নারকেল ফাইবার একটি প্রাকৃতিক ফাইবার যা নারকেলের বাইরের অংশ থেকে নেওয়া হয় । এটি এক ধরনের বাষ্ট ফাইবার। নারিকেলের শেল এর বাইরের অংশ দ্বারা যে ফাইবার তৈরি করা হয় তাকে নারকেল ফাইবার বলে। যদিও নারকেল ফাইবার বীজ হতে তৈরী তবুও এটি নারকেল এর ছাল দ্বারা তৈরি হয় বলে এটিকে বাস্ট ফাইবার বলা হয় । নারকেলের ছোবড়া সাধারণত কর্কশ হয়ে থাকে। আশের কর্কশভাব দূর করার জন্য আঁশকে পানিতে ভিজানো হয়। সাধারণত লবন পানি আঁশের কর্কশভাব দূর করার জন্য সব থেকে ভালো উপায়। আঁশকে ভিজিয়ে ইহার মধ্যে একটি ব্যাকটেরিয়াল ক্রিয়া সৃষ্টি করে আঁশ নরম করে পাকানোর উপযোগী করা হয় ।
ইতিহাসঃ
নারকেল ফাইবারে আরেকনাম কয়ার ফাইবার । কয়ার শব্দটি কায়ার শব্দ থেকে এসেছে। কায়ার শব্দটি দ্রাবিড়ীয় শব্দ যার অর্থ হলো দড়ি । এই শব্দটি ভারতের মালায়ালাম এবং তামিল ভাষাভাষী লোকজন ব্যবহার করতো । প্রাচীনকাল থেকেই দড়ি এবং কর্ডেজ নারকেল ফাইবার থেকে তৈরি করা হতো । বহু শতাব্দী আগে মালায়া, জাভা, চীন এবং আরব উপসাগরে সমুদ্র যাত্রা করা ভারতীয় নৌচালকরা তাদের জাহাজের দড়ির জন্য কয়ার ব্যবহার করতেন। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর আরব লেখকরা জাহাজের দড়ি এবং জাহাজের পালের জন্য কয়ারের বিস্তৃত ব্যবহারকে উল্লেখ করেছেন । ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের আগে যুক্তরাজ্যের একটি কয়ার শিল্প রেকর্ড করা হয়েছিল। ১৮৪০ এর সময় ক্যাপ্টেন লোগান এবং মিঃ থমাস ট্রেলোয়ারে এর সহযোগিতায় ক্যাপ্টেন ওয়াইডলি ইংল্যান্ডের লুডগেট হিলে ট্রেলোয়ার অ্যান্ড সন্স নামে পরিচিত কার্পেট ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা মূলত মেঝের বিভিন্ন কার্পেটের কাপড় তৈরি করার জন্য ।
নারকেল ফাইবারের মূলত দুইটি প্রকারভেদ দেখতে পাওয়া যায়ঃ
১)ব্রাউন ফাইবারঃ ব্রাউন ফাইবারসমূহ পরিপক্ক নারকেল থেকে বের করা হয়। ব্রাউন ফাইবারগুলি ঘন, শক্তিশালী এবং উচ্চ ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে ।
২)হোয়াইট ফাইবারঃ হোয়াইট ফাইবারসমূহ অপরিণত নারকেল থেকে বের করা হয় । সাদা তন্তুগুলি মসৃণ এবং সূক্ষ্ম তবে কিছুটা দুর্বল ।
উৎপাদন প্রক্রিয়াঃ
ফাইবার সংগ্রহঃ
নারকেলের বিভিন্ন স্তর থেকে দুই প্রকারের কয়ার উত্তোলন করা হয়, প্রায় একমাস ধরে না কাটা নারকেলকে রোদে শুকানোর জন্য দেওয়া হয়। পুরোপুরি পাকা নারকেল গাছ থেকে আনা মাত্র তুষ দিয়ে ফেলা হয় তারপরে ফলটি বীজ থেকে আলাদা করা হয়।
ফাইবার রিটিংঃ
এই পর্যায়ে কয়ার ফাইবারগুলি কুঁচি থেকে আলাদা হয়ে যায় যা অবশিষ্টাংশের পিছনে ফেলে দেয় যা কয়ার পিথ নামে পরিচিত। লবণের পানিতে ঝাঁকুনি ব্যবহার না করা নারকেল কুঁচির জন্য এবং পাকা নারকেলের ভুসের জন্য টাটকা জল ব্যবহার করা হয়। নুনের জলের রিটিংয়ের জন্য অপরিশোধিত সবুজ কুঁচি লোনা জলে ভিজিয়ে রাখতে হয় । সাধারণত সেগুলোকে সমুদ্রের কাছাকাছি গর্তে ভিজানো হয়। এই পদ্ধতিটি প্রায় ৮-১০ মাস সময় নেয়। জীবাণুগুলি জলে কৃত্রিমভাবে যুক্ত করা হয়, তবে এই পদ্ধতিটিতে বেশি সময় লাগে না।
ডিফাইবারিং প্রক্রিয়াঃ
ডিফিবারিং ম্যানুয়ালি এবং যান্ত্রিক উভয়ভাবেই করা হয়। ম্যানুয়াল প্রক্রিয়াতে রিটযুক্ত কুঁচিগুলিকে কাঠের হাতুড়ি দিয়ে পিটানো হয় যা ফাইবারকে অবশিষ্টাংশ থেকে পৃথক করে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রিটেড ভুসিগুলিকে বিটার সহ স্টিলের ড্রামে রাখা হয় এবং এই মেশিন মোটরের সাহায্যে কাজ করে। ইস্পাত স্পাইক সহ ঘোরানো ড্রামগুলি তন্তুগুলি পৃথক করে ফেলে । তারপর ফাইবারসমূহ রোদে শুকানো হয় ।
ফিনিশিংঃ
ব্রিসটল এবং গদি ফাইবারসমূহ জলবাহী প্রেস দ্বারা সংকুচিত হয়। গদি ফাইবার এর ক্ষেত্রে কম্বিং করার প্রয়োজন হয় এবং আলগাভাবে আবদ্ধ সুতাগুলিকে একটি বান্ডেলে সংরক্ষণ করা হয় কিন্তু ব্রিসটল ফাইবারগুলিতে কম্বিং করার প্রয়োজন হয় না।
তারপর সুতার এই বান্ডেলসমূহ প্রস্তুতকারকের দ্বারা পছন্দসই পণ্য অনুযায়ী কাটা হয় ।
বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
দৈর্ঘ্য ৬-৮ ইঞ্চি ।
ব্যাস ০.১-১.৫ মিমি ।
ঘনত্ব ১.৪০ গ্রাম/সিসি ।
টেনাসিটি ১০ গ্রাম/টেক্স ।
রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ
লিগনিন ৪৫.৮৪%
সেলুলোজ ৪৩.৪৪%
হেমি সেলুলোজ ০.২৫%
পেকটিন ৩%
দ্রবণীয় পানি ৫.২৫%
অ্যাশ ২.২২%
ব্যাবহারঃ
১) হোয়াইট ফাইবারসমূহ দড়ি উৎপাদনে ব্যাবহৃত হয় ।
২) ব্রাউন ফাইবারসমূহ কার্পেট তৈরীতে ব্যাবহৃত হয় ।
৩) অটোমোবাইল তৈরীতে ব্যাবহৃত হয় ।
৪) নারকেল ফাইবার দিয়ে ইট তৈরী করা হয় ।
৫) ব্রাশ তৈরীতে ব্যাবহৃত হয় ।
৬) বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনা তৈরীতে ব্যাবহার করা হয় ।
৭) বিভিন্ন প্রসাধনী সমগ্রী তৈরীতেও ব্যাবহৃত হয় ।
৮) বাসাবাড়ির সাজসজ্জার বস্তু তৈরীতেও ব্যাবহার করা হয় ।
৯) সোফা তৈরীতেও নারকেল ফাইবার ব্যাবহার করা হয় ।
Writer:
Tanjidur Rahman Sakib
Department of Apparel Engineering
Sheikh Kamal Textile Engineering College