▪️ কর্পোরেট যুগে দক্ষতার পাশাপাশি চাই স্মার্টনেস।কেননা, দেশের পরিবেশে এখনো সবচেয়ে বেশি ড্রেস কোড মেনে অফিসে যেতে হয় ছেলেদের।কিন্তু পোশাক কোড নিয়ে আমাদের অনেকেরই রয়েছে অস্পষ্ট ধারণা। তাই কোথায় কেমন পোশাক পরিধান করা উচিত এবং সর্বোপরি ছেলেদের ড্রেস কোডের সামগ্রিক ধারণা দিতে আমাদের আজকের এই লেখনি।
▪️ বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে সুষ্ঠু পোশাক পরিধান আপনার পারফর্মেন্সের এর ওপর মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রভাব ফেলে। একটি পুরনো উক্তি আছে এমন, ‘আপনি সেই চাকরীর জন্যে পোশাক পরিধান করুন যে চাকরী আপনি পেতে চান। সেটির জন্য নয় যা আপনি বর্তমানে করছেন’। কিছু গবেষণায় এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে আপনি যখন পোশাক পরার স্টাইল বদলে ফেলেন, তখন নিজেকে নতুনভাবে প্রকাশ করতে পারেন। আপনি যদি বসের মতন ব্যক্তিত্ব ও মনোযোগ পেতে চান, তবে অবশ্যই আজ থেকেই নিজেকে বদলে ফেলুন।
একটি সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও ব্যক্তিত্ব বিজ্ঞানের পত্রিকা আগস্ট ২০১৫ সালে একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা করে। তার আগে পরীক্ষার্থীরা কেউ ফর্মাল আবার কেউ ক্যাজুয়াল পোশাক পরেন। যারা ফর্মাল পোশাক পরে ছিলেন তাঁরা বিশেষত অধিক শক্তিশালী প্রমাণিত হন।একইভাবে, জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি একটি গবেষণা চালায় তার এক বছর আগে। সেখানে দুই গ্রুপের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এক গ্রুপের ব্যক্তিগণ শার্ট পরেছিলেন এবং অপর গ্রুপের পড়নে ছিলো স্যুট প্যান্ট। স্বভাবতই, যারা স্যুট প্যান্ট পরিধান করে ছিলেন তাঁরা অধিক লাভজনক ডিল পেয়েছিলেন অপরদের তুলনায়।
এটা যেভাবে কাজ করে, সেটি হলো আমরা একেক ধরনের কাজ একেক গ্রুপকে হস্তান্তর করি। যেমন একটি স্যুট সর্বদা আপনারা ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ করে। কারণ এতে করে আপনি খুব শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন। ঠিক তেমনই, কোন ছাত্র যদি রিসার্চের কাজ করতে ল্যাবরেটরীতে প্রবেশ করে এবং তার পরনে যদি ল্যাব কোট থাকে তবে মনের অজান্তেই সে নিজেকে বিজ্ঞানী কিংবা ডাক্তার মনে করা শুরু করবে।
▪️ ছেলেদের প্রয়োজনীয় কিছু পোশাক রীতি:
১) ন্যাশনালঃ
পুরুষদের জন্য জাতীয় পোশাক হলো একটি দীর্ঘ কোট যা একটি “পাঞ্জাবী” বা “কুর্তা” নামে পরিচিত। দীর্ঘ শার্টের মতো যা শেরওয়ানি নামে পরিচিত এবং সাধারণত “পাজামা” নামে পরিচিত ট্রাউজারের একটি হালকা জোড়া। এটি সাধারণত বিবাহ বা ঈদের মতো সর্বাধিক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত থাকে।আধা-আনুষ্ঠানিক / অনানুষ্ঠানিক পরিধানটি পাঞ্জাবী / পাজামা সংমিশ্রণে থাকে যা রাতের খাবারের পার্টিতে,শুক্রবার জুম্মাহে বরং বেশি দেখা যায়।
(২) ফর্মালঃ
ফর্মাল ড্রেস এ সাধারণত শার্ট,টাই,সুট,সু পড়া হয়। স্বাস্থ্যের দিক থেকে যারা তূলনামূলক চিকন তাদের টাই নির্বাচনের ক্ষেত্রে চিকন টাই পড়াটাই বেটার। কোনভাবেই সুট এর বোতাম লাগানো উচিত না,এতে আপনার প্রেজেন্টেশন এর ক্ষেত্রে কিছুটা বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এই লুক সাধারণত অফিশিয়াল মিটিং, বা বড়সড় প্রোগ্রামের প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার হয়ে থাকে।
(৩) সেমি ফর্মালঃ
সেমি ফর্মালে সাধারণত টাই সুট লাগে না,এই লুকে চাইলে আপনি আপনার হাতের স্লিভ ভাজ করে রাখতে পারেন।বিজনেস কর্পোরেট সেকশনে মিটিংগুলো মূলত সেমি ফর্মালে হয়।অর্থাৎ কম্ফোর্টজোন যেখানে বেশি ম্যাটার করে সেখানে সেমি ফরমাল লুক ব্যবহার করা যেতে পারে।
(৪) ক্যাজুয়ালঃ
ক্যাজুয়াল লুকে কখনোই বড় বড় প্রেজেন্টেশনে নেমে যাওয়া উচিৎ নয়।এটি মূলত বাড়ির বা ঘরের লোকদের সামনে কোনো প্রেজেন্টেশন দেয়া ছাড়া কোন জায়গায় ব্যবহার করবেন না।
(৫) স্ট্রীটওয়ারঃ
নাম শুনে হয়তো অনেকে রাস্তায় হাটার জন্য ব্যবহৃত পোশাক ভেবে থাকতে পারেন।কিন্তু না,স্ট্রীটওয়ার বলতে মূলত ঘরে পড়ার পোশাক বোঝায়।এই ফ্যাশনে হাফপ্যান্ট বা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের সাথে হাফ হাতা টি-শার্ট পড়া হয়।কেউ চাইলে লুংগি বা ঢোলা ঢালা ট্রাউজার পরতে পারেন।সাধারণত বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা বা খেলাধুলার সময় এটি অনেক আরামদায়ক হতে পারে।
এখানে আমরা জানবো ইন্টারভিউ বোর্ডে কি রুপ পোষাক পড়ব। ইন্টারভিউ বোর্ডে ছেলেদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ফর্মাল শার্ট, সুট,টাই,জুতা পড়তে হয়। সুট যেন শরীরের সাথে সুন্দর ভাবে ফিটিং থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।টাই এর লেনথের পারফেক্ট মাপ হচ্ছে যেখান থেকে আপনার হচ্ছে যেখান থেকে আপনার বেল্ট স্টাট হয় সেখান থেকে।বেল্ট ও জুতার কালার এক হওয়া জরুরি। সুটের বাটন লাগানো উচিৎ নয়।এতে কর্মক্ষেত্রে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।সব কথার এক কথা,আপনি যাই পরিধান করুন না কেনো,আধুনিক এই কর্পোরেট যুগে দক্ষতার পাশাপাশি চাই স্মার্টনেস। আর এই স্মার্টনেসটা কিন্তু আসে উপযুক্ত পোশাক পরিধানেই। তাই অফিসে পোশাক পরিধানে হতে হবে ট্রেন্ডি, স্মার্ট পাশাপাশি মার্জিত ও শালীন।
এই বলে শেষ করতে চাই আমাদের সবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রুচিসম্মত পোশাক উচিৎ কিন্তু কখনোই নিজের পোষাক নিয়ে অহংকার করা উচিৎ না।
অমর পারস্য কবি মহামতি শেখ সাদী কে মলিন পোশাক এর জন্য হেয় করা হয়েছিল এবং পরে যখন তারাই কবির রাজপোশাক দেখেন তখন তাঁকে ভালো খাবার পরিবেশন করেন।কিন্তু তিনি না খেয়ে নিজের পোশাকের পকেটে খাবারগুলো রাখছিলেন। তারা এর কারন জানতে চাইলে কবি বলেছিলেন
“এই যে খাবার, সমাদর সবই,
এসব তো মোর পোশাকের কারসাজি! বিবর্ণ পোশাকে রেখেছিলে অনাদরে,
তাই এখন যে খাবার দিয়েছো মোরে,
দিলাম তুলে রাজ পোশাকের তরে,
যে পোশাকের জোরে আমি আজ সমাদরে!”
তাই আমরা যেন চাকচিক্যময় পোষাকের ভিড়ে ভেতরের মানুষটাকে চিনতে না ভুল করি।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া,ইউটিউব, Roar media
লেখকঃ
মিম ওবায়দুল্লাহ এবং মেহেদী হাসান মুগ্ধ
ক্যাম্পাস টীম মেম্বার, Team TES-DWMTEC
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।