরি করে কাগজের নোট।কিন্তু তা আঞ্চলিক ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।এটা নিয়ে পরবর্তীতে সচেতন হলেন সুইডিস রাজস্বধক্ষ্য Johann Palmstruck . ১৬৫৮ সালে তিনি সুইডিস রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের জন্য নোট তৈরি করলেন।এবার আমেরিকায় গিয়ে অনেক প্যাঁচ আর অনেক ঘটনাকে সাক্ষী রেখে কাগজের নোট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে।
টাকা তৈরির উপাদানগুলো হল-
1.Cotton-75%
2.Linnen-25%
3.Ink
And some secret material.
তৈরি প্রক্রিয়াঃ
টাকা তৈরির মূল উপাদানগুলোকে জটিল এক মিশ্রণের মাধ্যমে এক প্রকার বিশেষ কাগজ তৈরি করা হয়।এই কাগজের নাম Rag Paper.
তারপর Cutting, massing,typography, desing,coading সহ অনেকগুলো ধাপ পার করে ব্যবহার উপযোগী টাকায় পরিণত করা হয়।টাকার ব্যবহারকাল অনেক সময় পর্যন্ত, এক হাত থেকে আরেক হাতে যেতে হয় বলে একে durable হতে হয়।এই কাগজে cotton,linen থাকে বলে এর রঙ ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি।Rag paper এ জিলাটিন বা পলিভিনাল এলকোহল যোগ করে আরো টেকসই করা হয়।ভিজলে রঙ নষ্ট হয় না ,দ্রুত শুকায়।
Currency ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও বিল করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এখন প্রশ্ন হল সাধারন কাগজ আর Rag paper এর পার্থক্য কি?
সাধারন কাগজ আর কটন উভয়টিই সেলুলোজ দিয়ে গঠিত ,তারপরেও কিছু পার্থক্য আছে।
সাধারন কাগজ বিভিন্ন wood pulp,stem fibre,seed fibre এর মাধ্যমে তৈরি হয়।
অন্যদিকে Ragpaper এ textile fibre,cotton,linen নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশানো হয়।
♻আরও কিছু তথ্য
Ragpaper এর Cotton উৎপাদন হয় তুলা গাছ থেকে।তুলা উৎপাদন হয় Gossypium গণের উদ্ভিদসমূহ থেকে।
আর Linnen এর উৎপাদন হয় Flax অর্থাৎ তিসি গাছ থেকে। তিসির গণের নাম Linum.
টাকা তৈরির ফাইবার উৎপাদন অন্যান্য সাধারন ফাইবারের এর মতই ।
এবার আসি বাংলাদেশের টাকার তথ্য জানতে ।
স্বাধীনতার পর ৪ঠা মার্চ ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের নিজস্ব মুদ্রা আছে। বাংলাদেশের টাকা তৈরির Rag paper আসে সুইজারল্যান্ড থেকে।বাংলাদেশের টাকার Rag paper এর ওজন প্রতি বর্গ মিটারে ৮০-৯০ গ্রাম।টাকা তৈরির কাগজ সুইজারল্যান্ড থেকে আসলেও টাকা ছাপা হয় বাংলাদেশের টাকশালে। বাংলাদেশের টাকশালে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ২ টাকার নোট তৈরি হয়।যা আমাদের গর্ব। টাকা নিয়ে গবেষণার অনেক সুযোগ আছে।বাংলাতেও লিখালিখির খুব প্রয়োজন।টাকা নিয়ে গবেষণায় উন্নত বিশ্ব অনেক এগিয়ে গিয়েছে। U.S.A ইতিমধ্যে plastic fiber এর টাকা বানানোর পরিকল্পনা করছে।
হয়তো কালের বিবর্তনে Rag Paper এর এই কাগুজে নোটের জায়গা দখল করে নেবে Virtual নোট।
সাম্প্রতিক তথ্যঃ
কিছুদিন আগে কটন কাগজে ১০০ টাকার নোট ছাপানো শুরু হয়। উচ্চ মূল্যমানের ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য অধিকতর সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে উন্নতমানের কোটিংকৃত দীর্ঘস্থায়ী কটন কাগজে
UV কিউরিং ভার্নিশ যুক্ত করে নোট মুদ্রণ করা হয়েছে। এ নোটের উভয় পৃষ্ঠে ভার্নিশের প্রলেপ সংযোজন করা হয়। এর ফলে নোটটি চকচকে অনুভূত হয়, নোটের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়, নোটটি কম ময়লা হয় এবং এর ওপর কলম দিয়ে লেখা কঠিন হয়। এ ছাড়া, এ নোট ব্যবহারের সময় আগের নোটের মতো খসখসে অনুভূত না হয়ে কিছুটা পিচ্ছিল অনুভূত হবে।
এভাবেই নতুন নতুন উদ্ভাবনী কর্মকান্ডের মাধ্যমে টেক্সটাইল ফাইবার পৌছে গিয়েছে টাকার ভেতরেও।
✅তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া,প্রথম আলো,Quora
Writer Information:
Rawshan Tabassum Darish
Campus Core Team Member, TES
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College.
Edited By:
Md Rashid
Research Assistant, TES
আমার পড়া সেরা article