“Body armor”-শব্দটির সাথে আমরা বহুলাংশে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের ব্যাটল মুভি, ব্যাটল গেমস ইত্যাদি এর মাধ্যমেই আমরা বডি আরমর(Body armor) সম্পর্কে জানতে পেরেছি যে,এটি এমন একধরণের স্যুট বা কোট যা পরিধান করা হয় দেহকে সুরক্ষার জন্য।
যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যাবহার সবচেয়ে বেশি । কেননা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্রের আঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য এটি সৈনিকদের ব্যাবহার অপরিহার্য । প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যাবহার হইয়ে আসছে,শুধু সময়ের পরিক্রমায় বডি আরমর নিয়িমিত আধুনিক হচ্ছে।
“বডি আরমর” বা দেহবর্মের প্রকারভেদঃ
দেহবর্ম প্রধানত ২ প্রকারের রয়েছে। যথা ঃ
১। মাঝারি থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষার জন্য নিয়মিত নন-প্লাটেড বডি আর্মার এবং
২। সর্বাধিক সুরক্ষার জন্য হার্ড-প্লেটকে শক্তিশালী দেহ বর্ম, যেমন যুদ্ধ সৈন্যরা ব্যবহার করে।
আবার এই দেহবর্মের বিভিন্ন স্তর আছে ,যাকে লেভেল বলা হয় । ব্যক্তিগত শরীরের বর্মটিকে পাঁচ ধরণের বা শ্রেণিতে (IIA, II, III, III, IV) শ্রেণিবদ্ধ করা হয়( এনআইজে স্ট্যান্ডার্ড দ্বারা সংজ্ঞায়িত)।
এর মধ্যে বিশেষত চতুর্থ বডি বর্মটি(Level IV) বিশেষত যুদ্ধক্ষেত্রে বর্ম-ছিদ্রকারী বুলেটগুলিকে পরাস্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
“Body armor” বা দেহবর্মের ব্যবহারের ইতিহাসঃ
বডি আর্মর বা দেহবর্ম সুরক্ষার সরঞ্জামের একটি প্রয়োজনীয় অংশ যা বিভিন্ন বিপজ্জনক হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা সরবরাহ করে যেমন অস্ত্রের দ্বারা অনুপ্রবেশকারী আক্রমণ, স্ল্যাশিং, ব্লজগনিং ইত্যাদি ।
আমি আগেই বলেছি দেহবর্মের ব্যাবহার খুব আগে থেকেই হয়ে আসছে। তাই আলোচনার সুবিধার্থে “প্রাক-আধুনিক দেহবর্ম” ও “আধুনিক দেহবর্ম” এ দুই ভাগে ভাগ করলাম ।
প্রাক-আধুনিক দেহবর্মের ব্যাবহার আমরা প্রাচীন ইতিহাসের মাধ্যমে জানতে পারি । যেমন ঃ ১৩০০ সন ,১৪০০ সন ইত্যাদি সময়কার যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যরা দেহসুরক্ষার জন্য যা পরিধান করতো এবং সেগুলো ওজনেও ভারী হতো এবং আধুনিক দেহবর্ম বলতে আমরা বুঝি, বর্তমান যুগে
যেসব দেহবর্ম ব্যাবহার করা হচ্ছে যেমন “বুলেটপ্রুফ ভেস্ট” । অর্থাৎ প্রাক-আধুনিক যুগে অস্ত্রশস্ত্র বলতে ছিলো তলোয়ার ,তীর ইত্যাদি এবং এর জন্য সেরকম দেহবর্ম এবং বর্তমান আধুনিক যুগের অস্ত্রশস্ত্র যেমনঃ বিভিন্ন ধরনের পিস্তল,রাইফেল ইত্যাদির বুলেট থেকে রক্ষার জন্য বুলেটপ্রুফ ভেস্ট।
দেহবর্ম তৈরির উপাদানসমূহঃ
প্রাক-আধুনিক দেহবর্ম তৈরি করা হতো প্রধানত ৩ টি ক্যাটাগরিতে । যথাঃ
১। চামড়া, কাপড় বা উভয়ের মিশ্রিত স্তর দিয়ে তৈরি বর্ম ।
২। মেল, লোহা বা ইস্পাতের ইন্টারওভেন রিংস(interwoven rings) দিয়ে তৈরি বর্ম ।
৩। ধাতু, শিং, কাঠ, প্লাস্টিক বা অন্য কিছু অনুরূপ শক্ত এবং প্রতিরোধী উপাদান দিয়ে তৈরি বর্ম ।
আর আধুনিক দেহবর্ম তৈরিতে ব্যাবহার করা হয় কেভলার, ইস্পাত এবং পলিথিলিন (পিই)ইত্যাদি । কেভলার এবং পিই মূলত নরম শরীরের দেহবর্ম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, তবে স্টিল এবং সিরামিক কঠোর দেহের বর্ম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান হলো -“কেভলার” । চলুন এখন কেভলার সম্পর্কে জানা যাক।
কেভলার-২৯ঃ
কেভলার 29 হ’ল দেহবর্মের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত সিন্থেটিক ফাইবার এবং সেগুলি পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক সংস্থান থেকে প্রাপ্ত। কেভলার ২৯ হ’ল বন্দুকগুলিতে ব্যবহৃত প্রভাবগুলির প্রতিরোধের, উচ্চ শক্তি এবং কম ওজনের কারণে রক্ষার জন্য রক্ষার জন্য বর্ম হিসাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত উপাদান। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য কেভলারকে অন্যান্য উপাদানের তুলনায় বুলেট-প্রুফ ভেস্টগুলিতে ব্যবহার করার জন্য একটি আদর্শ উপাদান হিসাবে ধরা হয় । বলা হয়ে থাকে, কেভলার সমান ওজনের ভিত্তিতে ইস্পাতের চেয়ে পাঁচগুণ শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য কর্মক্ষমতা এবং শক্ত শক্তি(solid strength) সরবরাহ করে ।
কেভলার এর আরো ব্যাবহারঃ
কেভলার যেমন বুলেটপ্রুফ ভেস্ট তৈরিতে ব্যাবহার করা হয় ঠিক তেমনি স্ট্যাব প্রুফ ভেস্ট (অর্থাৎ ছুরি থেকে রক্ষার জন্য যে ভেস্ট ব্যবহার করা হয়)তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ছুরির তীক্ষ্ণ প্রান্তটি শরীরের মাংসের মধ্যে প্রবেশ করতে অক্ষম কারণ এটি কেভেলার বুননের মধ্যে ধরা পড়ে। যদিও ছুরি দ্বারা আঘাতের গতি ভেস্ট ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, তবুও পোশাকটি একজনকে ছুরি থেকে সুরক্ষিত রাখবে ।
কেভলার ফাইবার ব্যবহার এর খরচঃ
কেভলার দীর্ঘদিন ধরে সামরিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির পছন্দের বুলেটপ্রুফ উপাদান। কেভলার উত্পাদন করা ব্যয়বহুল,কারণ এতে স্পিনিং ফাইবারগুলির একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং সালফিউরিক অ্যাসিডের ব্যবহার জড়িত।
তথ্যসূত্রঃ
Britannica.com
Wikipedia
frontiersin.org
sciencedirect.com
Writer’s Information :
Mohamad Mohiminul Pritom
Department Of Textile Engineering(Batch-211)
Green University of Bangladesh
Email: [email protected]