তাঁত শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম একটি শিল্প।এই শিল্প আমাদের ঐতিহ্য,এর সাথে জড়িত আছে আমাদের সংস্কৃতি
আজকে বাংলার এই শিল্প নিয়ে আমরা বিস্তারিত জানবো।প্রথমেই আমরা জানবো তাঁত কি এবং এটি কোথায় সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত?
#তাঁত কী?
➡️তাঁত হলো মূলত এক ধরণের যন্ত্র যা দিয়ে তুলা বা তুলা হতে উৎপন্ন সুতা থেকে কাপড় বানানো যায়।
#তাঁত শিল্প বাংলাদেশের কোথায় বিখ্যাত?
➡️তাঁত শিল্প টাঙ্গাইল জেলায় বেশি প্রসিদ্ধ।টাঙ্গাইল তাঁতশিল্প বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো কুটিরশিল্প।।এই ঐতিহ্যবাহী শাড়ী টাঙ্গাইল জেলায় তৈরি হয়।
তাঁত শিল্প যেহেতু বাংলার ঐতিহ্য তাই এর ইতিহাস যে বহু পুরনো সেটা আমরা বুঝতে পারি।গবেষণা করে পাওয়া যায় যে,মিশরে সর্বপ্রথম তাঁত ব্যবহার শুরু হয়। আদিকালে তাঁতিরা দক্তিবিহীন তাঁতে মাকু হাতের সাহায্যে ছুড়ে কাপড় বুনন করতো।মিশরে ‘জনকি‘ নামের একজন ইউরোপিয়ান ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁতের মাঝে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসেন।তিনি তাঁতের দক্তি এবং তার দুই পাশে দুটো বক্স তৈরি করেন যার ফলে প্রাচীন তাঁত অপেক্ষায় দ্রুত গতিতে কাপড় বুনন করা যায়।
গ্রামীণ তাঁতের কথা আসলেই পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলার কথা মনে পড়ে যায় কারণ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার তাঁতের সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে ধনেখালি ও শান্তিপুরিসহ বিভিন্ন জায়গার তাঁত শিল্প বিখ্যাত।শান্তিপুরি জামদানি অনেক বেশি প্রসিদ্ধ। অনেকটা টাঙ্গাইল জামদানির ধাঁচের মোটিফেই বানানো হয় এটি। আবার ধনেখালি জামদানির রঙ বেশ জমকালো হয় আর পাড় হয় জমির রংয়ের কনট্রাস্টে।
রেশম পোকার লালা থেকে যে সুতা উৎপন্ন হয় তা হতে প্রথমে রেশম গুটি জলের মধ্যে দিয়ে সিদ্ধ করা হয়।সেই রেশম পোকার গুটি থেকে সুতা বের হয়।একসাথে ছয় বা সাতটি রেশম গুটি সুতা থেকে বের করে তা লাটাইয়ের মাধ্যমে জড়িয়ে নেওয়া হয়।সুতা বের করার পর টুইস্টার মেশিনের সাহায্যে সুতা পাকানো হয়।অতঃপর “তাসুন” পদ্ধতির সাহায্যে সুতাগুলো লম্বালম্বি রাখা হয় তারপর পেটানো হয়।তাসুনের পর সুতাকে তাঁত যন্ত্রে ঢুকানো হয়। তাঁতে লম্বালম্বি সুতাকে টানা এবং আড়াআড়ি সুতাকে পোড়েন বলা হয়।
যারা তাঁত বোনে তাদের তাঁতী বলা হয় আর এই বিশেষ তাঁতের উপর যারা বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে তাদের বলা হয় ফ্যাব্রিক ইঞ্জিনিয়ার।
বাংলা তাঁত যন্ত্রে ঝোলানো হাতল টেনে সুতা জড়ানো মাকু আড়াআড়ি ছোটানো হয়।মাকু ছাড়াও তাঁত যন্ত্রের আরও কিছু অঙ্গ যেমন:শানা,দক্তি ও নরাজ।ইতিমধ্যে আমরা দক্তি নিয়ে আলোচনা করেছি।
শানার কাজ হলো টানা সুতার খেইগুলিকে পরস্পর পাশাপাশি নিজ নিজ স্থানে রেখে টানাকে নির্দিষ্ট প্রস্থ বরাবর ছড়িয়ে রাখা।
শানায় গাঁথা প্রস্থ অনুযায়ী টানাটিকে একটি গোলাকার কাঠের উপর জড়িয়ে রাখা হয়।এটাকেই টানার নরাজ বলা হয়।।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের বিরাট ভূমিকা।যেহেতু বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে বেশ উন্নতি করছে এবং রপ্তানি করে বেশ অর্থনৈতিক মুদ্রা অর্জন করছে তাই এখানে তাঁত শিল্পের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে।দেশের প্রায় ১৫ লক্ষ লোক পেশার ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িত।শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় আমাদের দেশের সিরাজগঞ্জ জেলাও তাঁত শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ।সিরাজগঞ্জ জেলায় তাঁতী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৪,৮৭০ এবং তাঁত সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৫ হাজারের অধিক।এই শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।বিরাট জনশক্তি বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁতিরা শাড়ী,লুঙ্গি,থান কাপড়,গ্রামীণ চেক সহ বিভিন্ন রকমের বস্ত্র উৎপাদন করে থাকে।
আদিকাল থেকে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চলে আসা আমাদের তাঁত শিল্প দেশে ও বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত।রাজশাহী,টাঙ্গাইল,সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ,নরসিংদী, ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ,কুমিল্লাসহ আরও অনেক অঞ্চলে বসাক,দেবনাথ সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তাঁতিরা তাঁত শিল্পের প্রসার ঘটায়।নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের এতিহাসিক জামদানি,রাজশাহীর রেশমি বা সিল্ক,টাঙ্গাইলের শাড়ি,কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর,সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি ও গামছা, ঢাকার মিরপুরের বেনারসি,সিলেট ও মৌলভীবাজারের মনিপুরী তাঁত ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি তাঁতের রয়েছে বিশ্বব্যাপী চাহিদা।।
বাংলার তাঁত শিল্প আগেও প্রসিদ্ধ ছিল এখনো একইভাবে সবার পছন্দের।।এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে বাংলার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
তাসনিনা ইসলাম
গভর্ণমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স
বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগ