Monday, November 18, 2024
Magazine
More
    HomeTechnical Textileনকশি কাঁথা….!!

    নকশি কাঁথা….!!

    নকশি কাঁথা হলো সাধারণ কাঁথার উপর নানা ধরনের নকশা করে বানানো বিশেষ প্রকারের কাঁথা।

    সূচিশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন নকশিকাঁথা। সাধারণ কাঁথার উপর বিভিন্ন ধরনের রঙিন সুতা দিয়ে নকশা তুলে যে বিশেষ ধরনের কাঁথা বানানো হয়, তাই নকশিকাঁথা। সাধারণত শাড়ি বা পুরাতন কাপড়ের পাড় থেকে রঙিন সুতা তুলে এই কাঁথা সেলাই করা হতো। রঙিন সুতা বাজারে সহজলভ্য হয়ে যাবার কারণে পরবর্তীতে পাড়ের সুতা ছাড়াও সেইসব রঙিন সুতা দিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করা শুরু হয়।
    নকশিকাঁথা হলো সুতি কাপড়ের উপর কারুকাজ করা এক ধরনের কাঁথা। সাধারণত গ্রামের মহিলারা তাদের অবসর সময়ে এমন কাঁথা বানান। একজন নকশিকাঁথা কারিগর এক একটি কাঁথা বানাতে প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত কাজ করেন। দল বেঁধে কাজ করার ক্ষেত্রে ১৫ – ২০ দিন লাগে।একটি নকশি কাথা থেকে
    সম্ভাব্য আয়: ৳১০০০ – ৳৫,০০০/নকশিকাঁথা

    একজন নকশিকাঁথা কারিগর কোথায় কাজ করেন?
    নকশিকাঁথা যারা বানিয়ে থাকেন, তারা সাধারণত আত্মকর্মসংস্থানের উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজ শুরু করেন। এর জন্য অনেক সময় গ্রামের মহিলারা সংগঠিত হন।

    একজন নকশিকাঁথা কারিগর কী ধরনের কাজ করেন?
    কাপড় (যেমন: শাড়ি, লুঙ্গি) সংগ্রহ করা;
    স্তর করা কাপড়ের উপর প্রাথমিক নকশা এঁকে নেয়া;
    সুঁই-সুতা দিয়ে কাপড়ে নকশা তোলা।
    শখের বশে নকশিকাঁথা তৈরির ক্ষেত্রে পুরানো কাপড় ব্যবহার করা হলেও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বানানো কাঁথায় নতুন কাপড় ব্যবহার করেন কারিগররা।

    একজন নকশিকাঁথা কারিগরের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
    নকশিকাঁথা কারিগর হবার জন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স আর অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই।

    একজন নকশিকাঁথা কারিগরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
    সেলাই করার দক্ষতা;
    নকশা সম্পর্কিত ধারণা;
    ধৈর্য।
    নকশিকাঁথা বানানোর কাজ কোথায় শেখা যায়?
    গ্রামাঞ্চলে সাধারণত মহিলারা একজন আরেকজনের কাছ থেকে নকশিকাঁথা বানানোর কাজ শিখে নেন। কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলো প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে।

    বর্তমানে বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নকশী কাঁথা….!!!

    বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নকশী কাঁথা
    গ্রামীণ ঐত্যিহের অবিচ্ছেদ্য অংশ নকশী কাঁথা। কেবল সুঁই আর সুতোর কারুকাজ নয়, এ যেন চিরন্তন বাঙালির ভালোবাসার গল্প। সুচের ফোঁড়ে আর বাহারি রঙের সুতোয় বিভিন্ন নকশা স্থান করে নেয় নকশী কাঁথায়। গ্রামীণ নারীরা মনের মাধুরি মিশিয়ে তৈরি করেন এসব কাঁথা। যেখানে নতুন আর পুরনো কাপড়ে তৈরি এসব কাঁথায় সুচের ফোঁড়ে ভালোবাসা মিশে আছে। তবে কালের বিবর্তনে নকশী কাঁথা এখন অনেকটা বিলীনের পথে। সময় ও পরিশ্রম বেশি হওয়ায় এবং মজুরি কম পাওয়ায় নকশী কাঁথা তৈরিতে গ্রামের নারীরা অনেকটাই বিমুখ হচ্ছেন।

    নকশী কাঁথা এক প্রকার শিল্প। এক সময় নকশি কাঁথা প্রায় ঘরে ঘরে তৈরি করা হতো। গ্রামে খাওয়ার পর ক্লান্ত দুপুরে ঘরের সব কাজ সেরে নারীরা ঘরের মেঝে, বারান্দা বা গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে বসত নকশী কাঁথা নিয়ে। এক একটি নকশী কাঁথা তৈরি করতে কখনো কখনো প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। সুঁইয়ের প্রতিটি ফোঁড়ে তৈরি করে এক একটি না বলা কথা। কতশত ইতিহাস আর গল্প।

    নকশী কাঁথা সাধারণত দুই পাটের অথবা তিন পাটের হয়ে থাকে। চার-পাঁচ পাটের কাঁথা শীত নিবারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাতে কোনো কারুকার্য থাকে না। কিন্তু নকশী কাঁথায় বিভিন্ন নকশা থাকে। যেখানে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদ প্রভৃতি রঙের সুতো দিয়ে সুচের ফোঁড়ে নকশা করা হয়ে থাকে। অঞ্চলভেদে যেমন নকশী কাঁথা, বাঁশপাতা ফোঁড়, বরকা ফোঁড়, কইতা, তেজবি ফোঁড় ও বিছা ফোঁড় ইত্যাদি নামে পরিচিত।

    ৪ বাই ৫ ফুট আকারের কাঁথা ১ হাজার ৫০০ টাকা, সাড়ে তিন বাই ৫ ফুট আকারের কাঁথায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তবে যে মজুরি পাওয়া যায় তা যথেষ্ট না। আর এ থেকে যে বাড়তি আয় হয় তা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে ব্যয় করে থাকেন এর কারিগরা।

    নিশাত শ্যামা সুপ্তি

    ডিপার্টমেন্টে অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং(দশম ব্যাচ)

    ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ।

    RELATED ARTICLES

    1 COMMENT

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed