তাঁতশিল্প বাংলাদেশের পুরোনো কুটিরশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এ শিল্পের প্রসার ঘটে।১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন,ইংরেজ কাপড় বর্জন করে নিজেদের হাতে তৈরি কাপড় ব্যবহার করার জন্য।সারা ভারতবর্ষে স্বদেশী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।গাজীপুরেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি।
প্রাচীন আমলে গাজীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর পাঁড়ে গড়ে উঠে তাঁতশিল্পের কারখানা।এই কারখানাগুলোতে বিখ্যাত মসলিন কাপড় তৈরি করা হত।জামদানি,বেনারসির নামগুলোও আবেগের।গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চৌড়া,বাহাদুরশাদী,খঞ্জনা,বড়নগর, উত্তরগাঁও সহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার তাঁতশিল্প এখনও টিকে আছে।প্রতিটি ঘরে ঘরে তাঁতের কাজ হলেও,কিন্তু তারাই এখন এ শিল্প টিকিয়ে রেখেছে।এছাড়া টঙ্গীর গুটিয়া এলাকায়ও তাঁতশিল্প রয়েছে।
যুগে যুগে তাঁতশিল্পীরা তাদের সুনাম,জৌলুস ধরে রেখেছে।বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এর খ্যাতিও রয়েছে। যা সম্ভব হয়েছে তাদের সুনিপুণ হস্তশিল্পের জন্য।কিন্তু সমাদৃত এই শিল্পটি যখন নিঃশেষ হওয়ার পথে সেটি রক্ষার জন্য নেই কোনো প্রকল্প,ভর্তুকি ও সহযোগিতা বান্ধব পরিবেশ।আধুনিক শিল্পায়নের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না হস্তচালিত তাঁতশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।রং,সুতা,বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় উপকরণের সংকট এ শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।ক্রমবর্ধমান নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির নাভিশ্বাসে তাঁতের কারিগররা সংসার চালানোর নিমিত্তে দীর্ঘদিনের এই পেশাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে।অতীতের সেই তাঁত পল্লীর জামদানি,বেনারসি এখন জৌলুসহীন।কেউ কেউ তাঁত কারখানার মেশিন,আসবাবপত্র ভাঙ্গারি হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছে।ব্যবসা পরিবর্তন করে তাঁতশিল্পীরা ছুটছে অন্য পেশায়।যেসব তাঁতকারখানা টিকে আছে,সেগুলোও চলছে ঢিমেতালে। তবে,এগুলোও কতদিন চলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ভারতীয় শাড়ির দখলে বাজার থাকায়,কম মূল্যে এসব শাড়ি পাওয়ায় জামদানি, বেনারসির দিকে মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।আর তাঁতিরা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁতপল্লীর জন্য কোনো বিশেষ প্রকল্প ও তাঁতের কারিগরদের জন্য সরকারি-বেসরকারি সুযোগ, সুবিধার ব্যবস্থা করা গেলে আমাদের তাঁতশিল্পের জৌলুস ফিরবে ও তাঁতিরা লাভবান হবে।সুতা,রং সহ তাঁতশিল্পের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির দাম কমানো গেলে তাঁতশিল্প বেঁচে যাবে,সেসাথে বাঁচবে তাঁতশিল্পীদের প্রাণ, আর আমরা হারাবো না আমাদের ঐতিহ্য।
References:
1.Wekeapedia
2. tbsnews.net
3. bn.observerbd.com
4. Prothom Alo
Written by
Jahid Hasan Shovon
Department of Textile Engineering (10th Batch)
National Institute of Textile Engineering & Research